ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বরাবরের মতোই আজও হরতাল ডেকেছে জামায়াত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৯ মার্চ ২০১৬

বরাবরের মতোই আজও হরতাল ডেকেছে জামায়াত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায়ে যুদ্ধাপরাধী মীর কাশেম আলীর ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার প্রতিবাদে আজও সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে জামায়াত। মঙ্গলবার সকালে দলগতভাবে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত এ দলটির কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ ও আলবদর নেতা কাশেম আলীর রায়ের পর পরই গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে হরতালের ডাক দেয়া হয়েছে। এদিকে রায়ের পর জামায়াত-শিবির রাজধানীর মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে। ঝটিকা মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। যুদ্ধাপরাধীদের জন্য জামায়াতের হরতালে সারাদেশে জনজীবনে কোন প্রভাব না পড়লেও একই কর্মসূচী দিয়ে যাচ্ছিল কিছুদিন ধরেই। এবারের রায়েও তার ব্যতিক্রম হয়নি। মঙ্গলবার আদালতের রায়ের পরই এর প্রতিবাদে দেশব্যাপী হরতালের ডাক দিয়েছে দলটি। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ এক বিবৃতিতে এ হরতালের ডাক দেন। মকবুল আহমাদের দাবি, সরকার ষড়যন্ত্র করে পরিকল্পিতভাবে জামায়াত নেতৃবৃন্দকে একের পর এক হত্যা করছে। সরকারী ষড়যন্ত্রের শিকার মীর কাশেম আলী। সরকার মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে মীর কাশেম আলীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে নিজেদের দলীয় লোকদের দ্বারা আদালতে মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়ানোর মাধ্যমে তাকে দুনিয়া থেকে বিদায় করার ষড়যন্ত্র করছে। জামায়াত নেতা বিবৃতিতে আদালতের অবস্থানের সমালোচনা করে বলেছেন, আদালত সরকারের দায়ের করা মিথ্যা মামলায় সাজানো সাক্ষীর ভিত্তিতে আজ মঙ্গলবার তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদ-ের যে রায় ঘোষণা করেছেন তা একটি ন্যায়ভ্রষ্ট রায়। এ রায়ে মীর কাশেম আলী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে তিনি রিভিউ আবেদন করবেন। এদিকে রায় ঘোষণার পর জামায়াত-শিবির রাজধানীর মগবাজারসহ আশপাশের এলাকায় ঝটিকা মিছিল করেছে। ঝটিকা মিছিলকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টাধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ, পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পুলিশ দুজনকে আটক করেছে। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী, মৌচাক ও মগবাজারের বিভিন্ন গলি থেকে বেরিয়ে সিদ্ধেশ্বরী সুধী সমাজ গলিতে আচমকা ঝটিকা শুরু করে। মিছিলকারীরা মৌচাকসহ আশপাশের এলাকার রাস্তায় যানবাহন ভাংচুরের চেষ্টা করে। পুলিশ বাঁধা দিলে জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে ধাওয়া করে। এরপর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করলে মিছিলকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। রাবার বুলেটবিদ্ধ হয়ে সুমন নামে একজন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়। পুলিশ তাকেসহ দুজনকে আটক করে। সুমনের তথ্যমতে ইসলামী ব্যাংক কাকরাইল শাখা থেকে আরও একজনকে আটক করে পুলিশ। রমনা মডেল থানার ওসি মশিউর রহমান জানান, এ ব্যাপারে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। মৃত্যুদ- বহাল রাখায় নায়ায়ণগঞ্জেও জামায়াত ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল করার চেষ্টা করেছে। বন্দর থানার মদনপুর হাইওয়ের সড়কে এ বিক্ষোভ মিছিল করে দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় মোঃ সাইদুর রহমান (৫০) নামে এক জামায়াত নেতাকে আটক করে পুলিশ। আটক জামায়াত নেতা সাইদুর বন্দর বকুল দাসেরবাগ তৈয়ব উদ্দিনের ছেলে। তিনি জামায়াতের রোকন, বর্তমানে কুমিল্লা চান্দিনা ইসলামিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হিসেবে কর্মরত। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকতা (ওসি) আবুল কালাম জানান, জামায়াত নেতা মীর কাশেম আলীর রায় কেন্দ্র করে জামায়াতের ২০/২৫ নেতাকর্মী মদনপুর হাইওয়ের সড়কে ঝটিকা মিছিল করার সময় মোঃ সাইদুর রহমানকে আটক করা হয়েছে। হরতালেও চলবে অনার্স ও এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা ॥ জামায়াতের হরতালেও অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৪ সালের অনার্স (নিয়মিত, অনিয়মিত ও গ্রেড উন্নয়ন) তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা। মঙ্গলবার বিকেলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। কর্মকর্তারা বলেছেন, যেহেতু এখন দেশের কোথাও হরতাল কার্যকর হয় না সেহেতু পরীক্ষা বন্ধ করার কোন কারণ নেই। গত ৫ মার্চ এক বিজ্ঞপ্তিতে ৮ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য পরীক্ষা অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছিল। তখন এ পরীক্ষা ৯ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। এখন পূর্ব ঘোষণা অনুসারে বুধবার নির্দিষ্ট পরীক্ষাগুলো অনুষ্ঠিত হবে। এদিকে হরতালেও পূর্ব ঘোষণা অনুসারে আজ অনুষ্ঠিত হবে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ব্যবহারিক পরীক্ষা। যেহেতু ব্যবহারিক পরীক্ষা সারাদেশে একই দিনে নয় তাই হরতালে কোন প্রভাব পড়বে না বলে মনে করছেন কর্মকর্তারা। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ বলেছেন, ব্যবহারিক পরীক্ষা একেক প্রতিষ্ঠান একেক সময় নেয়ার সুযোগ পায়। এটা সুবিধা মতো সময় নেয়ার সুযোগ আছে। ফলে খুব কম প্রতিষ্ঠানেই এক সঙ্গে পরীক্ষা চলে। হরতালে পরীক্ষায় কোন প্রভাব পড়বে না।
×