ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১

একযোগে জঙ্গী দমনে-

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

একযোগে জঙ্গী দমনে-

বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, ব্রিটেনসহ পাশ্চাত্য দেশের তরুণ-তরুণীদের একটি অংশ স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ছেড়ে বিভীষিকাময় জঙ্গীবাদের পথ ধরে হাঁটছিল। পাশ্চাত্য জীবনধারার সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য, শিক্ষা-দীক্ষা পশ্চাতে ঠেলে এরা জঙ্গীবাদে আকৃষ্ট শুধু নয়, সরাসরি যুদ্ধে যোগ দিতে মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি দিচ্ছিল। এদের অনেকে প্রশিক্ষিত হয়ে আবার দেশে ফিরে জঙ্গীবাদী তৎপরতায় লিপ্ত হয়। এমনটাই দেখা যাচ্ছে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস নামক জঙ্গীগোষ্ঠী প্রতিষ্ঠার পর থেকেই। অর্থলোভ বা এ্যাডভেঞ্চারের জন্যই যে ওরা আইএসে যোগ দিচ্ছে তা নয়, এক ধরনের ধর্মীয় আবেগ এর পেছনে নিহিত রয়েছে। শুধু তরুণ-তরুণীই নয়, পুরো পরিবার নিয়ে সিরিয়া যাবার ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশরাও ছিল বলে জানা গেছে। আর সে কারণে বাংলাদেশও বিষয়টিতে উদ্বিগ্ন। সাম্প্রতিক সময়গুলোতে বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের আইএসে যোগদান বা নিরুদ্দেশ হওয়ার খবর দেশী-বিদেশী গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। এদের সঙ্গে বাংলাদেশের একই মতাদর্শের অনুসারী ব্যক্তিদের যোগাযোগ থাকতে পারে বলে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের ধারণা। কেউ কেউ মনে করছেন, বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তরুণরা যদি যুক্তরাজ্য থেকে আইএসে যোগ দেয় তাহলে বুঝতে হবে সেখান থেকে যোগ দেয়ার সুযোগ রয়েছে। এটি রোধ করার দায়িত্ব বর্তায় খোদ যুক্তরাজ্যের ওপর। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি আইএসে যোগদানের কোন ঘটনা না থাকলেও জঙ্গী মানসিকতায় আবৃত সংগঠন রয়েছে। যার সবই নিষিদ্ধ। জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরীর, আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সদস্য হয়ে যারা জঙ্গীবাদী তৎপরতা চালাচ্ছে তাদের মধ্যে মাদ্রাসার ছাত্র যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রও। সাম্প্রতিককালে যুক্তরাজ্য থেকে অনেকেই পালিয়ে সিরিয়ায় গিয়ে আইএসে যোগ দিয়েছে। বিশেষ করে পূর্ব লন্ডনের তিন কিশোরী আইএসে যোগ দিতে তুরস্ক হয়ে সিরিয়ায় গেছে। ১৫ থেকে ১৬ বছরের এই তিন কিশোরীর মধ্যে দু’জন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত। ব্রিটেন থেকে ইতোমধ্যেই প্রায় ৫ শতাধিক ছেলেমেয়ে কথিত জিহাদে অংশ নিতে মধ্যপ্রাচ্যে গেছে। ১৯৭৩ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযম পাকিস্তান থেকে লন্ডনে গিয়ে আস্তানা গড়ে তোলার পর জামায়াত-শিবিরের মৌলবাদীরা মসজিদভিত্তিক সমাজ গঠনের মাধ্যমে সন্ত্রাসবাদকে মূল ভিত্তিতে পরিণত করে। যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীনরাও ল-নে আশ্রয় নিয়ে সন্ত্রাসবাদী তৎপরতাকে মদদ দিয়ে আসছে। এদের পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত-শিবিরসহ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীরা বাংলাদেশে অস্ত্র ও অর্থ পাঠিয়ে নাশকতামূলক তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এরাই জেএমবি, হরকাতুল জিহাদ, হিযবুত তাহরীর নামক সন্ত্রাসী ও জঙ্গী সংগঠন গড়ে তুলেছে। মাস কয়েক আগে ব্রিটেন থেকে সিলেটে আসা একটি পরিবার ফেরার পথে ব্রিটেনে না গিয়ে তুরস্কে যায় এবং সেখান থেকে আইএসে যোগ দেয়। এই ব্রিটিশ বাংলাদেশীরা সন্ত্রাসী কর্মকা-ে জড়িয়ে পড়লে উভয় দেশেই তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কিভাবে এই জঙ্গী হুমকি মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে দু’দেশের সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। ব্রিটেনের অভিবাসন বিষয়কমন্ত্রী ঢাকায় সফরকালে জঙ্গী দমনে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। বাংলাদেশও চায় ব্রিটেনে বসবাসরত মৌলবাদীরা বাংলাদেশবিরোধী যে তৎপরতা চালাচ্ছে জামায়াত-শিবিরের ছত্রছায়ায় তা বন্ধ হোক। জঙ্গী দমন করতে হলে ব্রিটেনকেই সর্বাগ্রে সে দেশে বসবাসরত জঙ্গীদের নির্মূল করতে হবে।
×