ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২ মার্চ ২০১৬

শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে ভারত

মিথুন আশরাফ ॥ এবার যে কী দল নিয়ে বাংলাদেশে খেলতে এসেছে শ্রীলঙ্কা, ব্যাটিং দুর্ভিক্ষ কাটছেই না। আর সেই দুর্ভিক্ষে নিয়তিতে বারবার হারই লেখা হচ্ছে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে জিতেছে। এরপর বাংলাদেশের কাছে হারের পর মঙ্গলবার ভারতের কাছে ৫ উইকেটে হেরে একরকম এশিয়া কাপ থেকে বিদায়ই ঘটেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কার। শ্রীলঙ্কাকে অনায়াসে হারিয়ে সবার আগে টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করে নিয়েছে টি২০র এক নম্বর দল মহেন্দ্র সিং ধোনির ভারত। টানা তিন ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে দলটি। প্রথম দুই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে এতটাই খারাপ করেছে দলটি, ১৩০ রানও করতে পারেনি। এবার ভারতের বিপক্ষেও সেই সম্ভাবনা জেগেছিল। তবে শেষপর্যন্ত কাপুগেদারার ৩০, শ্রীবর্ধেনের ২২, থিসারার ১৭ ও কুলাসেকারার ১৩ রানে ২০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৩৮ রান করে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু ভারতের মতো শক্তিশালী দলের সামনে কী আর এ রান কোন বিষয়। বিরাট কোহলি (৫৬*) ও যুবরাজ সিংয়ের (৩৫) ব্যাটিং দ্যুতিতে ৫ উইকেট হারিয়ে ১৯.২ ওভারে ১৪২ রান করে সহজ জয় পেয়ে যায় ভারত। সেই সঙ্গে ২০১৪ সালে মিরপুরে দুই দলের প্রথম সাক্ষাতে টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে যে শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে শিরোপা স্বপ্ন ধুলিসাৎ হয়েছিল ভারতের, এবার লঙ্কানদের হারিয়ে যেন সেই হারের প্রতিশোধ নিয়ে ফেলে। ১৬ রানের মধ্যেই শিখর ধাওয়ান (১) ও রোহিত শর্মাকে (১৫) আউট করা গেলেও সুরেশ রায়নার (২৫) উইকেটটি তুলে নিতে ৭০ রান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয় শ্রীলঙ্কাকে। এরপর যে কোহলি ও যুবরাজ মিলে উইকেট আঁকড়ে থাকেন, দুইজন মিলে ৫১ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচে বিপর্যয় সামাল দেন কোহলি। তার সঙ্গে যুবরাজ মিলে ম্যাচই জিতিয়ে দেন। এদিনও একই কাজ করলেন এ দুই ব্যাটসম্যান। টি২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে স্লো খেলায় যুবরাজের ওপরই হারের তীর ছোড়া হয়েছিল। এদিন যেন যুবরাজ সেই স্মৃতি মনে রেখে জিদের খেলা খেলেন। ম্যাচ জিততে ২০ বলে ১৭ রান লাগত, এমন সময়ে যুবরাজ আউট হয়ে যান। তবে আউট হওয়ার আগে ১৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৫ রান করে ফেলেন। ১৪ বলে জিততে যখন ১৪ রানের প্রয়োজন থাকে, তখন পা-েও (২) সাজঘরে ফেরেন। তখন খানিকটা শুরুর মতো উত্তেজনা তৈরি হয়। কিন্তু এরপরও সবারই বোঝা হয়ে যায়, শেষপর্যন্ত জিতবে ভারতই। কোহলির সঙ্গে যে ধোনি যোগ দেন। ১২ বলে যখন ১৪ রানের প্রয়োজন থাকে, ধোনি ছক্কা হাঁকান, কোহলি হাঁকান চার। তাতে করে ৬ বলে জিততে লাগে ১ রান। ৫২ রানে থাকা কোহলি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে অপরাজিত ৫৬ রান করে ম্যাচই জিতিয়ে দেন। পাকিস্তানের পর শ্রীলঙ্কাকেও হারান কোহলিই। ধোনি ৭ রানে থাকেন অপরাজিত। