ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

শিল্পকলায় ‘বাংলা আমার দেশ’ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আজ

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

শিল্পকলায় ‘বাংলা আমার দেশ’ প্রদর্শনী শেষ হচ্ছে আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালার ৬ নং গ্যালারিতে শোভা পাচ্ছে বন্দুক হাতে মুক্তিযোদ্ধা গ্রাম্য বধূ, রাইফেলের মাথায় বাংলাদেশের পতাকা বেঁধে মুক্তিযোদ্ধাদের উল্লাস, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণের মুহূর্ত, ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সঙ্গে শেখ মুজিবুর রহমানের করমর্দন, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দেশের ঐতিহাসিক নিদর্শনের ছবি। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত রাশিয়ান দুই শিল্পী রুবিনা হোসেন ও সাবিনা হোসেনের যৌথ চিত্রকর্ম প্রদর্শনী ‘বাংলা আমার দেশ’। ১৩ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এ প্রদর্শনীর শেষ দিন আজ বৃহস্পতিবার। শিল্পকলা একাডেমির পৃষ্ঠপোষকতায় আয়োজিত প্রদর্শনী সাজানো হয়েছে অর্ধশতাধিক চিত্রকর্ম দিয়ে। বুধবার বিকেলে প্রদর্শনীটি দেখতে যান দৈনিক জনকণ্ঠের ডিরেক্টর টু জিশাল আতিকউল্লাহ খান ও আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার লস এঞ্জেলস শহর থেকে আগত রেজাউল রহমান ওসমানী মিঠু। তারা দুজনে ‘বাংলা আমার দেশ’ প্রদর্শনীর শিল্পী রুবিনা হোসেন ও সাবিনা হোসেনের সঙ্গে পুরো গ্যালারি ঘুরে ঘুরে দেখেন এবং চিত্রকর্ম নিয়ে নানা বিষয়ে আলোচনা করেন। পরিশেষে দুটি চিত্রকর্ম পছন্দও করেন এবং কেনার প্রতিশ্রুতি দেন। প্রদর্শনীর চিত্রকর্মগুলো বেশির ভাগই পেন্সিলে আঁকা। রয়েছে তেল, চারকোল, বলপয়েন্টে আঁকাও কিছু চিত্রকর্ম রয়েছে। বিষয়ভিক্তিকভাবে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। তাদের চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে সংগ্রামী মা, পরিশ্রমী কৃষক, স্কুলবালিকা, বিয়ের সাজে নববধূর মুখচ্ছবি। নজর কাড়ছে দেশের ঐতিহাসিক ভবনগুলো আলাদা আলাদা চিত্রকর্ম। রুবিনা এঁকেছেন আহছান মঞ্জিল, কার্জন হল, পুঠিয়া মন্দির কমপ্লেক্স, সুপ্রীমকোর্ট, সোনারগাঁও, তারা মসজিদ। সাবিনা এঁকেছেন জাতীয় সংসদ ভবন, তিন নেতার মাজার, লালবাগের কেল্লা, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, মানিকগঞ্জের শিবমন্দির। শিল্পীদ্বয় চিত্রকর্ম সৃজন করেছেন জাতীয় ঐতিহ্যকেও ঘিরে। ফুটন্ত লাল শাপলা এঁকেছেন রুবিনা। সাবিনা এঁকেছেন জাতীয় শহীদ মিনার। এছাড়াও ক্যানভাসে দৃশ্যমান হয়েছে তরুণীর মুখ কিংবা বয়সের ছাপপড়া বৃদ্ধার হাসিমুখ। পেশীবহুল খেলোয়াড়ের ছবিও বাদ যায় তুলির আঁচড় থেকে। রুবিনা তুলে ধরেছেন খোলা চুলের হাস্যোজ্জ্ব¡ল নারী। অন্যদিকে সাবিনা মেলে ধরেছেন ভয়ার্ত চোখে কোন এক শিশুর মুখ। ‘বিউটি অব ন্যাচার’ পর্বের চিত্রকর্মে নিরীক্ষাধর্মী কিছু সৌন্দর্যের চিত্রকর্ম রয়েছে। আজ শেষ দিনেও বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে এ প্রদর্শনী। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বিশেষ তিন অনুষ্ঠান ॥ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, মহান শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস এবং প্রয়াত ৯ জন নাট্যকার স্মরণে ‘স্মৃতি, সত্তা, ভবিষ্যৎ’ শিরোনামে ৫ দিনব্যাপী বিশেষ স্মরণানুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। এ উপলক্ষে একাডেমির সেমিনার কক্ষে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক সারা আরা মাহমুদ ও উপচরিচালক অরুণ চন্দ্র ম-ল, চারুকলা বিভাগের পরিচালক উৎপল কুমার দাস, সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দীন ও উপপরিচালক শামীমা আক্তার জাহান। মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী অনুষ্ঠান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আগামীকাল শুক্রবার বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি সাফল্যের ৪২তম বছরে পদার্পণ করছে। এ লক্ষে