ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অঞ্জন দত্ত

লন্ডনে বং কানেকশন

প্রকাশিত: ০৬:৪৭, ১৭ মার্চ ২০১৬

লন্ডনে বং কানেকশন

মেঘলা-ধূসর আকাশ হঠাৎ জ্বলজ্বলে হয়ে উঠল। আমি আর আমার প্রডিউসার হিমাংশু ধানুকা অক্সফোর্ড স্ট্রিটের টিউব স্টেশনের দিকে পা বাড়ালাম। ফিরে এলাম লন্ডনে, আমার প্রিয় জায়গা, লেইসেস্টার স্কয়ারে। খানিকটা ঠা-া হাওয়া উপেক্ষা করে আমি আর আমার তরুণ প্রযোজক স্ট্রিট কর্ণার ও কনভেন্ট রোডের ক্যাফেগুলোতে, যেখানে আমাদের আসন্ন প্রজেক্টটা নিয়ে পরিকল্পনা করব, যার শূটিং শুরু হবে মে থেকে। ঠিক দশ বছর আগে, আমি আর আমার আরেক তরুণ প্রযোজক জয় গাঙ্গুলি হিউস্টনের রাস্তায় হেঁটেছিলাম ‘বং কানেকশন’-এর লোকেশন খুঁজতে। এ্যাডভেঞ্চারের শুরু ছিল সেটা। আমি তখন ৫২, আর জয় ত্রিশের কোঠায়। আমরা এমন কিছু করার চেষ্টা করছিলাম, যেটা শুধু কলকাতার বাঙালীরা নয়, সমস্ত বাঙালীরা ভাল বাসবে, ভালভাবে নেবে। একইসঙ্গে বাংলা ছবিতে নতুন একটা ধারা সৃষ্টি করবে। পুরো ক্রেডিট আমি নিতে পারি না, কারণ, পুরো টিমের তরুণ টেকনিশিয়ানরা, আমার প্রযোজক, অভিনেতা-অভিনেত্রী, দর্শকদের জন্যই ‘বং কানেকশন’-কে ঘিরে যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হয়েছে। যেদিন নিউইয়র্কের মডার্ন আর্ট মিউজিয়ামে এটা দেখানো হয়, আমি কেঁদেছিলাম। আজ ৬২ হলেও, সেই একই উত্তেজনা অনুভব করছি। আমেরিকা ও জয়পুরের ওপর ভিত্তি করে ‘বং কানেকশন’-এর পার্ট টু করার জন্য জয় আমাকে জোর করছিল বহুদিন ধরে। ওই একই বিষয় নিয়ে আবার! ঠিক উৎসাহ পাচ্ছিলাম না। আমি আসলেই পার্ট টু বা সিক্যুয়েল টাইপ নই। যদি একটা ফ্রেশ গ্রাউন্ডকে ভাঙতে হয়, তার জন্য ফ্রেশ আইডিয়া-নতুন কনসেপ্টের প্রয়োজন পড়ে। সুতরাং যখন, আবারও, ত্রিশোর্ধ্ব হিমাংশু আমাকে লন্ডনে বসবাসরত বাঙালীদের নিয়ে কাজ করতে বলল, ভেতর থেকে তাড়া অনুভব করলাম। লন্ডন এবং আমার খুবই পরিচিত শহর কলকাতাকে নিয়ে স্ক্রিপ্ট লিখলাম। আমার মিউজিক ডিরেক্টর নীল দত্ত, চিত্রগ্রাহক ইন্দ্রনীল মুখার্জি, এডিটর অর্ঘ্যকমল মিত্র, এবং এক্সিকিউটিভ প্রডিউসার সঞ্জয় পাঠক বেশ পছন্দও করল। ‘দ্য বংস এগেইন’ বাংলায় যে বাধাগুলোর মুখোমুখি আমরা হই প্রতিনিয়ত, সেগুলো ভেঙে দেবে। বড় বাজেট, বড় স্টার, তথাকথিত প্রডাকশন হাউস ভ্যালুÑ এগুলো ওয়ার্ল্ড সিনেমায় কোন ম্যাটার করে না। আমার মনে হয়, আরও গ্লোবাল হয়ে ওঠার এখনই প্রপার টাইম। আমার এই কলকাতার ভেতর আরও অনেক কলকাতা আছে। উত্তর কলকাতার সামন্ততান্ত্রিক চার্ম, সল্টলেকের নব্য ধনী, জরাজীর্ণ, স্যাঁতসেঁতে, নেশাগ্রস্ত সদর স্ট্রিট। বন্য, বিশৃঙ্খল চাঁদপাল ঘাট। ঠিক তেমনি, লন্ডনেও যেন গোটা বিশ্ব। অভিজাত, উন্নত লন্ডন, হিপ্পি লন্ডন, মহো, ব্রিকলেন, কেন্ট সি সাইট, ভবঘুরে লন্ডন। তাই আমি এই দুই শহরের গল্পকে একসঙ্গে নিয়ে ‘দ্য বংস এগেইন’-এ নেমেছি। ‘দ্য বং কানেকশন’-এর সঙ্গে এর কানেকশন নেই। একটা মেজর রোলের জন্য যখন অডিশন নিচ্ছিলাম, একজন লন্ডন-বর্ন এবং ব্রট-আপ পাকিস্তানী অভিনেতা আমার নজর কাড়ল। হাসান ওর নাম। সে নাসিরুদ্দিন শাহকে পছন্দ করে, ইরফান খান, মৃণাল সেন, অনুরাগ কশ্যপকে। ‘রঞ্জনা আমি আর আসব না’ শুনতে ভালবাসে। পার্নো মিত্রের সঙ্গেও অভিনয়ে খুবই আগ্রহী। পার্নো এ ছবিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে আছে। ... আমি কল্পনা করছি, নেহা পান্ডা, ডিজাইনার এবং আমার ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ একটি রোল করছে, সে হেঁটে যাচ্ছে সদর স্ট্রিটে রুনি মেরা হয়ে। শরীরে ওর আঁকা ড্রাগন ট্যাটু। কল্পনা করছি ক্রপ-কাট চুলের যিশু সেনগুপ্তকে, হার্লি-ডেভিডসন হাঁকিয়ে চলে যাচ্ছে চৌরঙ্গীর পথে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে ভাবছি এক অদ্ভুত চরিত্রে। ওভারকোট আর স্কার্ফে লন্ডনে ভাবছি গৌরবকে।... আমি বিশ্বাস করতে শুরু করেছি, আমি ভাগ্যবান। এ কারণে যে, এখনও একদল তরুণ, তাদের উদ্যম আমাকে ঘিরে আছে।
×