ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী সহিংসতা

প্রকাশিত: ০৩:২৬, ৪ এপ্রিল ২০১৬

নির্বাচনী সহিংসতা

চলছে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। ৬টি ধাপে অনুষ্ঠেয় এ নির্বাচনের দুটি ধাপ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা লুপ্ত হচ্ছে না। আবার নির্বাচনোত্তর সহিংসতার ঘটনাও ঘটছে। ভোটের দিন এবং এর পূর্বাপর সময়ে প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। নির্বাচনে সহিংসতার ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। এখনও তা ঘটছে। এটা যেন এই নির্বাচনী সংস্কৃতিরই অংশ। অবশ্য স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে ঝুট-ঝামেলা মাথাচাড়া দেয়ই। যে কোন প্রকারে বিজয়ী হওয়ার প্রবণতা কাজ করে প্রার্থী ও তার সমর্থকদের মধ্যে। জয়লাভ করার জন্য জনসমর্থনের পাশাপাশি অনেক সময় অর্থ ও পেশিশক্তির সহায়তা জরুরী হয়ে পড়ে অনেক প্রার্থীর ক্ষেত্রে। পেশিশক্তিধারীদের চাহিদা বাড়ে। গোলযোগ বাধানোর জন্য ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের ব্যবহারও পুরনো। অতীত অভিজ্ঞতা থেকেও বলা যায়, এ দেশে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে স্থানীয়ভাবে প্রভাব বিস্তারের কারণে সহিংসতার আশঙ্কা বরাবরই থেকে যায়। জনবল সঙ্কটজনিত কারণে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা যায় না। একসঙ্গে সারাদেশের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হলে পরিস্থিতি যে ভয়াবহ হতো তা সহজেই অনুমেয়। ধাপে ধাপে নির্বাচন হচ্ছে, অথচ পরিস্থিতি সামাল দিতে পেতে হচ্ছে বেগ। কারণ মূলত পুলিশের স্বল্পতা। নির্বাচনে ভোটকেন্দ্র দখল, ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেয়া, কোথাওবা ভোটারদের কেন্দ্রে উপস্থিত হতে না দেয়ার ঘটনা এবারের দুটি ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও ঘটেছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের পরস্পরের মধ্যে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে ঘটেছে সংঘর্ষের ঘটনা। কোথাও কোথাও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্ত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও। প্রথম দফার নির্বাচনে ১২ জন ও দ্বিতীয় দফার নির্বাচনে ১০ জন নিহত হয়েছে নির্বাচন পূর্বাপর সহিংসতায়। এলাকায় এলাকায় আগে হতে চলমান হিংসা-বিদ্বেষ ও মারামারি-কাটাকাটিরও প্রভাব পড়ে এই নির্বাচনের সময়। সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠী বা দল জেতার জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা জানে নির্বাচনে জয়ী হলে তারা বিরুদ্ধপক্ষের ওপর ছড়ি ঘোরাতে পারবে। আর হেরে গেলে টিকে থাকা কঠিন হবে। এলাকায় দাপট ও অস্তিত্ব বজায় রাখার প্রশ্নটি বড় হয়ে দাঁড়ায়। মূলত এসব কারণে তৃণমূল পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের নির্বাচন সহিংসতামুক্ত হতে পারছে না। সংঘাতহীনভাবে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের শক্ত অবস্থান ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সহনশীল মনোভাবের ঘাটতি এবারও দেখা গেছে। দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীকে এবারই প্রথম ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন হচ্ছে। ভাবা হয়েছিল এতে সংঘাত-সহিংসতা হ্রাস পাবে। কিন্তু তৃণমূল পর্যায়ে রাজনৈতিক দলের হালহকিকত কোন্ পর্যায়ে তার একটা চিত্ররূপ এই নির্বাচনে পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচন অধিকাংশ স্থানে শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলা যায়। হাজার হাজার কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র কয়েকটিতে হয়েছে বিশৃঙ্খলা। ক্ষমতাসীন সরকার তো অতীতের খারাপ দৃষ্টান্তকে পেছনে ফেলে নতুন ভাল দৃষ্টান্ত তৈরি করতে চায়। কিন্তু এই নির্বাচনের চিত্র সরকারের সেই আকাক্সক্ষার প্রতিফলন ঘটিয়েছে বলা যায় না। নির্বাচনী সহিংসতার জন্য ব্যর্থতার দায়ে বেশ ক’জন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। এবারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর তৃণমূল পর্যায়ের সাংগঠনিক অবস্থা ও অবস্থান পরিষ্কার হয়েছে। কেন্দ্রের নির্দেশনা না মানা ও স্থানীয় পর্যায়ে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার কাজটি যে দুর্বল, তা আবারও স্পষ্ট হলো। যে ক’টি কেন্দ্রে সংঘর্ষ ঘটেছে তার অধিকাংশই ঘটেছে দল মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে। এদের কারণে নির্বাচন উৎসবমুখর হতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলা যায়। ২২ ও ৩১ মার্চ দু’ধাপে নির্বাচন হয়েছে। আরও ৪টি ধাপে নির্বাচন হবে। নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সহিংসতা প্রতিরোধে পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ জরুরী হয়ে পড়েছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা দেশবাসী চায় না।
×