একাডেমি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করেছে। একাডেমির নন্দন মঞ্চে এদিন সকাল ১০টায় জাতীয় সঙ্গীতের মধ্যদিয়ে পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়িয়ে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন হবে। জাতীয় চিত্রশালার ১ নং গ্যালারিকে স্থায়ী গ্যালারি হিসেবে উদ্বোধন, দ্বি-বার্ষিক এশীয় চারুকলা, জাতীয় চারুকলা ও নবীন শিল্পী চারুকলা প্রদর্শনীর পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদের নিয়ে আর্ট ক্যাম্প, বিকেলে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, প্রাক্তন ও বর্তমান কর্মকর্তা, শিল্পী ও কর্মচারীদের পুনর্মিলনী এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২০ ফেব্রুয়ারি মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে সকাল ১০টা থেকে শুরু হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এতে থাকবে শহীদদের স্মরণে আর্ট ক্যাম্প বিকেলে কবিতা পাঠ ও সঙ্গীতানুষ্ঠান। ২১ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিকেল ৪টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং সন্ধ্যা ৬টায় একাডেমির নন্দন মঞ্চে দেশী-বিদেশী শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। ২২ ফেব্রুয়ারি একাডেমির স্টুডিও থিয়েটার হলে বিকেল ৫টায় উদ্বোধন হবে বাংলাদেশের প্রয়াত নাট্যকার স্মরণে ‘স্মৃতি সত্তা ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠান। উদ্বোধন করবেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। প্রধান অতিথি থাকবেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. নাসরীন আহমদ। ‘দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন’ শুরু হচ্ছে কাল ॥ সাম্রাজ্যবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক সম্মেলন শুরু হচ্ছে আগামীকাল শুক্রবার। ‘দক্ষিণ এশীয় সাংস্কৃতিক কনভেনশন’ শীর্ষক এ সম্মেলনের আয়োজন করেছে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে এদিন বিকেল ৪টায় তিন দিনব্যাপী এ সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন প্রবীণ বিপ্লবী কমরেড জসীম উদ্দিন ম-ল, কামাক্ষ্যা রায় চৌধুরী ও অধ্যাপক যতীন সরকার। সাংস্কৃতিক সম্মেলন উপলক্ষে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বুধবার দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলন হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার, শিবানী ভট্টাচার্য, শংকর সাওজাল, সহ-সাধারণ সম্পাদক জামশেদ আনোয়ার তপন, প্রচার সম্পাদক কঙ্কন নাগ প্রমুখ। সম্মেলন সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য তুলে ধরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার বলেন, কনভেনশনে সার্কভুক্ত আটটি দেশ ছাড়াও চীন, জাপান, ভিয়েতনাম, মিয়ানমারসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে সংগ্রামরত সাংস্কৃতিক সংগঠন ও ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া তুরস্ক, ফিলিস্তিন ও এ কনভেনশনে যোগদানের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। কনভেনশনে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট সঙ্গীত শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব শুভেন্দু মাইতি, শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার, সাংস্কৃতিক সংগঠক রতন বসু মজুমদার, বিশিষ্ট সাংবাদিক মালিনী ভট্টাচার্য, প্রখ্যাত কলামিস্ট রতন খাসনবিশ, পাকিস্তানের সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রাহাত সাঈদ, জাপানের লোক সংস্কৃতি গবেষক নাওমি ওয়াতানাবে উপস্থিত থাকবেন। তিনি আরও বলেন, সম্মেলনে অংশগ্রহণকারী দেশী-বিদেশী প্রতিনিধিদের আলোচনা, মতামত ও সম্মতির ভিত্তিতে তৈরি করা ‘ঢাকা ঘোষণা’ কনভেনশনের শেষ দিন বিকেলে পাঠ করা হবে। এ ছাড়া কনভেনশনের অংশ হিসেবে উন্মুক্ত চিত্রকর্ম প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে। সেরা চিত্রকর্ম অঙ্কনকারীকে কনভেনশন চলাকালে দক্ষিণ এশীয় সম্মাননা দেয়া হবে।
×