ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব আবার অস্বীকার প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশিত: ০৫:২২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব আবার অস্বীকার প্রধানমন্ত্রীর

সংসদ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশে ইসলামিক স্টেট বা আইএসের অস্তিত্ব থাকার সম্ভাবনা আবারও নাকচ করে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, স্থানীয়ভাবে উদ্ভূত কতিপয় সংগঠন ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকলেও এদেশে আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। আর আওয়ামী লীগ সরকার যে কোন ধরনের জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নীতিতে বিশ্বাস করে। যে কোন জঙ্গীবাদকে দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলায় বদ্ধপরিকর। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বুধবার জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারদলীয় সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, জঙ্গীবাদ মোকাবেলাসহ জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকারের পক্ষ থেকে কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সকল প্রকার সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ওয়ারেন্টভুক্ত ও সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ নিয়মিত মামলার আসামি গ্রেফতার, অবৈধ অস্ত্র ও বিস্ফোরক এবং মাদকদ্রব্যসহ সকল ধরনের অবৈধ মালামাল উদ্ধারকল্পে পুলিশের নিয়মিত অভিযান ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অব্যাহত রয়েছে। তিনি জানান, নাশকতামূলক ও ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রাপ্ত গোয়েন্দা তথ্য যাচাইপূর্বক এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ আইনগত ব্যবস্থা নেয়াসহ গ্রেফতার অভিযান পরিচালনা করছে। তিনি জানান, নাশকতার মামলায় যারা জামিন পেয়েছে তারা যাতে পুনরায় অনুরূপ অপতৎপরতা চালাতে না পারে সে জন্য তাদের নিবিড় নজরদারিতে রাখা হয়েছে। বিদেশী নাগরিকদের বসবাসের এলাকা ও চলাচলের রাস্তাগুলোতে গোয়েন্দা কার্যক্রম অধিকতর জোরদার করা হয়েছে। কূটনৈতিক এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ চলমান টহল আরও নিবিড় ও চেকপোস্ট ডিউটি জোরদার করা হয়েছে। বিনিয়োগের জন্য বিদেশীরা বাংলাদেশে লাইন দিচ্ছে ॥ বিনিয়োগ সংক্রান্ত সরকারদলীয় সংসদ সদস্য আলী আজম এবং স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের পৃথক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য বিশ্বের বড় বড় দেশ লাইন দিচ্ছে। বিদেশীদের কাছে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। আমরা বিদেশী বিনিয়োগের জন্য দেশে স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করেছি, তাই বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আসছে। তিনি বলেন, দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ বিদেশী বিনিয়োগ আসছে। জাপান, চীন, ভারত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, কোরিয়াসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগ করছে। জাপান ৬ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। বড় বড় দেশ লাইন দিচ্ছে বিনিয়োগের জন্য। কারণ বাংলাদেশে কর্মঠ জনশক্তি রয়েছে। আমরা বিদেশী বিনিয়োগের জন্য সারাদেশে এক শ’টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। ইপিজেডগুলোতেও বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। ডিজেলের দাম বৃদ্ধি কারণে বিদেশী বিনিয়োগ হচ্ছে না, এমন অভিযোগ নাকচ করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম অতিরিক্ত ছিল, তখন আমরা বেশি দামে জ্বালানি তেল কিনে এনে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিয়ে কম দামে ডিজেল বিক্রি করেছি। যার ফলে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ করেছে। প্রায় ৩৮ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ হয়েছে। যখন বিশ্ববাজারে ডিজেলের দাম বেড়েছে, তখন তো কোন এমপি বলেননি দেশে তেলের দাম বাড়াতে হবে। বরং তখন দু’-এক টাকা বাড়ালে হরতাল, ভাংচুরসহ অনেক কিছুই করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য হ্রাস পাওয়ায় আমরা বিপিসির বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করছি। এখনও ১৫-১৬ হাজার কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে হবে। ধার-দেনা পরিশোধ করার পর তখন হয়ত আমরা ডিজেলের দাম কমানোর কথা বিবেচনা করা যাবে। আর আমাদের বিদেশ থেকে পেট্রোল কিনতে হয় না, আমরা পেট্রোল উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রফতানি করছি। আর পাইপ লাইনে বাসা-বাড়িতে গ্যাস প্রদানের পরিবর্তে এলপিজি গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছি। নতুন মন্ত্রী নিয়োগ করার পরিকল্পনা নেই ॥ জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে ভেঙ্গে দুটি মন্ত্রণালয় করার কোন পরিকল্পনা সরকারের নেই। ফলে নতুন করে কোন মন্ত্রী নিয়োগ দেয়ারও সরকারের পরিকল্পনা নেই। বিমানমন্ত্রীর যোগ্যতা নিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, যারা মন্ত্রী হয়েছে, তারা যে কাজ করছে না, তা কিন্তু নয়। আর আগে থেকেই কারও (মন্ত্রী) অভিজ্ঞতা থাকে না। আপনি এমপি হয়েছেন, আপনার আগে থেকে এমপির অভিজ্ঞতা ছিল না। কাজ করতে করতেই অভিজ্ঞতা হয়। মন্ত্রীরা কাজ করছেন বলেই আমি এত কিছুর উত্তর দিতে পারছি। ২০১৬ সালে প্রবাসী সিআইপির মর্যাদা ৫ গুণ বাড়ানো হবে ॥ সংসদ সদস্য সেলিনা বেগমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মীরা প্রতি বছর বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স দেশে পাঠান। ২০১৫ সালে মোট রেমিটেন্সের পরিমাণ প্রায় ১৫ দশমিক ৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের এ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রতি বছর সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রদানকারী নির্দিষ্ট সংখ্যক প্রবাসী কর্মীকে কমার্শিয়াল ইম্পরট্যান্ট পারসন (সিআইপি) মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিগত ২০১৪ সালের জন্য সর্বোচ্চ রেমিটেন্স প্রেরণকারী হিসেবে ১০ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে সিআইপি নির্বাচন করা হয়েছে। ২০১৬ সাল থেকে ১০ জনের স্থলে ৫০ জনকে সিআইপি মর্যাদা দেয়া হবে। সিআইপি মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা তাদের কার্ড ব্যবহার করে সচিবালয়ে প্রবেশ, ব্যবসায়িক ভ্রমণে বিমান, রেল ও নৌপথে আসন সংরক্ষণের সুযোগ পান। তিনি জানান, বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চাইলে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সমান সুযোগ পান। দেশে বিদেশে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে তারা অগ্রাধিকারভিত্তিতে বৈঠক করতে পারেন। বিভিন্ন জাতীয় জাতীয় দিবসে বাংলাদেশ মিশনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ লাভ করেন। প্রবাসী কর্মীদের কল্যাণে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী কর্মীদের বিভিন্ন ধরনের সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশে অবস্থিত শ্রম উইংয়ের সংখ্যা ১৬ থেকে ২৮-এ উন্নীত করা হয়েছে। এ ছাড়াও যে সকল দেশে ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশী কর্মী রয়েছে, সে সকল দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে পর্যায়ক্রমে শ্রম উইং চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে জানুয়ারি ২০১৬ সাল পর্যন্ত মোট ৯৭ লাখ ৬২ হাজার ৬৮৫ জন বাংলাদেশী কর্মী বিএমইটি-এর ছাড়পত্র নিয়ে বিদেশে গেছেন। এর মধ্যে বর্তমান সরকারের ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কর্মসংস্থানের উদ্দেশ্যে বিএমইটির ছাড়পত্র নিয়ে ৩৪ লাখ ৩২ হাজার ৬৫৮ জন কর্মী বিদেশে গেছেন।
×