ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলাদের বাস সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ১৯ মার্চ ২০১৬

মহিলাদের বাস সঙ্কট

পুরুষ যাত্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যথাসময়ে অফিস বা কর্মস্থল কিংবা শিক্ষাঙ্গনে যাওয়া যেন দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে। বিষয়টি জানেন তা ভুক্তভোগী নারী। কর্মদিনে ঘর থেকে বের হয়ে যানবাহনে চড়ে যাতায়াতে নারীরা যে কী পরিমাণ দুর্ভোগের শিকার হয়, তার ইয়ত্তা নেই। অনেক ক্ষেত্রে অশোভন আচরণের শিকার হওয়া তো স্বাভাবিকতায় পরিণত হয়েছে। মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসনে দিব্যি বসে থেকে নানা কিসিমের নারীবিষয়ক নসিহত করেন। এসব রাজধানীর বাসযাত্রীদের নিত্যদিনই হজম করে যেতে হয়’ অধিকাংশ সময়ে নীরবে। কখনও সখনও প্রতিবাদ থেকে ঝগড়ায় পরিণত হতে হয় না। সঠিক সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে যানবাহনে চড়তে গিয়ে পুরুষদের সঙ্গে রীতিমতো যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয় নারীদের। বাসে সংরক্ষিত আসন ফাঁকা না থাকায় উঠতেও পারে না অনেকে। এসব ভোগান্তি মহিলাদের নিত্যদিনের সঙ্গী যেন গণপরিবহনে। বাসের হেলপাররা নারী যাত্রীদের যানবাহনে ওঠাতে চায় না। নারী দেখলেই বলে সিট নেই। অফিস যাওয়া-আসার পথে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ মোকাবেলা করা থেকে পরিত্রাণ পাবার সম্ভাবনাও ক্ষীণ। দেশে নারী শিক্ষার হার ক্রমশ বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে কর্মজীবী নারীর সংখ্যাও। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, তাদের যাতায়াত ব্যবস্থা নিয়ে যেন কারও কোন মাথাব্যথা নেই। স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গামী অনেক শিক্ষার্থী যথাসময়ে প্রতিষ্ঠানে পৌঁছতে পারে না, বাসে উঠতে না পারায়। স্কুলের সময়টাতে এত ভিড় থাকে যে, ছেলেরা গেটে ঝুলে গেলেও মেয়েরা যানবাহনে চড়তেই পারে না। শিক্ষার্থীদের এসব দুর্ভোগ বুঝি কোনদিনও লাঘব হবে না, বরং বাড়বেই। এ যেন নারীর ক্ষেত্রে ‘নিয়তির ললাট লিখন’। এমনিতেই পরিবহন সঙ্কট। আবার এই সঙ্কটেরও রয়েছে নানা মাত্রা। তদুপরি রয়েছে যানজট। এসব সমাধানে দায়িত্ব যাদের, তারাও নির্বিকার। মহিলা মন্ত্রণালয় মহিলাদের পরিবহন সুবিধার জন্য কোন প্রস্তাবও আনে না। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ও শিক্ষার্থীদের শিক্ষাঙ্গনে যাতায়াতের ব্যবস্থা নিয়ে ভাবে না। আর সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় নারীদের প্রতি সহমর্র্মী হয়ে ওঠেনি সেভাবে। মোদ্দা কথা মন্ত্রণালয়ের কোন পরিকল্পনা নেই রাজধানীর গণপরিবহন ব্যবস্থা নিয়ে। সেখানে মহিলা যাত্রীদের যাতায়াত সঙ্কট তাদের চিন্তা-ভাবনা থেকে যোজন দূরে। বিআরটিসির যে কয়টি হাতেগোনা মহিলা বাস রয়েছে, তা অনিয়মিত চলাচল করে। কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, যাত্রী পাওয়া যায় না। তাই লোকসান হয়। আসলে কোন্ রুট দিয়ে কখন কোন্ সময় চলাচল করে তার কোন্ প্রচার-প্রচারণা না থাকায় জানতে পারে না নারী যাত্রীরা। আসলে কর্তৃপক্ষ দায়সারাভাবে এই সার্ভিস চালু করায় তা যথাযথ ভূমিকা রাখতে পারছে না। স্কুলগামী এক ছাত্রীর আবেদনে সড়ক পরিবহনমন্ত্রী একটি রুটে মহিলা বাস চালু করেছেন। ব্যাপারটি প্রশংসনীয় হলেও প্রশ্ন থেকে যায়, নারী পরিবহন সমস্যা লাঘবে অদ্যাবধি কোন পরিকল্পনা কার্যকর করা হয় না কেন? হলে স্কুলছাত্রী শতাব্দীকে কষ্ট করে মন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে হতো না। রাজধানীবাসীর অনেক দিনের দাবি গণপরিবহন ব্যবস্থা চালুর। সর্বাগ্রে এদিকে নজর দিতে হবে। নারী ও শিশু তথা জনগণের চলার পথ যেমন কণ্টক ও সঙ্কটমুক্ত করতে হবে, তেমনি সড়কগুলোকেও যান চলাচলের উপযুক্ত করতে হবে। না হলে সবই বৃথা।
×