ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

গান নয়, ছবি নিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১০ মার্চ ২০১৬

গান নয়, ছবি নিয়ে

রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। কণ্ঠের ঝড়ে শ্রোতা হৃদয়ে আবাস গড়েছেন বহু আগেই। তাঁর লেখনী ও সুবাস ছড়িয়েছে ফেসবুকের পাতা থেকে অমর একুশে বইমেলা হয়ে অজস্র পাঠকের মন-মন্দিরে। এবার অবশ্য ভিন্ন কারণে শিরোনামে তিনি। বিস্তারিত লিখেছেন মাহবুবুর রহমান সজীব ঊনিশ, বিশ এবং একুশ মার্চ, তিনদিনই খুব কাছে পাওয়া যাবে কনকচাঁপাকে। দেখা যাবে সামনাসামনি, মুখোমুখি। প্রচুর গল্প করা যাবে, আড্ডাবাজিও। শিল্পকলা একাডেমির চার নম্বর গ্যালারি, এই হচ্ছে ঠিকানা। না, কোন স্টেজ শো নয়, বইয়ের উদ্বোধনীও নয়; আঁকাআঁকি প্রদর্শনী। কনকচাঁপা ছবিও আঁকেন! এমন অবাক হওয়ার কিছু নেই, ভ্রƒ কুঁচকিয়ে। কথায় বলে, ‘যে রাঁধে, সে চুলও বাঁধে’। বিষয়টা তাই-ই। কনকচাঁপা গান করেন, লেখালেখি করেন, আবৃত্তি করেন, ছবিও আঁকেন। বেশ আগে, বছর দুয়েক তো হবেই; কনকচাঁপা নিজের আঁকা একটি ছবি আপলোড করেন ফেসবুকে। শিরোনাম, ‘আঁকিবুকি’। সে কী আলোড়ন ভক্তদের মাঝে! তা আর বলতে.. শৈশব থেকেই ছবি আঁকার প্রতি আকর্ষণ এই কণ্ঠশ্রমিকের। কখনও সেভাবে প্রকাশ করেননি তা। সুঁই-সুতা দিয়ে কাপড়ের ওপর বিভিন্ন ধরনের ছবি এঁকেছেন প্রচুর। বললেন, ‘এবার কাগজ-কলম দিয়ে মানুষের অবয়বের ছবি আঁকলাম। ভাবছি এখন থেকে ছবি আঁকার কাজটি নিয়মিত চালিয়ে যাব। আমার আঁকা ছবি দিয়ে একটি একক চিত্র প্রদর্শনী করারও ইচ্ছে আছে। তবে ব্যবসায়িক কোন কাজে আমি ছবি আঁকছি না। একান্ত মনের আনন্দের জন্যই আমি এই আঁকাআঁকির কাজটি চালিয়ে যাব। সেই কবেকার কথা, অপেক্ষায় ছিল সবাই। কনকচাঁপার বাবা ছিলেন চিত্রকর, শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের ছাত্র। তবুও তাঁর আঁকাআঁকির শুরুটা শখের বসেই। অন্য অনেক আঁকিয়ের মতো। তবে, ‘এখন থেকে আর শখে নয়, পেশাদারি মনোভাব নিয়ে ছবি আঁকবো’; একটা সময়ে এসে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি, সময়ের পথে হাঁটতে হাঁটতে। প্রদর্শনীর জন্য ৪০-৪৫টা ছবিও রেখেছেন। সেগুলোই হয়তো দেখা হয়ে যেতে পারে ভক্তদের, কিংবা অন্য অনেক ছবি। কম তো আর আঁকেননি এতদিনে! প্রদর্শনীটির নির্ধারিত সময় যখন দরজায় কড়া নাড়বে, আবারও ভক্তদের জানিয়ে দেবেন তিনি। হয়তো দিনক্ষণও পাল্টে যেতে পারে। নিশ্চিত না এখনও। যদি তা হয়, সেটাও জানাবেন। কনকচাঁপা যখন এলেন আমাদের কনকচাঁপা হয়ে, তখন বিটিভির যুগ। সময়টা ১৯৮২। ?‘এলোমেলো চুল আর ললাটের ভাঁজ, কেন যে মনে পড়ে এই অসময়’ গানটি কি মনে পড়ে? সেই যে বিটিভির ‘অন্তরঙ্গ’ অনুষ্ঠানে গেয়েছিলেন তিনি! লিখেছেন সেজান মাহমুদ। সুরারোপ মইনুল ইসলাম খানের। সেই সুরের প্রেমে পড়েছিলেন কনকচাঁপা। কালক্ষেপণ না করে প্রেম গড়াল সুরকারের দিকেও। বছর দুয়েক যেতে না যেতেই বিয়ে! দিনটা ছিল ৬ ডিসেম্বর, ১৯৮৪। সেই থেকে আজও আছেন একসঙ্গে, নিরবচ্ছিন্নভাবে। ও হ্যাঁ, প্রথম গানটি প্রচারের ঠিক পরদিনই ঘটে গেল বিশাল ঘটনা। সঙ্গীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী ডেকে পাঠালেন কনকচাঁপাকে। চলচ্চিত্রের জন্য গাইতে হবে নাকি তাঁকে! বুকে সাহস চেপে শুরু করলেন যাত্রা। সে সাহস আজ অবধি আছে। গাইছেন এখনও চলচ্চিত্রে; একটু কম কম, বেছে বেছে। গান যেমন নিয়মিতই চর্চা করেন, লেখালেখিও তেমনই। লিখতে পছন্দ করেন কনকচাঁপা, খুব বেশি। প্রিয় হয়ে যাওয়া হারমোনিয়ামের মতো, কাগজ-কলমও খুব প্রিয় তাঁর। টুকিটাকি লেখার অভ্যাস ছোটবেলা থেকেই, ডায়েরির বুকে। নিজস্ব চিন্তা, দর্শন, আনন্দ, দুঃখ, ভাল লাগা, মন্দ লাগা- সবই তিনি লিখে রাখতেন। আজও লেখেন তিনি। কাগজ-কলমে তো বটেই, ফেসবুকের বুকে এমনকি পত্রিকার পাতায়ও। ‘স্থবির যাযাবর’, কনকচাঁপার প্রথম বই। বেরিয়েছে ২০১০-এ, অমর একুশে গ্রন্থমেলায়। তাঁর ভাষায়, ‘এটি আমার কিশোরবেলার আত্মকথন।’ শিল্পী হতে হলে কতটা সংগ্রাম ও ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, কী পরিমাণ নিষ্ঠার প্রয়োজন পড়ে- এসব বলে দেয়া আছে বইটিতে, গড়গড় করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন মেলায় এসেছে তিন হাজারেরও অধিক গানে কণ্ঠ দেয়া এই কণ্ঠ শ্রমিকের আরও কিছু নতুন বই। সে বইয়ের গন্ধে, আবেশে জড়িয়ে গেছে অজস্র ভক্তকুল; যেমন জড়িয়েছে তাঁর গানে.. পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি অনেক, এক জীবনে। শুধু জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারই হাতে উঠেছে চারবার।
×