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাংলাদেশের বিপক্ষে দুই ম্যাচেই ওপেনার দিনেশ চান্দিমাল ছিলেন শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রান নেয়া ব্যাটসম্যান। অথচ ভারতের বিপক্ষে শুরুতেই কাত। ৬ রানে চান্দিমালের (৪) আউটের পর ১৫ রানে শিহান জয়াসুরিয়াও (৩) সাজঘরে ফেরেন। দুইজনই ভারতের পেস আক্রমণের সামনে মাথা নত করে দেন। উইকেটের পেছনে থাকা ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির তালুবন্দী হন। শ্রীলঙ্কাও শুরুতেই বিপাকে পড়ে যায়। সেখান থেকে লঙ্কানদের বাঁচানোর চেষ্টা করেন তিলকারতেœ দিলশান। তার সঙ্গে চামারা কাপুগেদারা যোগ দেন। কিন্তু শুরুতে মাজা ভেঙ্গে দেয়া ব্যাটিং কী আর মাজা সোজা করে দাঁড়াতে পারে! ৩১ রান পর্যন্ত নিজেকে উইকেটে টিকিয়ে রাখতে পারেন দিলশান। ব্যক্তিগত স্কোরবোর্ডে ১৮ রান যোগ হতেই পা-ের করা প্রথম বলে ফাইন লেগে অশ্বিনের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে মাঠ ছাড়েন এশিয়া কাপে ব্যর্থতাই সঙ্গী হওয়া দিলশান। শ্রীলঙ্কার ইনিংসে যেন দুর্ভিক্ষ হানা দেয়। আশা তখন একজনকে নিয়ে থাকে। তিনি শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক এ্যাঞ্জলো ম্যাথুস। যিনি ভেঙ্গে পড়া ইনিংসকে মেরামতের সঙ্গে ম্যাচ জেতাতেও পটু। কিন্তু সেই পটু গত দুই ম্যাচে যেমন ব্যর্থ ছিলেন, এবারও ব্যর্থতাই বজায় রাখলেন। দল ৫৭ রানে পা রাখতেই পা-ের বলে বোল্ড হয়ে হয়ে গেলেন ম্যাথুস (১৮)। দলকে আশা দেখাবেন কী উল্টো হতাশায় ডুবিয়ে গেলেন। পাওয়ার প্লেতে ৩১ রান যোগ করে পরের ৪ ওভারে মাত্র ১৬ রান যোগ করতে পারে শ্রীলঙ্কা। তাতেই বোঝা যাচ্ছে কতটা করুণ অবস্থা হয় দলটির। শুরুতে পেসারদের তোপ পরে স্পিনারদের জন্যও সুবিধা করে দেয়। রানই তুলতে পারে না শ্রীলঙ্কা। আউট হওয়ার ভয় যে ঢুকে যায়। তবে ম্যাথুসের আউটের পর শ্রীবর্ধেনে ব্যাট করতে নেমে ধুমধারাক্কা ব্যাটিং করে খানিক চাঙ্গা করে তোলেন। ১৩তম ওভারে জাদেজার টানা দুই বলে ‘ছক্কা-চার’ হাঁকান শ্রীবর্ধেনে। এরপর থেকে যেন খানিক প্রাণও ফিরে শ্রীলঙ্কার ইনিংসে। ঝিমিয়ে থাকা কাপুগেদারাও যেন জ্বলে উঠেন। ১০ ওভারে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ৪৭ রান ছিল। সেখানে কাপুগেদারা ও শ্রীবর্ধেনে মিলে ১৫ ওভারে দলকে ৯১ রানে নিয়ে যান। ১৬ ওভারে গিয়ে দলটি ১০০ রান স্কোরবোর্ডে জমা করে। ৬ ওভারেই ৫৩ রান যোগ হয়ে যায়। মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন কাপুগেদারা ও শ্রীবর্ধেনে। মনে হচ্ছিল, বিপদ বুঝি কেটেই গেল। কিন্তু ১৭ ওভারেই সব ধ্বংস হয়ে যায়। এতটাই মারমুখী হয়ে খেলতে থাকেন শ্রীবর্ধেনে, অশ্বিনের বলটি আকাশে উড়িয়ে মারেন। লং অনে সহজভাবে ক্যাচ ধরে ফেলেন রায়না। বিপদের সময় হাল ধরে ১৭ বলে ২২ রান করে আউট হন শ্রীবর্ধেনে। একইওভারে শানাকাও (১) রান আউট হয়ে যান। উইকেট যাওয়া ততক্ষণে বিষয় ছিল না। বিষয় ছিল রান যত বেশি তোলা