ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাঁর নাম বদলে হয়ে যায় চোঙ্গা তবি

প্রকাশিত: ০৩:৪৯, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

তাঁর নাম বদলে হয়ে যায় চোঙ্গা তবি

রংপুরে ভাষা আন্দোলনের মূল বিরোধিতাকারী ছিলেন কারমাইকেল কলেজের তৎকালীন অধ্যক্ষ শাহাব উদ্দিন। তিনি ছিলেন উর্দুভাষী। মাথায় ফেল্ট ক্যাপ পরতেন। সার্বক্ষণিক মুখে ছিল পাইপ। ভাল ইংরেজী বলতেন। ছাত্রদের মিছিল সভা সমাবেশ করতে দিতেন না। ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত কোথাও কোন পোস্টার কিংবা দেয়াল লিখন দেখলেই পিয়নদের হুকুম দিয়ে ছিঁড়ে-মুছে ফেলাতেন। এমনকি ভাষা আন্দোলন করার অভিযোগে কলেজের দুই অধ্যাপককে গ্রেফতার করান তিনি। একজনের নামে জারি করান গ্রেফতারি পরোয়ানা। এছাড়া তিনি ক’জন ছাত্রকে কলেজ থেকে বহিষ্কারের আদেশ দিয়ে নোটিশ দেন এবং কারও কারও জরিমানাও করেন। এ বিষয়টি তিনি জানিয়েও দিতেন অভিভাবকদের। রংপুরে মহান ভাষা আন্দোলনের বিরোধিতাকারীর এসব তথ্য পাওয়া যায় বিশিষ্ট ভাষাসৈনিক, শিক্ষাবিদ ও আইনজীবী মরহুম অধ্যাপক নুরুল ইসলামের লেখা নিবন্ধ থেকে। ২১ ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় ছাত্র মিছিলের ওপর গুলি বর্ষণের খবর রংপুরে সন্ধ্যার দিকে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ প্রতিবাদে এবং রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে রাতেই মিছিল নিয়ে শহর প্রদক্ষিণ করে। পুলিশের অবিরাম লাঠিচার্জে মিছিল ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। ভাষাসৈনিক শাহ তবিবর রহমান প্রধান জানান ভাষা আন্দোলনের আরও অজানা কাহিনী। শাহ তোফাজ্জল তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। তিনি ছিলেন ভাষা আন্দোলন কমিটির সদস্য। ৫২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ‘কমিটি অব এ্যাকশন’ থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে তাকেসহ অনেককেই পাঠিয়ে দেয়া হয় রংপুর। তিনিসহ সাবেক মন্ত্রী রংপুরের মরহুম মতিউর রহমান, এ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান, ইয়াকুব আলী, মাহফুজ আলী, কাজী মুহাম্মদ এহিয়া, মণি কৃষ্ণ সেন, শংকর বসু, শাহ আবদুল বারী, ধীরেন ভট্টাচার্য, জীতেন্দ্রনাথ দত্ত, ইদ্রিস লোহানী, সুফী মোতাহার হোসেন, শাহ আবদুর রাজ্জাক, মীর আনিছুল হক পেয়ারা, কছিম উদ্দিন. আমজাদ হোসেন, আজমল হোসেন, আবুল হোসেন, ডা. মোজাহার উদ্দিন, ডা. আবতাব উদ্দীন তালুকদার, ভিখু চৌধুরী, শাহ আবদুল বারী, এ্যাডভোকেট নুরুল হক, দবির উদ্দিন আহম্মদ, খয়রাত হোসেন, নাজিম খন্দকার, আফজাল, আজিজার রহমান, নাজমুল আলম চৌধুরী হেবিন, মতিয়ার রহমান, আজিজুল হক সেলিম, আবদুস সোবহান, কৃষক নেতা দরাজ আলী ম-ল ও শাহ তবিবর রহমান প্রধান তখন রংপুরের আন্দোলনে পুরোধা হিসেবে কাজ করেছেন। রংপুরে তখন মাইক পাওয়া যেত না। দোকান ছিল মাত্র দুটো। যে কারণে চোঙ্গা ফুঁকতেন তিনি। এজন্য সবাই তাকে ‘চোঙ্গা ম্যান’ বা ‘চোঙ্গা তবি’ বলে ডেকেছে। হাতের লেখা ভাল থাকার কারণে পোস্টারও লিখতেন তিনি। তখন দলবদ্ধ হয়ে আড্ডা ও পোস্টার লিখতেন বর্তমান জি.এল.রায় রোডস্থ খ্রীস্টানদের কবরস্থানে। এ তথ্যও জেনে যায় পুলিশ। এজন্য প্রায়ই সেখানে হানা দিত তারা। এছাড়া রংপুরের ভাষাসৈনিকরা নিয়মিত ওঠাবসা করতেন নগরীর বর্তমান পায়রা চত্বরের পাশে বর্তমান লুক টেইলার্স ও সাবেক পাকিস্তান বুক হাউসে। সেটি ছিল আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হোসেনের অফিস। তৎকালীন আওয়ামী লীগ সভাপতি ভাষাসৈনিক ডা. মোজাহার উদ্দিনের সিটি ফার্মেসিতে। সংগঠক আফজাল জানান, সে সময় তারা মিছিল সভা সমাবেশ করে ক্লান্ত দেহে ফিরে যেতেন নুরপুরে হেবিন চৌধুরীর বাসায়। সেখানে হেবিন চৌধুরীর মাকে তারা মা ডাকতেন। তিনি ভাষাসৈনিকদের নিজ হাতে চা বানিয়ে খাওয়াতেন। হেবিন চৌধুরীর দু’বোন ডলি এবং ডজি তারাও নিয়মিত মিছিলে যেতেন। রংপুরে ভাষা আন্দোলনে আরও যারা সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন, তারা হলেন, লে. কর্নেল জাহিদুল হক চৌধুরী, শামসুল হুদা (আবু), নজরুল ইসলাম এ্যাডভোকেট, সিদ্দিক হোসেন, ডা. রোকেয়া আলমগীর রুবি, কমরেড বিনয় সেন, মজিবর রহমান মতি মিয়া, ডা. শোভান খান, ডা. দীনেশ চন্দ্র ভৌমিক (মন্টু ডাক্তার), মকবুল হোসেন, কানু ঘোষ, আফান উল্লাহ, মোসলেম আলী খান, ইব্রাহিম খান সুরুজ, ডা. কবির খান বখতিয়ারি, এ্যাডভোকেট গাজী রহমান, কামরান শাহ আবদুল আউয়াল, অধ্যাপক রেজা শাহ তৌফিকুর রহমান, এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম, তোজাম্মেল আলী, এ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী আশরাফ হোসেন বড়দা, তনসিম উদ্দিন আহমেদ মনু ও পানার উদ্দিনসহ নাম না জানা আরও অনেকে। Ñমানিক সরকার মানিক রংপুর থেকে
×