ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করবেন প্রধানমন্ত্রী

সারাদেশে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে ১৫ মার্চ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১১ মার্চ ২০১৬

সারাদেশে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা শুরু হচ্ছে ১৫ মার্চ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবহেলা-অনাদরে থাকা মেধাবীদের খুঁজে বের করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে আগামী ১৫ মার্চ থেকে দেশব্যাপী শুরু হচ্ছে সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা। তিনটি গ্রুপে (ষষ্ঠ-অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ও সমমান) ১৫ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত এ প্রতিযোগিতা চলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের পুরস্কার প্রদান করবেন। সেরা মেধাবী ১২জন শিক্ষার্থী প্রত্যেকে এক লাখ টাকা এবং বিদেশে শিক্ষা সফরের সুযোগ পাবে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দেশের সবচেয়ে বড় এ মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার তথ্য তুলে ধরেন। এ সময় শিক্ষা সচিব সোহরাব হোসাইন, অতিরিক্ত সচিব এএস মাহমুদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। চতুর্থবারের মতো এ আয়োজন হলেও এবারের আসরের ব্যাপ্তি অনেক বেশি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়ার জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রচার চালাতেও নেয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনেক মেধাবী আছে যারা সুযোগের অভাবে মেধার বিকাশ ঘটাতে পারে না, অবহেলায় আড়ালে থেকে যায়, তাদের নিয়ে এসে উৎসাহিত করার জন্য এ আয়োজন। বিশ্বায়নের এ যুগে দেশের উন্নয়নে মেধার বিকল্প নেই। একবিংশ শতাব্দীতে মেধাবীরাই সমাজকে নেতৃত্ব দেবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা মেধাবীদের খুঁজে বের করা, তাদের লালন ও পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছে। শহর ও গ্রামে শিক্ষার বৈষম্য নিরসন এবং অবহেলা-অনাদরে বেড়ে ওঠা প্রতিভাকে খুঁজে বের করে বিকশিত করার লক্ষ্য নিয়ে এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় ২০১৩ সাল থেকে। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, নীতিমালার আলোকে প্রতিবছর তৃণমূল থেকে বিভাগীয় পর্যায় পর্যন্ত উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ‘অসাধারণ’ মেধাসম্পন্ন শিক্ষার্থী নির্বাচন করা হবে। মেধা অন্বেষণ করে তাদের জাতীয়ভাবে ‘জাতীয় মেধা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া এবং উৎসাহ প্রদানে এককালীন দেয়া হবে বিশেষ বৃত্তি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একাডেমিক কার্যক্রম যেন ব্যহত না হয় এজন্য জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসের মধ্যে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা শেষ করার কথাও আছে নীতিমালায়। শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মেধাবীদের সামনে আনার এটি একটি বড় সুযোগ। প্রতিযোগিতায় শিক্ষার্থীদের উদ্বুদ্ধ করতে আগামী ১৫ মার্চ সকাল ৯টায় ঢাকায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করা হবে। ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং সমমানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে উপজেলা পর্যায়ে ১৫, ১৬, ১৮ ও ১৯ মার্চ, জেলা পর্যায়ে ২২ মার্চ, ঢাকা মহানগরে ২৩ মার্চ, বিভাগ পর্যায়ে ২৪ মার্চ এবং জাতীয় পর্যায়ে ৩১ মার্চ এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। নতুন ময়মনসিংহ বিভাগসহ আট বিভাগে ১২ জন করে ৯৬ জন এবং ঢাকা মহানগর থেকে ১২ জনসহ মোট ১০৮ জন শিক্ষার্থী চূড়ান্তভাবে জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে। স্কুল থেকে উপজেলা পর্যায়ে লক্ষাধিক শিক্ষার্থী প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এ বছর উপজেলা/জেলা/বিভাগ/ঢাকা মহানগরসহ প্রতিযোগিতায় উত্তীর্ণ বিজয়ী শিক্ষার্থীর সংখ্যা হবে ছয় হাজার ৭২ জন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্য থেকে চারটি বিষয়ে ১২ জনকে সেরা মেধাবী নির্বাচিত করা হবে, যারা