ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ এ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের এক যুগ

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ১৩ মার্চ ২০১৬

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ॥ এ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের এক যুগ

বর্ণিল সাজে সেজেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। ব্যস্ততার বেড়াজালকে ছিন্ন করে একত্রিত হয়েছে কিছু প্রাণ। দিনটিকে ঘিরে ছিল অনেক উদ্দীপনা। ছিল অপেক্ষার প্রহর। কখন আসবে সেই ক্ষণ! ছিল কিছু উৎকণ্ঠাও। সবকিছু ঠিকঠাকভাবে হবে তো! কিন্তু সকল বাধা বিপত্তিকে ছিন্ন করে ভেটেরিনারি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা দিনটিতে তাদের প্রাণ বেঁধেছেন একই সুতোয়। প্রাণের মাঝে আজ যেন বেজে উঠেছে- ‘আরেকটি বার আয়রে শখা...’ গানটি! বলছি ৫ মার্চের কথা। সকাল থেকে পাখির কিচিরমিচির কলকাকলীতে মুখরিত মতিহার চত্বর। সঙ্গে যুক্ত হয়ে গাছের নতুন পাতায় পাতায় সবুজ রঙের ছোঁয়া। রঙধুন অঙ্কিত হয়েছে রাবির আকাশের ক্যানভাসে। আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) এ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি ও ভেটেরিনারি সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শুভ্র ঘাসের ডগার শিশির বিন্দুুটিও সে আনন্দ উপভোগ করছে প্রাণ খুলে। এক যুগপূর্তির দিনটিকে মহাযুগের খাঁচাই পুরে রাখতে এমনি আয়োজন ছিল বিভাগের পক্ষ থেকে। সকালে বিভাগ থেকে র‌্যালি বের হয়ে ক্যাম্পাস মাতিয়ে তোলে ভুবুজেলার শব্দে। সঙ্গে ব্যান্ড পাটির সুরেলা বাদ্য সঙ্গীত যুক্ত করে উৎসবের আবহ। এ উপলক্ষে শিক্ষার্থীরা চেষ্টা করেছেন তাদের সবটুকু দিয়ে দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে। প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো। দূর-দূরান্ত থেকে তারা ছুটে এসেছেন ১২ বছরের সুখ-দুঃখগুলোকে একে অন্যের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নিতে। বিভাগের তৃতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী সবুর আলী। বর্তমানে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্বে আছেন খাগড়াছড়িতে। বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ হওয়ায় ছুটিছাটা পেলেই ছুটে আসেন মতিহার সবুজ চত্বরে। কিন্তু আজকের আসাটা একটু হলেও ভিন্ন তার কাছে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হওয়া যেন ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে পুরনো দিনের সেই ফেলে আসা স্মৃতিতে। হারিয়ে ফেলছে নিজেকে বার বার অতীতের অতলে। হারানো দিনের কোন জিনিসটি ফিরে পেতে চান? এমনই প্রশ্নে হেসে বলেন, ‘ক্যাম্পাসের কোন দোকানে বসে চা খাওয়া।’ চা তো ইচ্ছা করলে যে কোন সময় খাওয়া যায়? হ্যাঁ ! কিন্তু সেই মুখ, সেই আড্ডা, সেই সোনালি দিনগুলো কী আর ফিরে পাওয়া যায়। প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী জেরিন মমি। বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন। পুরনো দিনের কথা শুনতেই খুলে বসলেন স্মৃতির ডায়েরি, ‘সেই দিনগুলো কী সহজে ভোলা যায়! তখন বিভাগের ১৫ জনের মধ্যে একটি পরিবারের মতো সম্পর্ক ছিল। আড্ডা-হৈহুল্লোড়ে মাতিয়ে তুলতাম ক্যাম্পাস। এ ছাড়া ক্যাম্পাসের এখানে সেখানে ফুচকার দোকানগুলো থাকত আমাদের দখলে। এখনও ক্যাম্পাসে থাকলেও সে স্বপ্নিল দিনগুলো আজ শুধুই স্মৃতি। তবে আজ সবাইকে দেখে স্মৃতিগুলো ভেসে উঠছে চোখের তারায়। সিনেট ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে কথা হলো ভেটেরিনারি ছাত্র সমিতির সহ-সভাপতি ও বিভাগের বর্তমান শিক্ষার্থী জাকিরুল ইসলামের সঙ্গে। বলছিলেন, ‘বিভাগে বড় ভাইবোনদের এভাবে পাওয়া সত্যিই সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাদের সঙ্গে দেখা হয়ে অনেক অভিজ্ঞতা হলো। জানতে পারলাম নিজের বিভাগের পুরনো দিনের অনেক স্মৃতিকথা। সব মিলিয়ে অন্যরকম ভাল লাগা। যেন অনেক দিন পর একটি পরিবারের সব সদস্য একত্রিত হয়েছে। বিভাগ থেকে পাস করে এখন রাবিতে পিএইচডি করছেন ডাঃ মোছাঃ তাহেরা দিল আক্তার। তাই প্রিয় ক্যাম্পাসে আসা যাওয়া নিয়মিতই। কিন্তু কী যেন একটা হারিয়ে ফেলেছেন তিনি! জানতে চাইলে বলেন, হারিয়ে যাওয়া কিছু স্মৃতি আর প্রিয় মুখগুলো খুঁজে ফিরতেই আজ ছুটে আসা। পিএসচডি করার কারণে প্রায়ই আসি। কিন্তু আজ সবাইকে একসঙ্গে পেয়ে যেন হারানো দিনগুলো ভেসে উঠেছে মনের ক্যানভাসে। যাদের সঙ্গে একসময় পুরো দিনটি কাটিয়ে দিতাম তাদের সঙ্গে আর চাইলেই দেখা হয় না। ডাঃ মোঃ নাহিদ আলম এসকেএফ কোম্পানিতে আছেন। তিনি অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বললেন, প্রাণের টানেই দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসা। চাইলেই কী আর পুরনো দিনের বন্ধুবান্ধব, প্রিয় শিক্ষক আর এই প্রিয় শখা ক্যাম্পাসের সঙ্গে মনের মিতালী করা যায়? হাজারো ব্যস্ততার মাঝে ছুটে চলতে হয় প্রতিনিয়ত। তাই এ আয়োজন যেন ক্যাম্পাস ফ্লেভারে সবকিছু এক সঙ্গে পাওয়া। সিনেট ভবনে দুই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান, কৃষি অনুষদের অধিকর্তা প্রফেসর সাহানা কায়েস, প্রাণিসম্পদ বিভাগের পরিচালক ড. একেএম নজরুল ইসলাম ও রেনাটা লিমিটেডের প্রাণিস্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মোঃ সিরাজুল হক। তাদের সবার কণ্ঠেই শোনা গেল ভালবাসার বন্ধনের জয়গান। এক যুগ পূর্তিতে নয় যেন যুগ যুগ ধরেই অম্লান থাকে এ ভালবাসার বন্ধন। হুসাইন মিঠু
×