ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটে ভেঙ্গে পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২২ এপ্রিল ২০১৬

নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটে ভেঙ্গে পড়েছে পরিবহন ব্যবস্থা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সারাদেশে নৌযান শ্রমিকদের লাগাতার ধর্মঘটে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। রাজধানী ছাড়তে সব থেকে বেশি বিপাকে পড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। দেশের দুই সমুদ্র বন্দরের পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। বুধবার রাত বারোটা থেকে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ জাহাজী শ্রমিক ফেডারেশন। তবে যাত্রী চলাচলের সুবিধার্থে বৃহস্পতিবার সদরঘাট থেকে একটির জায়গায় দুটি স্টিমার ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি)। স্টিমার দুটি চাঁদপুর, বরিশাল ও বাগেরহাটের যাত্রী পরিবহন করবে বলে বিআইডব্লিউটিসির সহকারী মহাব্যবস্থাপক শাহ বরকত উল্লাহ জানান। বিআইডব্লিউটিএর পরিবহন পরিদর্শক সৈয়দ মাহজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে সদরঘাট থেকে কোন রুটেই লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। তবে বুধবার সন্ধ্যায় দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ৪৬ লঞ্চ সকালে পন্টুনে ভিড়েছে। এদিকে বৃহস্পতিবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বুধবার সারাদিন বৈঠকে মালিকÑশ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে একমত হতে পারেনি। বৃহস্পতিবার মালিক কিংবা সরকারের পক্ষে কেউ নৌযান শ্রমিক নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম বলেন, আমরা মালিক পক্ষকে বলেছিলাম আমাদের শ্রমিকরা এখন চার হাজার ১০০ টাকা বেতন পান। আমরা চাচ্ছি বর্তমান বাজার মূল্যসহ আনুষঙ্গিক খরচ বিবেচনা করে তা ৮ হাজার ২৫০ টাকা করা হোক। কিন্তু মালিক পক্ষ আমাদের কোন কথাই শুনতে রাজি নয়। আমরা সর্বসাকল্যে সর্বনিম্ন বেতন সাত হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব জানাই। এরপর ২০০৯ সালে বৃদ্ধির হিসেবে তা আরো কমিয়ে সাত হাজার ১৫০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করি। কিন্তু মালিক পক্ষ মাত্র ৫ শতাংশ বা ১০০ টাকা বৃদ্ধি করতে চাইছে। এদিকে রাজধানী থেকে দক্ষিণাঞ্চলে কোন লঞ্চ ছেড়ে না যাওয়ায় হাজার হাজার যাত্রী সদরঘাট টার্মিনালে এসে সকালে বিপাকে পড়ে। অনেকে ধর্মঘটের খবর না জেনে সকালে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য সদরঘাট আসেন। তবে বেলা গড়িয়ে গেলেও কোন নৌযান ছেড়ে যায়নি। চট্টগ্রাম ॥ বেতন ভাতা বৃদ্ধিসহ ১৫ দফা দাবিতে বুধবার মধ্যরাত থেকে ধর্মঘট শুরু করেছে নৌযান শ্রমিকরা। বাংলাদেশ নৌযান ফেডারেশনের ডাকে শুরু হওয়া এ ধর্মঘটে এক প্রকার অচল হয়ে পড়েছে কর্ণফুলী নদীর ১৬ ঘাট। লাইটার জাহাজের শ্রমিকরা ধর্মঘটে থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে ঘাটগুলোর পণ্য ওঠানামা। তবে ঘাটে পণ্য খালাস ও অভ্যন্তরীণ জলপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ থাকলেও বন্দর জেটিতে কার্যক্রম স্বাভাবিক রয়েছে। বরিশাল ॥ বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটের সকল প্রকার যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছেন দক্ষিণের যাত্রীরা। মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে যাত্রী বিড়ম্বনা চরম আকার ধারণ করেছে। আকস্মিক এই ধর্মঘটে অনেক যাত্রী লঞ্চঘাট এসেও ফিরে যাচ্ছে। তাদের কষ্টের যেন সীমা নেই। দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব লঞ্চই বন্ধ রয়েছে। তবে নারায়ণগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ এবং শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি রুটে ছোট আকারের লঞ্চ চলাচল করেছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া ॥ আশুগঞ্জে নৌযান শ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি চলছে। এতে বন্দরে আটকা পড়েছে প্রায় অর্ধশত মালবাহী কার্গো জাহাজ। মালামাল খালাস করতে না পারায় ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ বেড়েছে। দেশের পূর্বাঞ্চলীয় ছয়টি নৌরুটের ৫ জেলা সিলেট, কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ১৪ উপজেলার লঞ্চ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বাগেরহাট ॥ মংলা বন্দরসহ সারাদেশে নৌযোগাযোগ ও পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম বলেন, ধর্মঘটের আওতায় সারাদেশে যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী সব ধরনের নৌযান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ রয়েছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে। ভোলা ॥ বৃহস্পতিবার সকাল হতে দ্বীপজেলা ভোলার সঙ্গে ঢাকা বরিশালসহ দেশের সকল রুটের লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
×