নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ১৮ ফেব্রুয়ারি ॥ এক মাস চার দিন বয়সী নবজাতক সাবিরাকে নতুন চামুচ দিয়ে দুধ খাওয়ানোর অপরাধে চুলের মুঠি ধরে থাপ্পড়, বেধড়ক কিল-লাথি দেয়া হয়েছে গৃহবধূ জাকিয়াকে। খামচে দেয়া হয় নাক-মুখে। ঠোঁট চেপে ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে দেয়া হয়েছে। প্রায় আধাঘণ্টার এ নির্যাতনের এক পর্যায়ে দায়ের কোপে জখম করতে উদ্যত হয়। এমন নির্দয় মারধর করেছে পাষ- শাশুড়ি কোহিনুর বেগম। বিয়ের মাত্র দুই বছরেই জাকিয়ার জীবন-সংসারে এখন ভাঙনের সুর বেজে উঠেছে। স্বামী স্বপন খাঁ থেকেও নেই। তিনি নির্বিকার। মায়ের কাছে অসহায়। দুই মাস আগে বাড়ি ছেড়ে কাজের সন্ধানে নোয়াখালী যায়। ফুটফুটে শিশুকন্যা জন্ম দিয়েও শাশুড়ির নির্যাতন থেকে রেহাই জোটেনি জাকিয়ার। সাবিরা গর্ভে থাকাকালে ঠিকমতো খাবার দেয়া হতো না। মাথায় তেল দিতে বাধা দেয়া হতো। ফর্সা শরীরে অপুষ্টির ছাপ ফুটে আছে এ প্রসূতির। তার ওপরে অব্যাহত নির্যাতন। যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। সর্বশেষ সোমবার দুপুরে বেধড়ক মারধর করা হয়। মাথার চুল পর্যন্ত ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। এমন নির্দয় মারধরের পরে হাসপাতালে চিকিৎসা পর্যন্ত করাতে দেয়া হয়নি। জাকিয়াকে বাড়িতে আটকে রাখা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জাকিয়ার ভাইয়ের স্ত্রী খবর পেয়ে কৌশলে বাড়িতে নেয়ার কথা বলে হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করায়।
টিয়াখালী ইউনিয়নের মধ্য-টিয়াখালী গ্রামে স্বামী স্বপন খানের বাড়ি। পেশায় শ্রমিক। ধানখালী গ্রামের আজিজ খানের মেয়ে জাকিয়ার স্বপন খানের সঙ্গে বিয়ে হয় দুই বছর আগে। বিয়ের পর থেকে যৌতুকের দাবিতে অহরহ মারধর করত শাশুড়ি। মারধরের আরেক দফা মাত্রা বাড়ায় ননদ তহমিনাসহ অন্যরা। সুযোগ বুঝেই তারা স্বামীর বাড়ি ছেড়ে জাকিয়াকে নির্যাতনে ছুটে আসে। শিশু কন্যার জন্ম দিয়ে আরেক দফা বিপাকে পড়ে এ গৃহবধূ। নবজাতককে দেখতে জাকিয়ার বাবা-মা কেন গরু-বাছুর, লেপ-তোষক, গলার চেন নিয়ে আসেনি-এমন প্রবল অজুহাতে শাশুড়ি কোহিনুর সময় পেলেই হামলে পড়ে। জাকিয়ার ভাষায়, ‘ডেইলি এক লাচা (বার), দিনে বা রাইতে।’ কোনসময় তিন/চার বারও মারধর করা হয়েছে। বর্তমানে অসহায় জাকিয়ার প্রয়োজন পুষ্টিকর খাবারসহ চিকিৎসা ও আইনী সহায়তা। হাসপাতালে গিয়ে দেখা গেছে নবজাতককে নিয়ে অসহায় এ গৃহবধূ একটি জীর্ণ শয্যায় পড়ে আছে। শরীরের ময়লা একটি কাপড়। শরীরে ফর্সা রঙ অপুষ্টিতে ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। ঠোঁটে, চোখের কোনে মারধরের চিহ্ন, রক্ত জমে আছে। সমস্ত শরীরে মারধরের ছোপ ছোপ দাগ ফুটে আছে। চিকিৎসক কলাপাড়া হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার এইচএম মাহবুব আলম জানান, জাকিয়ার শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।