ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সালিশে জরিমানা আদায় হলো না বলে মেম্বারের আক্ষেপ

গরু চুরির অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ৬ এপ্রিল ২০১৬

গরু চুরির অপবাদ সইতে না পেরে আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, গলাচিপা ॥ পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোন্তাজ ইউনিয়নের চরলক্ষ্মী গ্রামে কথিত গরু চুরির অভিযোগে সালিশের নামে রিপন সরদারকে সারারাত আটকে রেখে বর্বরোচিত করা হয়েছে। নবনির্বাচিত ইউপি মেম্বারের নেতৃত্বে কয়েক আওয়ামী লীগ নেতা এ সালিশের আয়োজন করে এবং নির্যাতন চালায়। বহু মানুষের উপস্থিতিতে গরু চুরির অভিযোগে নির্যাতন, লাঞ্ছনা এবং অর্থ জরিমানার অপবাদ সইতে না পেরে রিপন সরদার শেষ পর্যন্ত পরিবারের সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে আত্মহত্যা করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। রাঙ্গাবালী পুলিশ এ ঘটনায় সালিশদার জব্বার সরদারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে। পুলিশ জানায়, রবিবার রাত ৮টার দিকে চরমোন্তাজ ইউনিয়নের নলুয়া গ্রামের কৃষক বারেক মৃধার গরু চুরির অভিযোগে নবনির্বাচিত ইউপি মেম্বার আবদুস সালাম পেয়াদার নির্দেশে তার লোকজন দক্ষিণ চরলক্ষ¥ী গ্রামের এসমাইল সরদারের ছেলে রিপন সরদারকে (২৪) বাড়ি থেকে তুলে চরবেষ্টিন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে নিয়ে যায়। রিপন সরদার বিবাহিত এবং এক মেয়ের বাবা। রাত ৯টার দিকে বহু মানুষের উপস্থিতিতে রিপন সরদারের হাত-পায়ে শিকল পরিয়ে শুরু করা হয় কথিত গরু চুরির সালিশ। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, এ সালিশে নেতৃত্ব দেন ইউপি মেম্বার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুস সালাম পেয়াদা, তার বেয়াই জব্বার সরদার, বারেক মৃধা, কাশেম মোল্লা, খলিল চৌকিদার ও শহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় আরও কয়েক নেতা। প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, সালিশকারী ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা গরু চুরির অভিযোগে রিপনকে কিল-চড়-লাথি-ঘুষি মারে। মারধরের একপর্যায় রিপন অচেতন হয়ে পড়লে হাত-পায়ে শিকল বাঁধা অবস্থায় তাকে সারারাত আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের টেবিলের নিচে ফেলে রাখা হয়। তিনজন সারারাত রিপনকে পাহারা দেয়। সোমবার সকালে ইউপি মেম্বার আবদুস সালাম পেয়াদা ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রিপনকে নিয়ে যেতে তার পরিবারের সদস্যদের খবর দেন। বেলা আড়াইটার দিকে পরিবারের লোকজন ৩০ হাজার টাকা জরিমানা দিয়ে রিপনকে বাড়িতে নিয়ে যায়। বাকি ২০ হাজার টাকা রাতে পরিশোধের অঙ্গীকার করা হয়। এ সময় খলিল চৌকিদার পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে রিপনকে সুস্থ অবস্থায় বুঝে পেয়েছেন মর্মে লিখিত রাখেন। রাত আটটার দিকে রিপন সরদার গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। রিপন সরদারের পরিবারের অভিযোগ, চুরির অপবাদ, নির্যাতন ও লাঞ্ছনা সইতে না পেরে রিপন আত্মহত্যা করেছে। সালিশে নেতৃত্বদানকারী নবনির্বাচিত ইউপি মেম্বার আবদুস সালাম পেয়াদা এ বিষয়ে জানান, তিনি নিহত রিপনকে মারধর করেননি। তবে সালিশের অভিযোগ সত্য এবং তা ইউনিয়নের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানের নির্দেশে করেছেন বলে দাবি করেন। যদিও তার এ দাবির সত্যতা মেলেনি। সালাম পেয়াদা আরও জানান, স্থানীয়রাই রিপনকে হাতে নাতে ধরে আওয়ামী লীগ অফিসে এনে আটকে রেখেছে। সালিশের রায় অনুযায়ী পরিবারের লোকজন ১৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে। রিপন মারা যাওয়ায় বাকি ৩৫ হাজার টাকা গচ্চা গেছে বলে তিনি আফসোস করেন।
×