ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্রেফ গুজব ॥ হানিফ

বিএনপি কাউন্সিল ॥ আওয়ামী লীগের সহায়তা চাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি

প্রকাশিত: ০৫:১০, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

 বিএনপি কাউন্সিল ॥ আওয়ামী লীগের সহায়তা চাওয়া নিয়ে বিভ্রান্তি  সৃষ্টি

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সহযোগিতা চায় বিএনপি। এজন্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে বিএনপির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে। সৈয়দ আশরাফের সম্মতি পেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। এছাড়া বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের কোন সিনিয়র নেতাকে যেন উপস্থিত রাখা যায় সে চেষ্টাও দলের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে। জানা যায়, এখন পর্যন্ত ভেন্যু না পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল নিয়ে অনিশ্চয়তা না কাটায় দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার নির্দেশে দলের কয়েকজন নেতা গোপনে আওয়ামী লীগের সহযোগিতা পাওয়ার চেষ্টা শুরু করে। এরই অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক আছে এমন দুইজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়। জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে ইতোমধ্যেই বিএনপির পক্ষে সহযোগিতা চাওয়ার জন্য ওই দুজন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন বলে জানা গেছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে এখনও জানানো হয়নি তারা জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী ধরনের সহযোগিতা চান। এমনকি এ ধরনের চেষ্টা চলছে তাও দলের নেতারা বলতে চাচ্ছেন না। বিএনপির সম্মেলন নিয়ে সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি নাকচ করে দিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। তাদের দাবিÑ এটি স্রেফ গুজব এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করতে বিএনপির একটি রাজনৈতিক অপকৌশল মাত্র। বাস্তবে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে বিএনপি এখন নানাভাবে সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভ্রান্ত ছড়াচ্ছে। এ যোগাযোগের দাবিটিও সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ। আসলে বিএনপি নিজেরই দলের কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করার প্রস্তুতি নেই। এই ব্যর্থতা ঢাকতেই সরকারের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ তার প্রতিক্রিয়ায় জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির রাজনীতি নিয়ে আওয়ামী লীগের কোন মাথাব্যথা নেই। তারা তো প্রতিদিনই সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছে, কোথাও তো অসুবিধা হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি নিয়ে তারা তো কাউন্সিল করতেই পারে। সরকার বাধা দেবে কেন? তিনি আরও বলেন, বিএনপির আসল উদ্দেশ্যেই হচ্ছে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে আওয়ামী লীগের ওপর দায় চাপিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা। এটা বিএনপির নষ্ট রাজনীতির আরেক প্রমাণ। বাস্তবে কাউন্সিল করার কোন প্রস্তুতিই বিএনপির নেই। কাউন্সিল করতে নিজেরাই প্রস্তুত নয়। দলটির কাউন্সিল করতে ভেন্যুই ঠিক করেনি, অথচ বলছে তাদের ৩ হাজার কাউন্সিলর-ডেলিগেটর ঠিক হয়ে গেছে! আসলে নিজেদের ব্যর্থতা ও জনবিচ্ছিন্নতা ঢাকতেই ‘সরকার বাধা দিচ্ছে’ এমন মিথ্যাচার করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চাইছে। তবে এসব করে জনগণকে বিভ্রান্ত করা আগেও যায়নি, আগামীতেও যাবে না। সূত্রমতে, সৈয়দ আশরাফের সম্মতি পেলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার সঙ্গে সাক্ষাত করে জাতীয় কাউন্সিলের ভেন্যু পাওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে সহযোগিতা চাইবেন। এজন্য বিএনপির পক্ষ থেকে কয়েকজন সিনিয়র নেতাকে জাতীয় কাউন্সিলে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রসঙ্গত ২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলের মঞ্চে আওয়ামী লীগের ২ জন কেন্দ্রীয় নেতা উপস্থিত ছিলেন এবং তারা বক্তব্যও রাখেন। এভাবে বিরোধী দলের জাতীয় কাউন্সিলে সরকারী দলের নেতাদের উপস্থিতি দেশের রাজনীতিতে ইতিবাচক লক্ষণ বলে আখ্যায়িত করে তখন বিভিন্ন মহল থেকে এ ধরনের ঘটনার প্রশংসা করা হয়েছিল। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। তাদের সম্পর্ক অনেক পুরনো। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সময় ঢাকা কলেজে অধ্যাপনা করতেন। তখন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ওই কলেজের ছাত্র ছিলেন। রাজনীতিতে আসার পরও এই নেতার সঙ্গে নিয়মিত না হলেও অনিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে চরম বৈরী সম্পর্ক বিরাজ করে তখন জাতিসংঘের বিশেষ দূত তারানকোর সঙ্গে এ দুটি রাজনৈতিক দলের সংলাপ হয় সৈয়দ আশরাফ ও মির্জা ফখরুলের মধ্যস্থতায়। তাই এবারও এই দুই নেতার মাধ্যমে সমঝোতা করে বিএনপির জাতীয় কাউন্সিলটি সফলভাবে সম্পন্ন করা যায় কিনা, দলীয় হাইকমান্ড সে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা যায়। এদিকে সরকারী দলের সহযোগিতা পেলে এবার জাতীয় কাউন্সিলের কাজ শেষ করে ফেলতে চায় বিএনপি। গণপূর্ত অধিদফতর থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিএনপিকে জাতীয় কাউন্সিল করার অনুমতি দেয়া হলেও এখনও পুলিশের অনুমতি মেলেনি। যদিও ডিএমপিতে অনুমতির জন্য অনেক আগেই আবেদন করে রেখেছে বিএনপি। তবে সরকারী দলের সহযোগিতা পেলে পুলিশের অনুমতির পাশাপাশি ঘরোয়া পরিবেশে জাতীয় কাউন্সিলের কর্ম অধিবেশন করার জন্য ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনটিও নেবে বিএনপি। কারণ কর্ম অধিবেশনটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মতো খোলা জায়গায় করলে জাতীয় কাউন্সিলের গোপনীয়তা থাকবে না।
×