ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২১ বৈশাখ ১৪৩১

হাইটেক পার্ক

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১২ মার্চ ২০১৬

হাইটেক পার্ক

হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার কথা দেশবাসী শুনছে সেই ১৯৯৯ সাল থেকে। একটু লম্বা সময় বৈকি! অবশ্য সম্প্রতি এই প্রকল্পে গতি এসেছে। মাসপাঁচেক আগে দুটি ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন এবং একটি সড়কের উদ্বোধন করা হয়। গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ৩৫৫ একর জমিতে হাইটেক পার্ক করার যে সিদ্ধান্ত হয়, তার কাজ এখন এগুবে বলে আশা করা যায়। প্রধানমন্ত্রীর দফতরে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের বোর্ড অব গবর্নরসের সভায় প্রধানমন্ত্রী সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে দেশে যেসব হাইটেক পার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে সেগুলোর বাস্তবায়নে প্রাকৃতিক পরিবেশের যেন কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। উল্লেখ্য, গাজীপুরের হাইটেক পার্ক ছাড়াও যশোরে সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক, ঢাকায় জনতা টাওয়ার সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক ও মহাখালী আইটি ভিলেজ, সিলেট ইলেকট্রনিক্স সিটি এবং রাজশাহীতে বরেন্দ্র সিলিকন সিটি স্থাপনের কাজও পাশাপাশি এগিয়ে চলছে। ১৭ বছর আগে রাজধানীর অদূরে গাজীপুরের কালিয়াকৈরে প্রথম হাইটেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়ার পর তালিবাবাদ ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র সংলগ্ন ২৩১ দশমিক ৬৮৫ একর জমি হাইটেক পার্কের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়। বর্তমানে সেখানে একটি প্রশাসনিক ভবন, সৌর বিদ্যুত ও জেনারেটর বসানো হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে আইটি পার্ক বা হাইটেক পার্ককে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বুয়েটের বিআরটিসিকে বাংলাদেশে হাইটেক পার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য একটি রিপোর্ট জমা দিতে দায়িত্ব দেয়। বিআরটিসির সংশ্লিষ্ট টিম ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া ঘুরে হাইটেক পার্কের পরিকল্পনা, অপারেশনের দিকসমূহ এবং ব্যবস্থাপনার ধ্যান-ধারণা কী হতে পারে তার ওপর একটি ধারণাপত্রও প্রদান করে। সেটাও এক যুগেরও আগের কথা। এই হাইটেক পার্ক প্রকল্প নির্মাণের জন্য সরকার আন্তর্জাতিক পর্যায়ে দাতা খুঁজতেও শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীকালে চারদলীয় জোট সরকার এক্ষেত্রে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। কেবল পরিকল্পনার কথাই শোনা গেছে। যেমন ২০০৪ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নেয় হাইটেক পার্কের কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করার। প্রকল্পটি শেষ করতে ২০০৭-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় নির্দিষ্ট করা হলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি, কখনও সময় বৃদ্ধি এসব নানা সমস্যার বেড়াজালে আটকে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সব বাধা ছিন্ন করে বর্তমানে হাইটেক পার্ক প্রকল্পটিতে নতুন গতি এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় পূর্ণাঙ্গ হাইটেক পার্ক গড়ে তোলার দায়িত্ব নিয়েছেন। হাইটেক পার্ক আমাদের অর্থনীতিতে প্রত্যাশিত গতি আনবে, এটা সন্দেহাতীতভাবেই বলা যায়। কেননা এগুলোতে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ হবে এবং রফতানিও বৃদ্ধি পাবে। অবশ্য হাইটেক পার্কগুলোতে যেসব পণ্য উৎপাদন হবে সেগুলোর চাহিদা দেশেও রয়েছে। দেশের হাইটেক পার্কগুলোতে প্রায় দশ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে এবং এ খাত থেকে পাঁচ বিলিয়ন ডলারের পণ্য রফতানি করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীও দেশের এই সম্পূর্ণ নতুন উদ্যোগ সম্পর্কে কৌতূহলী ও আশাবাদী। তবে বিশেষভাবে লক্ষণীয় হলো প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা জীববৈচিত্র্য যেন সামান্যতম সঙ্কটের সম্মুখীন না হয়।
×