ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন টাইমসে জয়ের নিবন্ধ

প্রকাশিত: ০৮:১৮, ১১ মার্চ ২০১৬

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রসঙ্গে ওয়াশিংটন টাইমসে জয়ের নিবন্ধ

যুক্তরাষ্ট্রের নামকরা দৈনিক ওয়াশিংটন টাইমস পত্রিকায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকালে গণহত্যায় জড়িতদের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত নিবন্ধটি হাজার পাঠক পড়েছেন। এতে জয় লিখেছেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল (আইসিটি) কয়েকবার দেশের বাইরের লোকদের সমালোচনার বিষয় হয়েছে। অন্যদিকে, এই অপরাধ ট্রাইব্যুনালগুলোর প্রতি দেশে ব্যাপক সমর্থন রয়েছে। খবর বাসস’র। জয় লিখেছেন, ট্রাইব্যুনালের রায়গুলো ঘোষণার পর প্রায়ই জাতীয় ছুটির মতো বিবেচিত হয়েছে। লোকজন ট্রাইব্যুনালের বিচারের সমর্থনে দেশপ্রেমের গান গেয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে এসেছে এবং শিশুদের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ করেছে। তিনি উল্লেখ করেছেন, ট্রাইব্যুনাল যুদ্ধাপরাধী ওবায়দুল হক তাহের ও আতাউর রহমান ননীর মৃত্যুদ- ঘোষণা করার পর চলতি মাসেও বাংলাদেশীরা বিচার প্রক্রিয়ার পক্ষে ব্যাপক সমর্থন ব্যক্ত করেছেন। ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে যুদ্ধাপরাধী মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে মৃত্যুদ- ঘোষণা করে রায় দেয়ার পর হাজার হাজার লোক ঢাকা মহানগরী এবং অন্যান্য নগরীতে দুইদিন ধরে রাস্তায় নেমে উল্লাস প্রকাশ করেছে। গত নবেম্বর মাসে যুদ্ধাপরাধী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর করার পর অনুরূপভাবে জনগণ সমর্থন ব্যক্ত করেছে। গতবছর সারাদেশে ঢাকা ট্রিবিউন পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে যে, ৭৯ শতাংশ জবাবদানকারী বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে চেয়েছেন। নিঃসন্দেহে, ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যাপকভাবে বিজয়ী (নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে ১৬ শতাংশের বেশি সমর্থন পেয়ে) হওয়ার অন্যতম কারণ ছিল ট্রাইব্যুনাল পুনরায় চালু করার অঙ্গীকার। তাহলে, বাংলাদেশের ভেতরে এবং দেশের বাইরে অবস্থানকারীদের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিষয়ে ভিন্নমতের কারণ কি? জয় লিখেছেন, কারণ দেশের বাইরে যারা অবস্থান করেছেন তারা কখনই ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং গণহত্যার পরিস্থিতিতে বসবাসের বিষয়টি পুরোপুরি উপলব্ধি করতে পারেন না। নির্যাতিত বা নিহত ব্যক্তির পুত্র বা কন্যা হওয়া এবং কয়েক দশক ধরে অপরাধীদের বিচার এড়িয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখার অনুভূতি কি তারা তা বুঝতে পারেন না। তিনি লিখেছেন, ন্যায় বিচারের জন্য বাংলাদেশীদের গভীর তৃষ্ণা রয়েছে। যুদ্ধের অস্ত্র হচ্ছে ধর্ষণ আর নির্যাতন। জয় লিখেছেন, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পরপরই শেখ হাসিনা এই ধারার অবসান ঘটান। তিনি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করেন যা মূলত তাঁর পিতা শেখ মুজিবুর রহমান গঠন করেছিলেন এবং ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর তাঁর রাজনৈতিক শত্রুরা বাতিল করেছিল। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মানদ- রোম স্ট্যাটিউট অনুসরণে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন। ফলে, এই বিচার প্রক্রিয়া উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ হয়েছে। সে কারণেই, সুপ্রীমকোর্ট ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদ-ের রায় পরিবর্তন করে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রদান করেছে। জয় উপসংহারে বলেছেন যে, বাংলাদেশের জনগণ যে কোন ফাঁকা বুলি সহজেই বুঝতে পারে। এই যুদ্ধাপরাধীরা কি করেছিল, তা তারা নিজ চক্ষে দেখেছে। ট্রাইব্যুনাল কতটুকু স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতার সঙ্গে পরিচালিত সেটিও তারা ঘণিষ্ঠভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। তারা ন্যায় বিচারের জন্য এই সংগ্রামে বিশ্বাসী। তাই, এসব বিচার প্রক্রিয়া বাংলাদেশে ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে এবং সে কারণেই তা চলবে এবং অব্যাহত থাকা উচিত।
×