ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী তিন কোম্পানি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১০ এপ্রিল ২০১৬

গভীর সমুদ্রে তেল গ্যাস অনুসন্ধানে আগ্রহী তিন কোম্পানি

রশিদ মামুন ॥ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নতুন করে তিনটি কোম্পানি আগ্রহ দেখিয়েছে। আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি স্টেট অয়েল, ক্রিস এনার্জি এবং দাইয়ু গভীর সমুদ্রের ডিস-১২, ডিস-১৬ এবং ডিস-২১-এ তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করতে চায়। পেট্রোবাংলা সূত্র বলছে, তাদের প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। প্রস্তাব পেলে যাচাই-বাছাই করে প্রোডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) স্বাক্ষর করা হবে। এর আগে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান মাঝপথে ফেলে রেখে মার্কিন কোম্পানি কনোকো ফিলিপস দেশ ছাড়ে। তখন থেকে গভীর সমুদ্রে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ঝিমিয়ে পড়ে। এখন নতুন করে আবার তিনটি ব্লক ইজারা দেয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, সমুদ্রের ২০ থেকে ২০০ মিটার গভীরে তিনটি ব্লকের অবস্থান। গভীর সমুদ্রের ১২, ১৬ ও ২১ নম্বর ব্লকের আয়তন যথাক্রমে তিন হাজার ৫৬০ বর্গকিলোমিটার, তিন হাজার ৩৫৩ এবং তিন হাজার ২০৪ বর্গকিলোমিটার। পেট্রোবাংলা সূত্র জানায়, আগ্রহী তিনটি কোম্পানিকে এর মধ্যে প্রস্তাব জমা দিতে বলা হয়েছে। দরপত্র এড়িয়ে বিদ্যুত ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ আইন (বিশেষ বিধান) ২০১০-এর আওতায় আগ্রহপত্র আহ্বান করলে কোম্পানিগুলো সাড়া দেয়। পেট্রোবাংলার একজন কর্মকর্তা জানান, এর আগে দরপত্রে একই ব্লকের জন্য কাজ পাওয়া কনোকো ফিলিপস চলে যাওয়ার সময় তাদের যৌথ উদ্যোক্তা স্টেট অয়েলকে কাজটি এককভাবে করার জন্য আহ্বান জানায় সরকার। তবে তখন কোম্পানিটি দরপত্রের চেয়ে মূল্যহার বৃদ্ধির সঙ্গে প্রতি বছর আরও ২ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধির দাবি জানায়। জানা যায়, ২০১২ সালে এই তিনটি ব্লকের বিপরীতে দরপত্র আহ্বান করেছিল পেট্রোবাংলা। ওই দরপত্রে ৫০ ভাগ সমান অংশীদারিত্বে কনোকো ফিলিপসের সঙ্গে দরপত্র জামা দেয় স্টেট অয়েল। কনোকো এবং স্টেট অয়েল অনেকদিন ধরে সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে। গত বছর পিএসসি স্বাক্ষরের দিনক্ষণ ঠিক হলেও শেষ পর্যন্ত তা আর হয়নি। জ্বালানি বিভাগের পক্ষ থেকে বলা হয়, দাবি মানতে গেলে পিএসসি পরিবর্তনে সরকারের মন্ত্রিসভার অনুমোদন প্রয়োজন ছিল। সঙ্গত কারণে জ্বালানি বিভাগ থেকে নতুন করে আগ্রহপত্র নিয়ে কাজ দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। জ্বালানি বিভাগ সূত্র জানায়, অন্য দুটি কোম্পানি এখনও আগ্রহপত্র দেয়ার বিষয়ে কিছু না জানালেও নরওয়ের রাষ্ট্রীয় কোম্পানি স্টেট অয়েল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। আর সিঙ্গাপুরের ক্রিস এনার্জি আর কোরিয়ার দাইয়ু এখনও কিছু জানায়নি। এর মধ্যে ক্রিস এনার্জি সাগরের ১১ নম্বর ব্লকে অস্ট্রেলিয়ার কোম্পানি সান্টোসের সঙ্গে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কাজ করছে। তবে দাইয়ু বাংলাদেশে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে নতুন। মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, কাজগুলো দ্রুত করতেই বিশেষ আইন-২০১০ প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের স্থলভাগের গ্যাস দ্রুত ফুরিয়ে আসছে। আর সাগরে অনুসন্ধানের ক্ষেত্রেও পিছিয়ে রয়েছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। বিশেষ করে মার্কিন কনোকো ফিলিপিস জরিপ শেষে কূপ খননের আগে ১০ এবং ১১ নম্বর ব্লক ফেলে চলে যায়। এতে তাদের জরিপে সাড়ে চার টিসিএফ গ্যাস রয়েছে বলে যে সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল তার বাস্তব অবস্থা জানা সম্ভব হয়নি। এখন সাগরে ভারতীয় দুটি কোম্পানি ওএনজিসি ভিদেশ লিমিটেড (ওভিএল) এবং অয়েল ইন্ডিয়া লিমিটেড (ওইআইএল) ৪ এবং ৯ নম্বর ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করছে। এর বাইরে ক্রিস এনার্জি এবং সান্টোস ১১ নম্বর ব্লকে কাজ করছে। তবে একই এলাকা হলেও মিয়ানমারে ভাল দাম পাওয়ায় আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো দেশটির দিকে ঝুঁকছে। মিয়ানমার ইউনিটপ্রতি গ্যাসের দর আট ডলার দিচ্ছে। তবে ভারত আন্তর্জাতিক বাজারে তেল-গ্যাসের দাম কমায় তা পাঁচ ডলারের নিচে নামিয়ে এনেছে। আর আমাদের এখানে সাড়ে ছয় ডলার দাম দেয়া হচ্ছে। জ্বালানি বিভাগ বলছে, আমাদের দাম এখন আকর্ষণীয়। আগের থেকে প্রায় দেড় ডলার বাড়ানো হয়েছে এই দাম। এখন আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো আগ্রহী হয়ে উঠবে।
×