ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জেএমবির বড় মাপের নাশকতার টার্গেট ছিল ২৬ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ১৫ মার্চ ২০১৬

জেএমবির বড় মাপের নাশকতার টার্গেট ছিল ২৬ মার্চ

শংকর কুমার দে ॥ আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার মাধ্যমে দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির ছক তৈরি করেছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। রাজধানীর ডেমরার মাতুয়াইল কাঠেরপুল এলাকার বাঘবাড়ি থেকে গ্রেফতারকৃত জেএমবির ৫ জঙ্গীকে ৫ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। ময়মনসিংহ জেলা আমির হুযাইফা আকন্দ শাহীন ওরফে সিয়ামসহ ৫ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে র‌্যাবও। জেএমবিসহ জঙ্গীরা যে দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা করছে সেই বিষয়ে আগেই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএ। র‌্যাব ও পুলিশ সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র জানান, ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনআইএর দেয়া রিপোর্টে বলা হয়, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের মতো কোন ঘটনা বাংলাদেশে জেএমবিরা ঘটাতে পারে। বিশেষ করে যে কোন জনাকীর্ণ স্থানে ভয়ঙ্কর ধরনের আত্মঘাতী বোমা হামলা চালাতে পারে। এজন্য তাদের হাতে প্রচুর বিস্ফোরক ও আগ্নেয়াস্ত্র আছে। এরা পশ্চিমবঙ্গে আর্থিকভাবে তেমন কোন সুবিধা করতে পারেনি বলে বাংলাদেশে ঢুকে পড়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, বর্ধমানের খাগড়াগড়ে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় জড়িত কয়েক জেএমবি নেতা বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় অবস্থান করছে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের চাঁপাইনবাবগঞ্জ, রাজশাহী, নওগাঁ, দিনাজপুর ও ঠাকুরগাঁও জেলার সীমান্ত এলাকায়। তারা সীমান্তে অবস্থান করে ভারতের মোবাইল ফোনের সিমকার্ডও ব্যবহার করে। ভারতের জঙ্গীদের (সন্ত্রাসী) সঙ্গে কথা বলে। আবার ভারতের সীমান্ত থেকে তাদের দেশের জঙ্গীরা বাংলাদেশের মোবাইল ফোনের সিমকার্ড ব্যবহার করে কথা বলছে। ফলে প্রযুক্তিগত দিক থেকে তাদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আর সেই রিপোর্টে থাকা বিভিন্ন তথ্যের হুবহু মিল পাচ্ছে বাংলাদেশের পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। র‌্যাব ও পুলিশ সূত্র জানান, ডেমরার মাতুয়াইল কাঠেরপুলের বাঘবাড়িতে জঙ্গী আস্তানা আছে এমন খবরের ভিত্তিতে রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে জেএমবির ৫ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। র‌্যাব গত এক সপ্তাহ ধরে জঙ্গীদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করার পর গ্রেফতার করা হয় জেএমবির ৫ জঙ্গীকে। পাঁচ জঙ্গীকে র‌্যাব রবিবার রাতে গ্রেফতারের পর পর সোমবার সকালে হস্তান্তর করা হয় যাত্রাবাড়ী থানায়। থানা পুলিশ সোমবার ৫ জঙ্গীকে আদালতে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান। গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গীর ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত। গ্রেফতারের পর জঙ্গীরা র‌্যাব ও পুলিশকে জানায়, আগামী ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দেশী ও বিদেশীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার ছক তৈরি করেছিল তারা। দেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা নিয়ে সারাদেশে সংগঠিত হচ্ছিল জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীনসহ বিভিন্ন সংগঠনের জঙ্গীরা। র‌্যাব সূত্রে জানা গেছে, তারা এক সপ্তাহ ধরে তাদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি করার পর গ্রেফতার করে পাঁচ জঙ্গীকে। রাজধানীর ডেমরা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীনের ময়মনসিংহের আমির হুযাইফা আকন্দ শাহীনসহ ৫ জঙ্গীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতারকৃত অপর চার জঙ্গী হচ্ছে মোহাম্মদ ইয়াসিন আলী শফিক, মামুনুর রশীদ মামুন, আবুল হাসেম ওরফে হাসেম হাওলাদার ও শফিকুল ইসলাম। ডেমরার মাতুয়াইল কাঠেরপুল এলাকার বাঘবাড়িতে জঙ্গী আস্তানা আছে এমন খবরের ভিত্তিতে রবিবার রাতে অভিযান চালিয়ে পাঁচ জঙ্গীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। এ সময় বিপুল পরিমাণ বোমা তৈরির সরঞ্জামাদি, ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস ও জিহাদী বই উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতারের পর জঙ্গীরা র‌্যাবকে জানায়, বড় ধরনের নাশকতার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির পরিকল্পনা করেছিল। তারা জানায়, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ময়মনসিংহের আমির হুযাইফা আকন্দ শাহীন জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, ২০০৬ সালে হিযবুত তাহরীর সঙ্গে যুক্ত হন এবং মতাদর্শের মিল না হওয়ায় সেখান থেকে বের হয়ে আসে। তবে জেএমবির জেলা আমির হওয়ার পরও হিযবুতের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত থাকে। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীরা বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর পরিকল্পনা করেছিল। ২০১১ সাল থেকে এই জেএমবির সংগঠনসহ জঙ্গীরা সংঘবদ্ধ হয়ে স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন দিবস এলেই তারা নাশকতা ঘটিয়ে দেশ-বিদেশের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেয়ার পরিকল্পনা করে আসছে। তবে জেএমবি এখন আর কেন্দ্রীয়ভাবে সংগঠিত নয়, আঞ্চলিক ভিত্তিতে কমান্ডার বা আমির নির্বাচন করে তারা নাশকতা বা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে আসছে। জেএমবির একাংশের আমির সোহেল মাহফুজ এখনও পলাতক থেকে জঙ্গী তৎপরতা চালাচ্ছে বলে জানান এ র‌্যাব কর্মকর্তা। যাত্রাবাড়ী থানার ওসি মোঃ আনিছুর রহমান জানান, র‌্যাবের হাতে গ্রেফতার হওয়া জেএমবির ময়মনসিংহ জেলার আমিরসহ ৫ জঙ্গীকে যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। গ্রেফতারকৃত ৫ জঙ্গীকে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তারা আগামী ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসকে সামনে রেখে বড় ধরনের নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একজন কর্মকর্তা জানান, জেএমবির ৫ জঙ্গীকে যাত্রাবাড়ী থেকে গ্রেফতারের আগে মিরপুরের আস্তানায় গত ৪ মাসে ১০ জঙ্গীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে, জঙ্গী আস্তানায় গ্রেনেড তৈরির পাশাপাশি সেটি তাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহার হতো। সারাদেশের বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক বোমা হামলার পরিকল্পনা নিয়ে জঙ্গী প্রশিক্ষণ, বোমা তৈরি ও বোমা তৈরির উপকরণ বিস্ফোরক মজুদ করা হচ্ছিল। স্পর্শকাতর স্থান ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরাও তাদের হত্যার টার্গেটের তালিকায় ছিল বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানায় জঙ্গীরা।
×