ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শ্বেত মর্মরিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শ্বেত মর্মরিত ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল

বাঙালী মাত্রই একটা প্রবাদ প্রচলিত রয়েছে যে, বাঙালী মানেই ঘরকুনো। বাঙালীÑ বিশেষ করে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত বাঙালী এক আটপৌরে ঘরোয়া জীবন কাটাতেই যুগ যুগ ধরে ভালবেসে আসছিল। কিন্তু চিরায়ত এই প্রচলন ভেঙে গত প্রায় কুড়ি-পঁচিশ বছর ধরে বাঙালীও যে ঘর ছেড়ে দুনিয়া দর্শনে বেরিয়ে পড়ে তার এন্তার উদাহরণÑ যেমন ইদানীং পাওয়া যায়। তেমনি সম্প্রতি ভারতের পশ্চিমবাংলার কয়েকটি ঐতিহাসিক দর্শনীয় স্থানে বেড়াতে গিয়ে সেটি যেন আরও নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। বিশেষ করে কলকাতা শহরের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থানে যেমন বাংলাদেশের বাঙালীর সাক্ষাত ঘটেছে। একইভাবে পাহাড়ী ও ঐতিহাসিক স্থান, সিমলা শহর এবং পার্বতাঞ্চলেও পেয়ে গেছি একাধিক বাঙালী পরিবার যারা এসেছেন স্রেফ ভ্রমণে। তাদের সঙ্গে আলাপ পরিচয়ে জেনেছি যেÑ এক জায়গায় থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছি। তাই পশ্চিম বাংলা তথা কলকাতা শহরে বেড়াতে এসেছি। তারা জানিয়েছেন, ভারতের প্রাচীন এবং ঐতিহ্যম-িত শহর এবং এর চারপাশে যে ঐতিহাসিক নিদর্শন রয়েছে তা এতদিন গল্পে উপন্যাসে পড়ে এবং সিনেমা-সিরিয়ালে দেখে দেখে ভাললাগার একটা সুন্দর সংযোগ তৈরি হয়ে গেছে। তাছাড়া কলকাতায় অনেক পরিচিত জন রয়েছে। যারা একসময় বাংলাদেশের অধিবাসী ছিলেন। পুরনো সেই টান এবং বেড়ানো-দু’টোকে উপলক্ষ করে এই বেরিয়ে পড়া। শুধু কি কলকাতা? ভারতের আগ্রার জগদ্বিখ্যাত তাজমহল, ফতেপুর সিক্রি, কুতুবমিনার, লালকেল্লাসহ মোগল স্থাপত্য দর্শনে বাংলাদেশের বাঙালী এক প্রবল আকর্ষণে একা কিংবা সপরিবারে বেরিয়ে পড়ার এখন অসংখ্য দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। দার্জিলিং একটি পরিচ্ছন্ন সুন্দর সবুজ আর নৈসর্গিক পাহাড়ী অঞ্চল। সেখানেও অজস্র বাঙালী প্রতিবছর এক নির্দিষ্ট সময়ে ট্যুরে চলে যান। এমন একটি নিটোল ভ্রমণ মেন্যু আমরাও তৈরি করে গত শীতে বেরিয়ে পড়েছিলাম। আমরা বলতে সিরাজ ভাই এবং আমি। বাংলাদেশ থেকে এক রাতে আমরা সৌহার্দ্য বাসে বেনাপোল হয়ে কলকাতায় এসে থামি। কলকাতায় গিয়ে সেন্ট্রাল রোডের প্যারামাউন্ট হোটেলে রুম বুক করে থাকার বন্দোবস্ত করে ফেলি। বলা যায়, যে হোটেলে আমরা উঠেছি সেই হোটেলে বাংলাদেশের অনেককেই আমরা পেয়ে যাই। আরও কয়েকবার কলকাতায় যাওয়ার কারণে অনেক কিছুই আমার কাছে চেনা। কলকাতার চেনা শহর পথ, ঘাট, অলিগলিতে অনেক ঘুরেছি। এবার কলকাতা গিয়ে প্রথমেই যাই ঐতিহাসিক স্পট ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে। মর্মারিত শ্বেত পাথরের ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে এর আগে দূর থেকে দেখলেও এবার এর সান্নিধ্যে গিয়ে বুঝেছিÑ মার্বেল পাথরে নির্মিত সুদৃশ্য স্থাপত্য শৈলীর এক অপূর্ব নিদর্শন হলো ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। এর বিশাল আঙিনায় রয়েছে ফুলের বাগান। বিভিন্ন প্রজাতির অসংখ্য বৃক্ষ। আর সুশোভিত দৃশ্যাবলী দেখে মুগ্ধ না হয়ে থাকা যায় না। সিরাজ ভাই আর আমি ঘুরে ঘুরে কয়েক ঘণ্টা ধরে খুব কাছ থেকে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালকে মন ভরে প্রত্যক্ষ করলাম এবং একটি বিষয়ে নিশ্চিত হলাম যে, কলকাতার মতো এক পাথুরে শহরে প্রকৃতির সঙ্গে মানিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রেখে এমন এক নিখুঁত ঐতিহাসিক নিদর্শনকে সে দেশের সরকার কত যতœ করে সংরক্ষণ করছে। ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল দেখে বাইরে এসে ভেলপুড়ি খেয়ে এবার অন্যত্র যাওয়ার উদ্যোগ। এভাবেই কয়েক দিন কলকাতায় থেকে চলে গেলাম সিমলা। সিমলা এক মায়ার শহর। পরিচ্ছন্ন, স্বচ্ছ আর সবুজ, নয়নাভিরাম সিমলার রূপে যে কেউ মুগ্ধ না হয়ে পারবে না। মুগ্ধ হলাম সিরাজ ভাই এবং আমিও। সে এক ভিন্ন গল্পগাথা। সেখানেই আলাপ হয় রাজশাহীর প্রফেসর মামুন দম্পতির সঙ্গে। তারাও ছুটি কাটাতে এসেছেন। বলছিলাম মধ্যবিত্ত ঘরকুনো বাঙালীর কথা। যারা এখন শুধু ঘরে বসে সময় কাটান না। সুযোগ পেলেই ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, ভুটান, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ এমনকি ইউরোপেও বেড়াতে যাওয়ার মানসিকতা লালন করেন। আর তারই নিমিত্তে আমাদের বাংলাদেশেও ভ্রমণপিপাসুদের জন্য দেশের দর্শনীয় স্থানগুলোতে থাকা খাওয়ার সুবিধার জন্য নানা প্যাটার্নের চমৎকার রিসোর্ট তথা অবকাশ যাপন কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এ থেকে এটুকু অন্তত বোঝা যায় যে, মধ্যবিত্ত বাঙালী তার দৈনন্দিন জীবনযাপনের সংস্কৃতিতে ভ্রমণের বিষয়টাকেও যুক্ত করে এক অন্যরকম উপভোগ্য আনন্দময় মুহূর্তকে কাছে পেতে চায়।
×