ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজধানীর ৩ শতাধিক স্পটে ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৯ মার্চ ২০১৬

রাজধানীর ৩ শতাধিক স্পটে ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া

শংকর কুমার দে ॥ গত ১২ মার্চ, বিকেল প্রায় পৌনে তিনটা। রাজধানীর রামপুরা, বিটিভি সেন্টারের পার্শ্ববর্তী এলাকা। জনাকীর্ণ রাস্তায় পথচারীরা ছুটছে। এমন সময় গুলি ও বোমার আওয়াজ। যেন কোন সিনেমার শূটিং হচ্ছে। একদল সশস্র ছিনতাইকারী নগদ পৌনে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নিল ফিল্মি কায়দায়। ছিনতাইয়ে বাধা দিতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের গুলিতে প্রাণ গেল ইসমাইল হোসেন নামে এক দোকান কর্মচারীর। এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হলো ইসমাইল হোসেন। প্রায় এক সপ্তাহ হলো ছিনতাইকারীও ধরা পড়ল না, উদ্ধার হলো না টাকাও। সংসারের একমাত্র উপার্জনশীল ব্যক্তি ছিনতাইকারীদের গুলিতে নিহত হওয়ার পরিণামে পরিবারটিতে নেমে এসেছে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের ঘোর অন্ধকার। পরিসংখ্যানে জানা গেছে, রাজধানীর ৪৯ থানা এলাকায় অন্তত তিন শতাধিক স্পটে অর্ধশতাধিক সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্র সক্রিয়। প্রতি বছর রাজধানীতে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে প্রায় চার হাজার। এসব ঘটনায় ছিনতাই হচ্ছে কোটি কোটি টাকা। ছিনতাইকালে দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হচ্ছে ৫০ জনেরও বেশি, আহতের সংখ্যা দুই হাজারেরও বেশি। প্রকাশ্য দিবালোকে লাখ লাখ টাকা ছিনতাই হলেও এর কোনটিরই কোন সুরাহা হয় না। ছিনতাইকৃত অর্থ বা অলঙ্কার কিংবা অন্য সামগ্রী উদ্ধার তো দূরের কথা, ছিনতাইকাজে ব্যবহƒত অবৈধ অস্ত্র কিংবা এর সঙ্গে জড়িতদের কোন হদিস করতে পারছে না স্থানীয় পুলিশ। ফলে ছিনতাইকারীরা দিন দিন বেপরোয়া হয়ে উঠছে। রাজধানীর রামপুরায় গত ১২ মার্চ যেদিন ছিনতাইকারীরা গুলি করে এক দোকান কর্মচারী ইসমাইল হোসেনকে খুন করে পৌনে তিন লাখ টাকা ছিনিয়ে নিল, তার আগের দিন ১১ মার্চ মাসিক ক্রাইম কনফারেন্স হলো ঢাকা মহানগর পুলিশ সদর দফতরে। রাজধানীতে যে কোন মূল্যে ছিনতাই প্রতিরোধ করতে কড়া নির্দেশনা দিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সেই সঙ্গে রাজধানীতে ঘটে যাওয়া ছিনতাই মামলাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটনেও কড়াকড়ি আরোপ করেছেন তিনি। খুব দ্রুত ওই সব মামলার তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন ডিএমপি কমিশনার। ডিএমপি সদর দফতরের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত মাসিক ক্রাইম কনফারেন্সে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদের পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, যে কোন মূল্যে রাজধানীতে ছিনতাই প্রতিরোধ করুন। এটিকে আর বাড়তে দেয়া যাবে না। এছাড়া আগের ছিনতাই মামলাগুলোর রহস্য উদ্ঘাটন করুন। যেখানে অন্যান্য অপরাধ কমে এসেছে, সেখানে ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা বেড়ে গেছে। তাই ছিনতাই বাড়তে না দিয়ে এর বিরুদ্ধে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে নগরবাসী স্বস্তিতে বাস করতে পারবে। খোঁজ নিয়ে ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিনই রাজধানীর কোথাও না কোথাও একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। তবে ছিনতাইয়ের টাকার অঙ্ক বড় না হলে কিংবা ছিনতাইকালে আহত-নিহতের ঘটনা না ঘটলে, থানা পুলিশ না হলে সেগুলো খুব সহজে চাপা পড়ে যায়। অন্যদিকে বেশিরভাগ সময়ই ছিনতাইয়ের শিকার যারা হন, তারা থানা-পুলিশের বাড়তি ঝুট-ঝামেলা এড়ানোর জন্য তাদের শরণাপন্ন হন না। থানা পুলিশও তাদের এলাকায় অপরাধ কম হয়েছে তা উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে দেখানোর জন্য অনেক সময় ছিনতাইসহ নানা অপরাধের ঘটনা নথিভুক্ত করতে আগ্রহবোধ করে না। এ কারণে থানা পুলিশের পরিসংখ্যানে কোনদিনই প্রকৃত ছিনতাইয়ের ঘটনার চিত্র ফুটে ওঠে না।
×