ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

প্রভাব খাটিয়ে ইউনূসকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেন হিলারি

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২০ এপ্রিল ২০১৬

প্রভাব খাটিয়ে ইউনূসকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেন হিলারি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাজে ঋণ ও অনুদান হিসেবে সরকারী তহবিল থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার অর্থ সহায়তা দিয়েছিলেন সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ডেমোক্র্যাটিক দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিলারি ক্লিনটন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় প্রভাব খাটিয়ে হিলারি ক্লিনটনের এ অর্থ সহায়তা দেয়ার তথ্যটি প্রকাশ পায় গত বছর হিলারির ফাঁস হওয়া ইমেল কেলেঙ্কারি থেকে। হিলারির প্রতিদ্বন্দ্বী দল রিপাবলিকান পার্টি সমর্থিত ওয়াশিংটনভিত্তিক পত্রিকা দি ডেইল কলার সোমবার এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, ড. মুহাম্মদ ইউনূস গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হারানোর পর তার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ইউএসএআইডিসহ ১৮টি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অনুদান, ঋণ ও অন্যান্য কাজের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সরকারী তহবিল থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ ডলার পাইয়ে দেন হিলারি। গ্রামীণ ব্যাংক ইস্যুতে ওই সময় আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের তুমুল তিক্ততা তৈরি হয়। সরকার বয়স পেরিয়ে যাওয়ার কারণ দেখিয়ে ২০১১ সালে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দেয়ার পর হিলারি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান। মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছিলেন, ড. ইউনূসের বিষয়ে মার্কিন উদ্বেগের কথা বাংলাদেশ সরকারকে জানানো হয়েছে। তিনি আশাপ্রকাশ করেন, গ্রামীণ ব্যাংক আগের মতোই দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ অব্যাহত রাখবে। হিলারি ক্লিনটনের ব্যক্তিগত সার্ভার থেকে তার ফাঁস হওয়া ইমেল থেকেও ড. ইউনূসের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন তদন্ত ও পদক্ষেপের বিষয়ে ক্লিনটন দম্পতির নজর রাখার তথ্য ছিল। কলারের প্রতিবেদনে ইউনূসকে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, ফাউন্ডেশনকে ১ থেকে ৩ লাখ ডলার দান করেন ইউনূস। ফাউন্ডেশনের অন্যতম দাতা ইউনূসকে রাষ্ট্রীয় অর্থ জোগানোর মধ্য দিয়ে হিলারি স্বার্থের সংঘাত ঘটিয়েছেন। হিলারি ক্লিনটন সরকারী কাজের সঙ্গে ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের দাতাদের মিলিয়ে ফেলেছেন। ক্লিনটন ফাউন্ডেশনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছেন ড. ইউনূস। ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে তাকে ৩৭টি স্থানে তুলে ধরার কথা উল্লেখ আছে। ২০০৯ সালে হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার সময় ড. ইউনূসকে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মানে ভূষিত করা হয়। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ব্যক্তিগতভাবে নানান তদবির করে ২০০৬ সালে ড. ইউনূসকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দিতে কমিটির ওপর চাপ দেন। তিন দশক ধরে ক্লিনটন দম্পতি ড. ইউনূসের জন্য বড় সহায়ক হিসেবে কাজ করেছেন। বিভিন্ন উচ্চপর্যায়ে ড. ইউনূসকে তারা পরিচয় করিয়ে দিতেন। ডেইলি কলার জানিয়েছে, ইউএসএআইডি থেকে আরও ১ কোটি ১০ লাখ ডলার ১১টি প্রতিষ্ঠান পেয়েছিল। আর ওই সবগুলো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ইউনূসের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রয়েছে। হিলারির প্রভাবে ১৮টি অনুদান ও ঋণ ইউনূস সংশ্লিষ্ট গ্রামীণ ফাউন্ডেশন ও গ্রামীণ আমেরিকাকে দেয়া হয়েছিল। ডিপার্টমেন্ট অব ট্রেজারি ৬ লাখ ডলার গ্রামীণ আমেরিকাকে তহবিল হিসেবে দিয়েছিল। ‘স্মল বিজনেস এ্যাডমিনস্টেশন’ ২০১১ সাল থেকে গ্রামীণ আমেরিকাকে ৯ লাখের বেশি ডলার অনুদান দিয়েছে। যে রাজ্যে হিলারি সিনেটর সেই নিউইয়র্কে প্রতিষ্ঠান চালাতে ও কর্মীদের বেতন দিতে এই অনুদান ব্যবহার হয়। প্রতিবেদনে ঘটনাটি নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্ত করা উচিত ছিল উল্লেখ করে বলা হয়, এই ধরনের আচরণ উন্নত দেশগুলোর জন্য নিন্দাজনক। সরকারী অর্থের এ ধরনের অপব্যয় নিয়ে এফবিআইয়ের তদন্তের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আসেনি। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, এ অভিযোগ বিষয়ে গ্রামীণ ফাউন্ডেশন, ক্লিনটন ফাউন্ডেশন ও এফবিআইয়ের প্রতিক্রিয়া চেয়েও পাওয়া যায়নি।
×