প্রত্যেকে এক লাখ টাকা করে পাবে। বাকি ৯৬ জনকে পাঁচ হাজার করে টাকা দেয়া হবে। ১২ জন সেরা মেধাবীকে সরকারী খরচে বিদেশে শিক্ষা সফরে পাঠানো হবে। ইতোমধ্যে দেশের সব উপজেলার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনটি গ্রুপে (ষষ্ঠ-অষ্টম, নবম-দশম, একাদশ-দ্বাদশ ও সমমান) নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭ ও ৮ মার্চ ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী। দরিদ্র শিক্ষার্থীদের সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, মেধা এখন আর কোন শ্রেণি বৈষম্যের বিষয় নয়, মেধা সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, যা গত কয়েকটি পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতার জাতীয় পর্যায়ের ফলাফলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ব্যাপক সাফল্য লক্ষ্য করা যায়। মেধা অন্বেষণে গত তিনটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের অধিকাংশই রাজধানীর বাইরের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর নির্বাচিত প্রতিযোগীদের নামের তালিকা শিক্ষা অফিস-ওয়েবসাইটে প্রাপ্ত নির্ধারিত আবেদনপত্র পূরণ করে ১০ মার্চ (গতকাল) সংশ্লিষ্ট উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বরাবর পাঠাতে হয়েছে। পর্যায়ক্রমে উপজেলা থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিযোগিতার প্রতি ধাপে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সব মিলিয়ে প্রায় সাত হাজার শিক্ষার্থী মেধা অন্বেষণ পুরস্কার পাবে। এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ভাষা ও সাহিত্য, বিজ্ঞান, গণিত ও কম্পিউটার এবং বাংলাদেশ স্টাডিজ ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে এ প্রতিযোগিতায় একজন শিক্ষার্থীর সর্বাধিক তিনটি বিষয়ে অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে ‘বছরের সেরা মেধাবী’ হিসেবে ১২ জনকে এক লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পর্যায়ে বিজয়ীদের পুরস্কৃত করবেন। মন্ত্রী আরও জানান, প্রতিযোগিতা সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য উপজেলা, জেলা, বিভাগ, ঢাকা মহানগর, বিভাগীয় শহর ও জাতীয় পর্যায়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীকে প্রধান উপদেষ্টা ও শিক্ষা সচিবকে সভাপতি করে ৪২ সদস্যের জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটিতে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যংকের সাবেক গবর্নর ড. ফরাস উদ্দিন, ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী, অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, ড. মুনতাসীর মামুন, অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান, অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, রাশেদা কে চৌধুরীর মতো বিশিষ্টজন। প্রাথমিক সমাপনী ও সৃজনশীল প্রশ্ন বাতিলের দাবি : চলতি বছরের মধ্যেই প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা ও প্রাথমিক স্তরে সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে রাজধানীর ভিকারুন নিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এতে বাড়তি চাপ পড়ে বলে অভিযোগ তুলেছেন তারা। বৃহস্পতিবার বেলা একটার দিকে রাজধানীর নিউ বেইলি রোডে প্রতিষ্ঠানটির মূল ক্যাম্পাসের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মানববন্ধন করেন। ‘ভিকারুননিসা নূন স্কুল এ্যান্ড কলেজের অভিভাবকবৃন্দ’ ব্যানারে ওই মানববন্ধন হয়। পঞ্চম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মা সেতু ইয়াসমিন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার কারণে তাঁদের সন্তানদের ওপরে বাড়তি চাপ পড়ে। এ ছাড়া এই পরীক্ষার সনদও কাজে আসে না। এ জন্য তাঁরা চান এই পরীক্ষা বাতিল হোক। তাসনীম মজুমদার নামে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী জানায়, অনেক পড়তে হয়। এ জন্য কষ্ট হয়। আরও কয়েকজন অভিভাবকও একই কথা বলেন। শিক্ষার্থীর মা পারভীন সুলতানা বলেন, সৃজনশীল প্রশ্নপদ্ধতিটি বাচ্চারা ভাল করে বুঝতে পারে না। ফলে কোচিং, প্রাইভেটের দ্বারস্থ হতে হয়। এ জন্য তাঁরা চান এই পদ্ধতি বাতিল হোক। ওপরের শ্রেণীতে থাকলেও শিশুদের জন্য যেন না করা হয়।
×