যায়। তা করতে গিয়ে বুমরাহর বলে কাপুগেদারাও (৩০) আউট হয়ে যান। থিসারা পেরেরা শেষে হঠাৎ করেই ঝলক দেখাতে শুরু করেন। মুহূর্তেই ১০৫ থেকে শ্রীলঙ্কার স্কোরবোর্ডে ১২৫ রান যোগ হয়ে যায়। এমন সময়ে এগিয়ে গিয়ে অশ্বিনের বলে মারতে গিয়ে স্ট্যাম্পিং হয়ে যান থিসারা। তবে ৬ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় ১৭ রান করে শ্রীলঙ্কার স্কোরকে অনেকদূর এগিয়ে নেয়া থিসারা যে স্ট্যাম্পিং হননি, তা টিভি রিপ্লেতে স্পষ্ট বোঝা যায়। ধোনি স্ট্যাম্পে বল লাগানোর আগেই ক্রিজে ব্যাট ছোঁয়ান থিসারা। যে দলটিতে মনে করা হচ্ছিল, ১০০ রানও করতে পারবে না, তারা শেষ পর্যন্ত ১৩৮ রান করে। কুলাসেকারা শেষ ওভারে টানা দুই বলে ২ চার হাঁকান। তাতে করেই রান ১৩০-এর উপরে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত শেষ বলে ২ রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে যান কুলাসেকারা (১৩)। চামিরা ২ রানে থাকেন অপরাজিত। বুমরাহ, পা-ে ও অশ্বিন ২টি করে উইকেট নেন। ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি টস জিতে বলেন, ‘গত ম্যাচের চেয়ে পিচে ঘাস কম। ব্যাটসম্যানদের জন্য ভাল উইকেট।’ শ্রীলঙ্কা অধিনায়ক এ্যাঞ্জলো ম্যাথুস বললেন, ‘গত ম্যাচের চেয়ে ঘাস বেশি। আগে বল করতে চেয়েছিলাম। যেভাবেই হোক জেতার চেষ্টা করব।’ দুই দলই গত ম্যাচে ভিন্ন দুই দলের বিপক্ষে খেলেছে। ভারত খেলেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে। যেখানে পিচে ঘাস কমই ছিল। ম্যাচও জিতে নিয়েছে ভারত। যে জন্য শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচটি ভারতের জন্য জিতলেই ফাইনাল নিশ্চিত করে ফেলার ম্যাচ হয়ে ওঠে। আর গত ম্যাচটি বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে শ্রীলঙ্কা। ম্যাচটিতে ঘাসের আধিক্য ছিল না। তাতে করে শ্রীলঙ্কাও ম্যাচটি হেরে যায়। এমন অবস্থাতে পড়ে দলটি, ভারতের বিপক্ষে হার মানেই হচ্ছে বিদায়! কাগজে-কলমে এখনও শ্রীলঙ্কার ফাইনালে খেলার ক্ষীণ আশা হলেও আছে। তবে রানরেটের যে চেহারা, তাতে বাংলাদেশের বিপক্ষে পাকিস্তান জিতলে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে শ্রীলঙ্কা জিতলে সমান ৪ পয়েন্ট করে তিন দলের হলেও রানরেটে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান থেকে পিছিয়েই পড়বে লঙ্কানরা। এমন ম্যাচে ভাল স্কোরও করে শ্রীলঙ্কা। ভাল বোলিং করতে পারলে জেতাও সম্ভব ছিল। তবে শ্রীলঙ্কার আফসোস থাকতেই পারে, যদি ম্যাচটিতে খেলতেন লাসিথ মালিঙ্গা! ব্যাটিং দুর্ভিক্ষের পর বোলিং দিয়ে কিছু করা যেতে পারত! মালিঙ্গাও খেললেন না, বোলিংয়েও ধার দেখাতে পারল না শ্রীলঙ্কা। তাতে করে ম্যাচ জিতে ভারত ফাইনালে উঠে গেল। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে যদি বাংলাদেশ জিতে যায়, তাহলে ভারতের বিপক্ষে ৬ মার্চ ফাইনালে খেলবে বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে আরেকটি অর্জনও যোগ করেছে ভারত। প্রথমবারের মতো টি২০ ফরমেটে হওয়া এশিয়া কাপে প্রথম দল হিসেবে ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করেছে ভারত।
×