ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

আজ বিকেলে মালিক-শ্রমিক বৈঠকের সম্ভাবনা ;###;প্রশিক্ষিত চালক ছাড়াই সীমিত পরিসরে নৌযান চালানোর অভিযোগ;###;মানুষকে জিম্মি করা অনুচিত ॥ মন্ত্রী শাজাহান খান

যাত্রী ভোগান্তি চরমে ॥ দ্বিতীয় দিনেও নৌ ধর্মঘটের জট খোলেনি

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৩ এপ্রিল ২০১৬

যাত্রী ভোগান্তি চরমে ॥ দ্বিতীয় দিনেও  নৌ ধর্মঘটের জট খোলেনি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মালিকদের উদ্যোগে সীমিত পরিসরে দেশের বিভিন্ন রুটে লঞ্চ চলাচল শুরু হয়েছে। তবে প্রশিক্ষিত চালক ছাড়াই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জোর করে এসব নৌযান চালানোর অভিযোগ করেছে শ্রমিকরা। তবে স্বাভাবিক চলাচল বিঘিœত হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তি দ্বিতীয় দিনেও চরমে পৌঁছেছে। আজ শনিবার বিকেল চারটায় শ্রম পরিদফতরে মালিক-শ্রমিকদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বেতন বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে সারাদেশের নৌযান শ্রমিকরা ধর্মঘট পালন করছে। এদিকে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে দেখা যায়, চট্টগ্রাম এবং মংলা বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বরিশাল থেকে সারা দিনে মাত্র একটি লঞ্চ ছেড়েছে। কার্গো এবং বার্জে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকায় খুলনা এবং যশোরে শত শত ট্রাক পণ্য নেয়ার জন্য অপেক্ষায় রয়েছে। আশুগঞ্জসহ দেশের প্রধান নদীবন্দরে শ্রমিকরা আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে। শুক্রবার জাতীয় শ্রমিক পার্টি নৌ শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান শুক্রবার মাদারীপুরে সাংবাদিকদের বলেন, নৌপরিবহন ব্যবস্থা একটি সেবামূলক খাত। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ধর্মঘট করা অনুচিত বলে মনে করেন তিনি। তিনি বলেন, বিষয়টি মালিক এবং শ্রমিকদের নিজস্ব; সরকার এখানে কোন পক্ষ নয়। তবে দ্রুত আলোচনা করে সমাধানের চেষ্টা করা হবে বলে জানান তিনি। মালিকদের সংগঠন অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থা বলছে, শুক্রবার সকাল থেকেই বিভিন্ন রুটের লঞ্চ ঢাকা ছেড়ে গেছে। তারা দাবি করছে সকালে অন্তত ১২টি আর বিকেলে আরও ৩০ টির মতো লঞ্চ ছেড়ে যাবে। তবে প্রতিদিন সকালে যেখানে বিভিন্ন রুটের ৬০ থেকে ৭০ টি লঞ্চ সদরঘাট আসে সেখানে শুক্রবার এসেছে মাত্র ১২টি। অভ্যন্তরীণ যাত্রী পরিবহন সংস্থার সচিব সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারি শুক্রবার বিকেলে জানান, শনিবার মালিক-শ্রমিকদের একটি বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে শ্রম পরিদফতরে। সেখানে ধর্মঘট নিয়ে আলোচনা হবে। শ্রমিকরা জানান, দেশের অনেক কোম্পানি আছে যারা শ্রমিকদের ভাল বেতনভাতা দিয়ে থাকে। আবার কেউ কেউ আছেন যারা সরকার নির্ধারিত বেতনের বাইরে কোন সুবিধা দিতে চান না। শুক্রবার সকালে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া গ্রীন লাইল লঞ্চ তাদের শ্রমিকদের সর্বনিম্ন ১২ হাজার টাকা বেতন দেন। সঙ্গত কারণে প্রথমে তারা ধর্মঘটে একাত্মতা প্রকাশ করলেও পরে সরে যায়। শ্রমিকরা অভিযোগ করেন, এর থেকে পাঁচগুণ বেশি যাত্রী পরিবহন করে প্রথম শ্রেণীর সেসব নৌযানও শ্রমিকদের বাড়তি কোন সুবিধা দিতে চায় না। শ্রমিকরা এখন সর্বনিম্ন চার হাজার ১০০ টাকা বেতন পান। তা দিয়ে সংসার চালানো দায়। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম শুক্রবার বিকেলে জনকণ্ঠকে বলেন, মাস্টার এবং চালক ছাড়াই কেরানি এবং সুপারভাইজারদের দিয়ে মালিকরা লঞ্চ চালানোর চেষ্টা করছে। কোন কোন নৌযান ছেড়ে গেলেও বেশিরভাগেই কোন চালক যাচ্ছে না। কালবৈশাখীর মৌসুমে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তার দায় শ্রমিকরা নেবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সকলেই জানেন আমরা জাহাজ চালাচ্ছি না। শুক্রবার সকালে সদরঘাট ছেড়ে যাওয়া ময়ূর-২ এর এক মাস্টার (চালক) জাকির হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, তিনি বা তার লঞ্চের আরেক মাস্টার কেউই লঞ্চে নেই। তারপরও লঞ্চটি সকালে ছেড়ে গেছে। কারা এই লঞ্চ নিয়ে গেল জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিকের নির্দেশে সুপারভাইজার এবং কেরানি লঞ্চ নিয়ে গেছেন। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ময়ূর-২ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ে। এদিকে শুক্রবারও সদরঘাট গিয়ে সাধারণ যাত্রীর ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। সকালে সদরঘাট থেকে পাঁচ থেকে ছয়টি লঞ্চ চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছাড়ার কথা থাকলেও সূচী অনুযায়ী দুটি লঞ্চটি ছেড়ে যায় বলে ঘাট কর্মকর্তারা জানান। আর বরিশালের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায় গ্রীন লাইন। ভোলা যাওয়ার জন্য আজিজুল ইসলাম সকালে স্ত্রীকে নিয়ে সদরঘাটে এসে বিপাকে পড়েন। তিনি বলেন, ঘাটে অনেক যাত্রী থাকলেও লঞ্চ নেই। এজন্য ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা। চাঁদপুরের মঈন আলী জানান, সকাল থেকেই তিনি সদরঘাটে অপেক্ষা করছেন কিন্তু ৫ থেকে ৬ টি লঞ্চের স্থলে মাত্র দুটি লঞ্চ এই রুটে ছেড়ে যাওয়ায় ধারণক্ষমতার বেশি যাত্রী হবে বলে তিনি আশঙ্কা করে আবার বাসায় ফিরে যান। স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল ॥ দ্বিতীয় দিনের মতো শুক্রবার অনির্দিষ্টকালের নৌযান ধর্মঘট চলছে। এদিন সকালে ঢাকা থেকে ও দুপুরে বরিশাল থেকে যাত্রীবাহী গ্রীন লাইন ছাড়া কোন নৌযান বরিশাল থেকে অন্য কোথাও ছেড়ে যায়নি। সূত্রমতে, ধর্মঘটের দ্বিতীয় দিনে শুক্রবার সকাল থেকে বরিশাল থেকে ৩০টি অভ্যন্তরীণ রুটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ কর্মসূচীর কারণে কোন লঞ্চ চলাচল না করায় ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। জরুরী প্রয়োজনে অনেক যাত্রী ছোট ছোট ট্রলার বা ¯পীডবোট ভাড়া করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। অপরদিকে সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে বরিশাল নদীবন্দর এলাকায় নৌ-পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ধর্মঘটে অংশ নেয়া শ্রমিকরা জানান, তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। তবে বৃহস্পতিবার রাতে ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে। রাতে নদীবন্দর থেকে তিনটি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ঝালকাঠি থেকে এমভি ফারহান-৭ বরিশাল ও ফতুল্লা হয়ে শুক্রবার ভোরে ঢাকায় পৌঁছেছে। এছাড়া রাতেই বরিশাল নৌবন্দর থেকে সরাসরি এমভি টিপু-৭ ও পারাবত-৯ লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। শুক্রবার রাতেও ঢাকার উদ্দেশ্যে বরিশাল থেকে দুটি এবং ঝালকাঠি ও পটুয়াখালি থেকে একটি করে লঞ্চ যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাওয়ার কথা রয়েছে। স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস॥ মহানগরীর বিআইডব্লিউটিএ, ৪, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর ঘাট এবং রুজভেল্ট জেটিতে অবস্থানরত কোন নৌযান থেকে পণ্য খালাস করা হয়নি। এ ছাড়া খুলনা লঞ্চঘাট থেকে কোন লঞ্চ ছেড়ে যায়নি বা আসেনি। মংলা বন্দর থেকে যশোরের নওয়াপাড়া পর্যন্ত নৌযান চলাচলও বন্ধ ছিল। ফলে খুলনাঞ্চলের বিভিন্ন ঘাটে ছোট-বড় অসংখ্য নৌযান নোঙ্গর ফেলে অপেক্ষায় রয়েছে পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য। এদিকে নৌযান ধর্মঘটের কারণে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন খুলনা, নওয়াপাড়া ও মংলা বন্দরের আমদানি-রফতানিকারকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। জানা গেছে, খুলনা ও যশোরের নওয়াপাড়া এলাকার কার্গো বার্জ থেকে পণ্য নেয়ার জন্য শত শত ট্রাক দাঁড়িয়ে থাকলেও নৌযান শ্রমিকরা কাজ না করায় শিল্পনগরী খুলনা ও মংলা বন্দরে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। ধর্মঘটের ফলে মাদার ভ্যাসেল থেকে পণ্য বন্দরের জেটিতে আনা-নেয়া এবং বন্দর থেকে নদীপথে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পরিবহন কাজ বন্ধ রয়েছে। যশোরের নওয়াপাড়া থেকে খুলনার শিপইয়ার্ড পর্যন্ত নদীতে এবং মংলা বন্দর এলাকায় অসংখ্য নৌযান নোঙ্গর ফেলে অবস্থান করছে পণ্য বোঝাই ও খালাসের জন্য। স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পণ্য নিয়ে আসা প্রায় দু’শতাধিক কার্গো জাহাজ আশুগঞ্জ নৌবন্দরে আটকা পড়েছে। বন্ধ হয়ে গেছে আশুগঞ্জের সঙ্গে দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ৬টি নৌরুটের ৫ জেলা সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৪ উপজেলার লঞ্চ যোগাযোগ। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে লঞ্চযাত্রীদের। বন্ধ হয়ে গেছে নদীবন্দরের সকল প্রকার কার্যক্রম। বেকার হয়ে পড়েছে বন্দরের শ্রমিকরা। পূবাঞ্চলীয় কার্গো মালিক সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ নাজমুল হোসাইন হামদু জানান, ধর্মঘটের কারণে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত জরুরী কাঁচামাল নিয়ে জাহাজ আটকা পড়ায় মাল পরিবহনে ব্যাহত হচ্ছে। এ মুহূর্তে জাহাজ বন্ধ থাকলে আমরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হব। জাতীয় শ্রমিক পার্টি ॥ অবিলম্বে নৌযান শ্রমিকদের দাবি মেনে নেয়ার জন্য সরকার এবং লঞ্চ মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় শ্রমিক পার্টি। শুক্রবার জাপা কাকরাইল কার্যালয়ে পহেলা মে শ্রমিক সমাবেশ সফল করার লক্ষ্যে শ্রমিক পার্টি ঢাকা মহানগর আয়োজিত এক যৌথসভায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দ এ আহ্বান জানান। সভায় শ্রমিক পার্টির সভাপতি একেএম আসরাফফুজ্জামান খান, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর হোসেন, আব্দুল আজিজ, শেখ মোঃ শান্ত, তালুকদার মিজান, আব্বাস আলী ম-ল, আলমগীর হোসেন, শহীদুল আলম প্রমুখ।
×