ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ইসিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ

প্রকাশিত: ০৪:৪৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৬

ইসিকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা এড়াতে নির্বাচন কমিশনকে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে। বুধবার ইসির সঙ্গে বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকে এ পরামর্শ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে ইসি পক্ষ থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ প্রস্তাব আগেই নাকচ করে দিয়েছে। তারা জানিয়েছে ইউপি নির্বাচন নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ মুহূর্তে বৈঠকের কোন সম্ভাবনা নেই। যেহেতু দুই ধাপে নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এ মুহূর্তে সহিংসতা এড়াতে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসার প্রস্তাবটি নাকচ করে দেয়া হয়েছে। যদিও দু’ধাপের নির্বাচন শেষে ইসির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার আহ্বান জানিয়ে বলা হয় নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য রাজনৈতিক দল ও তাদের কর্মী, প্রার্থী, প্রার্থীর এজেন্ট সকলেরই দায়িত্ব রয়েছে। নির্বাচন কমিশন প্রতিনিয়ত উচ্চমানের নির্বাচন করার জন্য সচেষ্ট হয়েছে। এ লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। কমিশন আশা করে সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতায় পরবর্তী পর্যায়ের আরও অধিকতর গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে সক্ষম হবে। তবে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে ইসি সচিব সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে ইউপি নির্বাচনের পরিস্থিতি পর্যালোচনায় পুনরায় বসলেও রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করা কোন সম্ভাবনা নেই। ইতোমধ্যে দুই ধাপের ভোট হয়ে গেছে। এ পর্যায়ে দলের সঙ্গে বসার কোন পরিকল্পনা নেই আমাদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন একটি ঝামেলাপূর্ণ নির্বাচন। এ নির্বাচনে অতীতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। তবে ইসির পক্ষ থেকে সহিংসতারোধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ধাপে ধাপে ইউপি নির্বাচন করা হচ্ছে। দুই ধাপের ভোটের অভিজ্ঞতা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আবারও বৈঠক হয়েছে। আগামী দফায় নির্বাচনে আরও কীভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভোট করা যায় সে বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। সহিংসতারোধে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন উল্লেখ করেন। ইউপি নির্বাচন উপলক্ষে বুধবার পুনরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনার। সকাল সাড়ে ১১টায় কমিশন সচিবালয়ের সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ। বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, বিজিবি, র‌্যাব, আনসার-ভিডিপি ও কোস্টগার্ডের মহাপরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া ইসির পক্ষ থেকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও অপর চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিবসহ কমিশনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন সাংবাদিকদের আরও বলেন, দুই ধাপের নির্বাচনের অভিজ্ঞতার আলোকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে সার্বিক দিক পর্যালোচনা করা হয়েছে। পরবর্তী নির্বাচনগুলোতে যাতে সহিংসতা না হয় সেই বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে নির্বাচন চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে হতাহতের ঘটনা ঘটলে সে বিষয়ে তদন্ত হয়। ইসির পক্ষ থেকে সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচনে সহিংসতা দুই কারণে হয়। দলীয় কোন্দলের জেরে ও নির্বাচন নিয়ে হয়ে থাকে। জানমাল রক্ষা ও সরকারী কাজে বাধা দেয়ার ঘটনা প্রতিহতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গোলাগুলি করেছে। এসবেরও তদন্ত হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গুলিতে প্রাণহানি ছাড়া অন্যান্য সহিংসতার বিষয়ে আদালতে নিষ্পত্তি হবে বলে জানান তিনি। নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়াকে স্বাভাবিক উল্লেখ করেন এ সময়। বলেন, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়াটা নজিরবিহীন নয়। সব সময় বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছে। কোথাও কোথাও মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়ার ঘটনায় জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে জমা দেয়ার বিধানও করা হয়েছে। পঞ্চম ও ষষ্ঠ ধাপের মনোনয়নপত্র অনলাইনে জমা নেয়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে বলে জানান তিনি। দ্বিতীয় বার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীর সঙ্গে আগেও বৈঠক হয়েছে। ইউপিতে যেহেতু অনেক বেশি নির্বাচন। একটা পর একটা নির্বাচন হবে। তাই দু’ধাপের নির্বাচনের পরিপেক্ষিতে এ বৈঠকে শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রধানদেরই ডাকা হয়েছিল। তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। কিভাবে পদক্ষেপ নিলে সহিংসতা আরও রোধ করা যায় সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে আরও কার্যকর পদক্ষে নেয়ার কথা বলা হয়েছে ভবিষতে আরও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য। উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ ও ৩১ মার্চে দফায় ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন করে ইসি। বেশিরভাগ ভাগ কেন্দ্রেই নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু হলেও কয়েকটি কেন্দ্রে সংঘর্ষের কারণে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
×