ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের ব্যয় বৃদ্ধিসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের ব্যয় বৃদ্ধিসহ ৯ প্রকল্প অনুমোদন

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধিসহ নয় প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৯৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারী তহবিল থেকে ৪ হাজার ৯৪৫ কোটি ৯ লাখ টাকা এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেয়া হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনা। বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কের ওপর চার লেনের এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ পেয়েছি। সে অনুযায়ী শীঘ্রই পরবতী কার্যক্রম শুরু করা হবে। তবে এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে ট্রেন চলবে নাকি বাস চলবে সে বিষয়ে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এটি তৈরি হলে কোথায় কোন নিচে নামার রাস্তা থাকবে না। সরাসরি দ্রুত চলাচল করা যাবে। তিনি জানান, মাটি দিয়ে চার লেনের সড়ক করতে যত বাধা বিপত্তি এসেছিল ওপর দিয়ে চার লেন করতে আর কোন বাধা থাকবে না। কেননা সড়কটি চার লেন করার সময় দেখা গেছে করব, মসজিদ, মন্দিরসহ নানা স্থাপনা পড়েছিল। ফলে এগুলো জটিলতা নিরসনে অনেক সময় ব্যয় হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মনে করি এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে বাস চলাচল করলেই অর্থনৈতিকভাবে লাভ হবে। তিনি জানান, দেশের সব বিভাগীয় শহরে বঙ্গবন্ধু নভোথিয়েটার স্থাপনেরও নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আমরা পর্যায়ক্রমে সবগুলো বিভাগীয় শহরে এটি স্থাপন করব। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন পরিকল্পনা সচিব তারিকুল ইসলাম, তথ্য ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমা এবং সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলমসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা। পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটি শুরু থেকে বার বার নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে। এখন এ বছরের মধ্যেই এটির কাজ শেষ হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপিত হবে, যা ওই সড়কের দুর্ঘটনা হ্রাসসহ জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখবে। তাই প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়নে জনমনে বিজ্ঞান সম্পর্কিত সুস্পষ্ট আচরণ নিবিষ্ট করা এবং সমাজ হতে বিজ্ঞান সংশ্লিষ্ট কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস দূর করা, নতুন প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষায় আগ্রহী করে তোলা এবং সাধারণ জনগণ বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনোদনের মাধ্যমে শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছেÑ বাংলাদেশ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ১২টি ব্যারাক নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ২১৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। ঢাকার মালিবাগে সরকারী কর্মকর্তা/কমৃচারীদের জন্য ৪৫৬টি ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ১৯৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার রাজশাহী স্থাপন প্রকল্প, এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ২২২ কোটি ৩ লাখ টাকা। মিরপুরে ৬নং সেকশনে গণপূর্ত অধিদফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ১২০ কোটি ১৪ লাখ টাকা। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের রাস্তা, ড্রেন ও ফুটপাত উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ৮১ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। রাজশাহী মহানগরীতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার পুনঃসংস্কার প্রকল্প, এর ব্যয় ৬৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। ময়মনসিংহ-গফরগাঁও-টোক সড়কের ৭২তম কিলোমিটার বানার নদীর ওপর ২৮২.৫৫৮ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্প, এর ব্যয় ৪৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা এবং সরাইল-আলফাডাঙ্গা সংযোগ সড়কের উন্নয়ন প্রকল্প, এর ব্যয় ১৯৫ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের বিস্তারিত হচ্ছে, ঢাকা চট্টগ্রাম চার লেন প্রকল্পে ৬২৬ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এ প্রকল্পে তিন বিদেশী ঠিকাদার শিখো পিবিএল জেভি লিমিটেড, সিনোহাইড্রো কর্পোরেশন লিমিটেড এবং গ্যানন ডানকার্লি এ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের প্রকল্প বাস্তবায়নে গাফিলতির কারণে নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হয়নি। তৃতীয় দফা সংশোধনী প্রস্তাবে ব্যয় বৃদ্ধিসহ সময় বাড়ানো হয়েছে চরতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সূত্র জানায়, প্রকল্পটির ১৩টি প্যাকেজের মধ্যে ৭টির কাজ পেয়েছে সিনোহাইড্রো। এর মধ্যে তিনটি প্যাকেজের (২, ৩ এবং ৫নং প্যাকেজ) বাস্তবায়ন পরিস্থিতি খুবই খারাপ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সর্বশেষ ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত হিসেবে দেখা গেছে, দুই নম্বর প্যাকেজের আওতায় কুটুম্বপুর থেকে কুমিল্লা পর্যন্ত ২৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করার কথা থাকলেও গত পাঁচ বছরে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত শেষ করেছে। এখনও আট কিলোমিটার নির্মাণ কাজ বাকি রয়েছে। অন্য প্যাকেজ দুটির অবস্থাও একই রকম। তবে প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে প্রকল্পটি কাজের বাস্তব অগ্রগতি জানুয়ারি পর্যন্ত হয়েছে ৮০ দশমিক ৯০ শতাংশ।
×