ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সঙ্কটে চালক ও মালিকরা

জ্বালানির মূল্য কমার ঘোষণায় তেল বিক্রি হ্রাস

প্রকাশিত: ০৪:০১, ১৩ এপ্রিল ২০১৬

জ্বালানির মূল্য কমার ঘোষণায় তেল বিক্রি হ্রাস

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ হঠাৎ করে যে কোন দিন আসতে পারে জ্বালানি তেলের মূল্য কমানোর ঘোষণা। আর লোকসানের ঝুঁকি এড়াতে বিপিসি থেকে তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে দেশের পেট্রোল পাম্পগুলো। এর ফলে রি-ফুয়েলিং স্টেশনগুলোতে দেখা দিয়েছে জ্বালানি সঙ্কট, ভোগান্তির মধ্যে পড়েছেন যানবাহন চালক ও মালিকরা। এদিকে আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে বাড়তে পারে গ্যাসের দাম। পেট্রোবাংলা এবং এর আওতাধীন গ্যাস বিতরণ কোম্পানিগুলো ইতোমধ্যেই সরকারের কাছে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে, যা মূল্যায়ন করছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। একদিকে তেলের মূল্যহ্রাস এবং অপরদিকে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব- এই দুই মিলে সন্তুষ্টি এবং উৎকণ্ঠা দুটোই রয়েছে ভোক্তা পর্যায়ে। জ্বালানি তেলের মূল্য কমালে কার লাভ, কার ক্ষতি তা নিয়ে রয়েছে বিশ্লেষণ ও বিতর্ক। অনেকে বলছেন, পরিবহন ভাড়া না কমলে তেলের দাম কমানোর যুক্তি নেই। কেননা এতে শুধু মালিকপক্ষের পকেটই ভারি হবে। তবে গ্যাসের দাম বাড়ালে তা চড়বে সকলের ওপর। কেননা বর্ধিত মূল্য চাপবে গৃহস্থালি ও যানবাহন থেকে শুরু করে শিল্প ও বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র পর্যন্ত সকল পর্যায়ে। আবার অনেকে মনে করেন তেলের দাম কমিয়ে গ্যাসের দাম বাড়ালে কিছু যানবাহনও যদি তেলের দিকে ঝুঁকে পড়ে তাহলেও গ্যাস সাশ্রয় হবে। তবে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর ঘোষণার পর তেলের মূল্য হ্রাসের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় এর প্রভাব পড়েছে পরিবেশক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ গত ৪ এপ্রিল জ্বালানি তেলের মূল্য কমানো হবে বলে ঘোষণা দেন। শুধু তাই নয়, ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই তেলের মূল্য কমবে বলে তিনি জানান। মূলত এর পর থেকেই বিপিসি’র তেল বিক্রি কমে যায়। বিপিসি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, জ্বালানি তেলের বিক্রি কমে গিয়ে অর্ধেকে নেমেছে। রি-ফুয়েলিং স্টেশনগুলো তেল কেনা কমিয়ে দিয়েছে। যে কোন দিন তেলের মূল্য কমার ঘোষণা কার্যকর হতে পারে এমন আভাস থাকায় এই অবস্থা। ৪ এপ্রিলের আগে এবং পরের ক’টা দিনের তেল বিক্রির চিত্রে দেখা যায় খুচরা পর্যায়ের পরিবেশকরা যেন তেল কিনতে ভয় পাচ্ছেন। পরিবহন সেক্টরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় ডিজেল। গত ২ এপ্রিল ৬ হাজার ৮০ টন, ৩ এপ্রিল ১০ হাজার ৮শ’ ২ টন এবং ৪ এপ্রিল ১০ হাজার ১৫৩ টন ডিজেল বিক্রি হয় বিপিসির। প্রতিমন্ত্রী মূল্যহ্রাসের ঘোষণা দেয়ায় ডিজেল বিক্রি অর্ধেকে নেমে আসে। ৫ এপ্রিল ৬ হাজার ৩৬৩ টন, ৬ এপ্রিল ৫ হাজার ৯৬৩ টন এবং ৭ এপ্রিল ৫ হাজার ৮৮২ টন ডিজেল বিক্রি হয়। একইভাবে পেট্রোল ও অকটেন বিক্রিও কমে প্রায় একই হারে। এতে করে পেট্রোল পাম্পগুলোতে জ্বালানি সঙাকট দেখা দেয়। যানবাহন চালক ও মালিকদের অপেক্ষায় থাকতে হয় দীর্ঘক্ষণ। শুধু তাই নয়, এক স্টেশন না পেয়ে তাদের ছুটতে হয় অন্য স্টেশনে। চট্টগ্রামসহ সারাদেশেই একই চিত্র। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে অনেক পাম্পেই দেখা যায়, গাড়ি ঢুকে তেল না পেয়ে বেরিয়ে পড়ছে। আবার অনেক রি-ফুয়েলিং স্টেশনের প্রবেশ পথ বন্ধ রাখা হয়েছে বাঁশ ফেলে। কোথাও বা কাগজের নোটিস ‘তেল নেই’। দুয়েকটিতে পাওয়া গেলেও তেলের জন্য চলে বিরক্তিকর অপেক্ষা।
×