ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৬ এপ্রিল ২০১৬

বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই ॥  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

গাফফার খান চৌধুরী ॥ বাংলাদেশে ইরাক ও সিরিয়াভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের (ইসলামিক স্টেট) কোন অস্তিত্ব নেই; তবে অনুসারী রয়েছে। ইতোপূর্বে যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদের অধিকাংশই নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবি ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য। তারাই নৃশংস হত্যাসহ নানা অপতৎপরতা চালিয়ে আইএসের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করেছিল। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে অনেক দিন ধরেই বারবারই এমনটা দাবি করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে বিভিন্ন দেশের তরফ থেকে বাংলাদেশে আইএস থাকার অভিযোগ আনা হচ্ছে। এমন অভিযোগের পেছনে বিশেষ উদ্দেশ্য থাকার বিষয়টি দিবালোকের মতো স্পষ্ট। আইএসের কথিত প্রধানের সাক্ষাতকার প্রকাশের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও এমনটাই দাবি করে বলেছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। শুক্রবার নিজ বাসায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গীগোষ্ঠী আইএসের কথিত প্রধানের সাক্ষাতকার একটি পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। বাংলাদেশে ঘাঁটি বানিয়ে প্রতিবেশীদের কোন দেশে আক্রমণের সুযোগও কাউকে দেয়া হবে না। এটি একটি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের বহির্প্রকাশ। প্রসঙ্গত, আইএসের সাময়িকী হিসেবে পরিচিত ‘দাবিক’-এ গত ১৩ এপ্রিল জঙ্গীগোষ্ঠীটির বাংলাদেশ শাখার কথিত প্রধান শেখ আবু ইব্রাহিম আল-হানিফের এক সাক্ষাতকার প্রকাশিত হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, ভূ-অবস্থানগত কারণে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশকেই ঘাঁটি বানানোর জন্য তাদের পছন্দ। ওই ঘাঁটি থেকেই তারা ভারতে হামলা চালাতে চায়। যুদ্ধাপরাধের বিচার ও শীর্ষনেতাদের ফাঁসিতে চাপের মুখে থাকা জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল পর্যায়ের কর্মীরা এখন আইএসে যোগ দিচ্ছেন। জামায়াতে ইসলামীর তরফ থেকে দলটির কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আযাদ ১৫ এপ্রিল এক বিবৃতিতে বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তৃণমূল পর্যায়ের কোন কর্মীই আইএসে যোগদান করেনি। প্রকাশিত সাক্ষাতকারে জামায়াত সর্ম্পকে দেয়া বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও বানোয়াট। জামায়াতে ইসলাম গণতান্ত্রিকপন্থায় রাজনীতিতে বিশ্বাস করে। কাজেই জামায়াত কর্মীদের আইএসে যোগ দেয়ার প্রশ্নই আসে না। উল্লেখ্য, খেলাফত প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি নিয়ে আইএসের জন্ম। মধ্যপ্রাচ্যের ইরাক ও সিরিয়ায় রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সুযোগে দেশ দুটির কিছু অংশ দখল করে উগ্রপন্থী এ সংগঠনটি আলোচনায় আসে। মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে ইউরোপের ফ্রান্স, বেলজিয়াম, লন্ডনে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালায় আইএস। সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে মধ্যপ্রাচ্য ছাড়িয়ে তাদের স্বপ্নের ইসলামী রাষ্ট্রের আওতায় বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমারসহ দূর প্রাচ্যের দেশগুলোকে আনার ঘোষণা দিয়েছে। কল্পনার বিশাল সাম্রাজ্যকে খেলাফত হিসেবে অভিহিত করেছে আইএস। বাংলাদেশে গত বছরের ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আইএসের কথিক সমন্বয়ক সাখাওয়াতুল কবির (৩৫) ও ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম (৪০) এবং তাদের দুই সহযোগী আনোয়ার হোসেন বাতেন (৩২) ও রবিউল ইসলাম (৩৫) ডিবির হাতে গ্রেফতারের পর আইএস ব্যাপক আলোচনায় আসে। গ্রেফতারকৃতরা নিজেদের আইএসের অনুসারী বলে দাবি করে। তাদের মধ্যে সাখাওয়াতুল কবির ও নজরুল ইসলাম আইএসের বাংলাদেশের সমন্বয়ক বলে দাবি করেন। এমন দাবির প্রেক্ষিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম হয় আইএস নিয়ে। পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে মেলে আসল তথ্য। গ্রেফতারকৃত সাখাওয়াতুল কবির জেএমবির কারাবন্দী আমির মুফতি মাওলানা সাইদুর রহমান জাফরের মেয়ের জামাই। তারই ভায়রা সাইদুর রহমানের আরেক মেয়ের জামাই ইজাজ ওরফে কারগিল। তারা মূলত জেএমবি সদস্য। ২০০৯ সালে সাখাওয়াতুল কবির ইজাজের মাধ্যমে পাকিস্তানে যান। সেখানে আল কায়েদার সঙ্গে যোগ দেন। পরিবর্তীতে মতাদর্শগত পার্থক্যের কারণে সাখাওয়াতুল কবির আইএসে যোগ দেন। ২০১৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পাখতুনখাওয়া প্রদেশের পেশোয়ারের সেনাবাহিনী পরিচালিত আর্মি পাবলিক স্কুলে ৬ জঙ্গী সশস্ত্র বোমা হামলা ও গুলি চালায়। এতে ১৪২ জন ক্ষুদে শিক্ষার্থী ও ৮ জন শিক্ষক নিহত হন। এক শিক্ষককে শিক্ষার্থীদের সামনে গায়ে আগুন দিয়ে জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ দৃশ্য দেখতে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করে জঙ্গীরা। ওই শিক্ষক মারা যাওয়ার পর ক্লাসে থাকা প্রত্যক্ষদর্শী শিক্ষার্থীদের ব্রাশফায়ারে হত্যা করা হয়। এমন নৃশংস হত্যাযজ্ঞের পর পাকিস্তানে চালানো সাঁড়াশি অভিযানে গত বছরের ৮ জানুয়ারি সে দেশটির ওয়াজিরস্তানে একটি জঙ্গী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে বাংলাদেশের চার জেএমবি সদস্যসহ বহু জঙ্গী নিহত হয়। নিহত চার বাংলাদেশী জঙ্গীর মধ্যে রয়েছেÑ গ্রেফতারকৃত জেএমবি আমির সাইদুর রহমানের মেয়ের জামাই ও সাখাওয়াতুল কবিরের ভায়রা সাজ্জাত ওরফে ইজাজ ওরফে কারগিল, সাখাওয়াতুল কবিরের ভাগ্নিজামাই অভি, ডিবির হাতে গ্রেফতারকৃত জেএমবির প্রশিক্ষিত সদস্য আইটি বিশেষজ্ঞ বাতেনের বোন জেএমবির মহিলা শাখার সদস্য পাকিস্তানে অবস্থিত ফাতেমার স্বামী জেএমবি সদস্য সায়েম ও সায়েমের দুলাভাই জেএমবির সক্রিয় সদস্য শামীম। নিহত ইজাজই বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। তিনি পাকিস্তান থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের প্রায় সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। এমনকি পাকিস্তান থেকে ব্লগারসহ অন্যদের হত্যার তালিকা পর্যন্ত সরবরাহ করা হতো।
×