ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শেয়ার মূল্য পরিশোধ ও ডিপোজিটরি ব্যাংক নির্ধারিত হবে

এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক আইন হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

এশীয় অবকাঠামো উন্নয়ন ব্যাংক আইন হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাংক (এআইআইবি) আইন ২০১৬ করছে সরকার। এই আইনের মাধ্যমে চীনের নেতৃত্বে গঠিত এ ব্যাংকে বাংলাদেশের নির্ধারিত শেয়ারের মূল্য পরিশোধসহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এজন্য জাতীয় সংসদে বিল আনা হচ্ছে বলে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে। চলতি সপ্তাহেই বিলটি উত্থাপন হতে পারে। এর আগে গত বছরের ২১ ডিসেম্বর এই আইনটি মন্ত্রিপরিষদ নীতিগতভাবে অনুমোদন দেয়। গত ১৯ জানুয়ারি আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিস লেটিভ ও সংসদ বিষয়ক বিভাগ থেকে ভেটিং সম্পন্ন হয়। সম্প্রতি এটি জাতীয় সংসদে উপস্থাপনের জন্য অনুমোদন দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এ বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আসিফ-উজ-জামান জানান, জাতীয় সংসদের অনুমোদন পাওয়ার পর এআইআইবির শেয়ারমূল্য বাবদ ৬৬ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলার পরিশোধ করা হবে। তিনি বলেন, উদ্বোধনী দিন পর্যন্ত ব্যাংকে অংশগ্রহণকারী ৫৭টি দেশের মধ্যে মাত্র ৩০টি দেশ নির্ধারিত শেয়ারমূল্য পরিশোধ করে সদস্য হয়েছে। বাকি ২৭টি দেশ এ সময়ে শেয়ারের মূল্য পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে, যার মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। ইআরডির দায়িত্বশীল অপর এক কর্মকর্তা জানান, এই আইন পাস হলে এআইআইবির শর্ত প্রতিপালন করতে সহজ হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, যেমন ভবিষ্যতে বাংলাদেশে যদি এআইআইবির অফিস হয় তাহলে সেখানে কর্মরতরা এদেশে কোন আয়কর দেবেন না। এটি অন্য সকল উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ক্ষেত্রেও রয়েছে বলে জানান তিনি। এছাড়া ভবিষ্যতে যদি এআইআইবি থেকে কোন অর্থ পাওয়া যায় তাহলে সে অর্থ কোথায় থাকবে। এজন্য এই আইনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংককে ডিপজিটরি ব্যাংক করা হবে। এরকম বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে এই আইনের মাধ্যমেই। এক প্রশ্নের জবাবে এ কর্মকর্তা বলেন, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের ক্ষেত্রেও এ ধরনের আইন রয়েছে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, সদস্য হতে বাংলাদেশকে দিতে হবে ৬৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার। এর মধ্যে পরিশোধিত মূলধন হিসেবে ১৩ কোটি ২১ লাখ ডলার এবং ৫২ কোটি ৮৪ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে অপরিশোধিত (কলেবল) মূলধন হিসেবে। গত মাসে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও প্রধানমন্ত্রী লি কে কিয়াং উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও যোগ দেন এই অনুষ্ঠানে। ব্যাংকের প্রথম প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করছেন চীনের সাবেক অর্থমন্ত্রী জিন লিকুয়ান। বেইজিংয়ে সংস্থার সদর দফতরে ওই অনুষ্ঠানে ১২ জনকে পরিচালক হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সূত্র জানায়, দশ হাজার কোটি ডলার মূলধন নিয়ে চীনের নেতৃত্বে এআইআইবি গঠিত হয় ২০১৪ সালের ২৪ অক্টোবর। এরপর ২০১৫ সালের জুনে বাংলাদেশসহ ৫০টি সদস্য দেশ চুক্তি সই করে। চীনের পাশাপাশি ভারত, রাশিয়া, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া এআইআইবির অন্যতম শেয়ারহোল্ডার। বাংলাদেশসহ এর সদস্য হবে ৫৭টি দেশ। এশীয় ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোকে অবকাঠামো উন্নয়ন ও সংযোগ স্থাপনে ঋণ ও অর্থ সহায়তা দেয়াই এআইআইবি গঠনের উদ্দেশ্য। শুরুর দিকে এশিয়ার পরিবহন, জ্বালানি, টেলিযোগাযোগ ও অন্যান্য অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগ করবে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ বিষয়ে বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। গত সাত বছরে ৬ শতাংশের বেশি হারে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি আমরা। পৃথিবীর খুব কম দেশেই যেটা করতে পেরেছে। কিন্তু আমাদের আরও উন্নয়ন করতে হবে। নিজস্ব অর্থে আমরা পদ্মা সেতু নির্মাণ করছি। এমন আরও অনেক বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। আর তাতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা দরকার। এআইআইবি এক্ষেত্রে আমাদের বড় অংশীদার হবে। সূত্র জানায়, এআইআইবির সদস্য ৩০টি দেশের মধ্যেই রয়েছে মোট মূলধনের ৯৩ দশমিক ৯৯ শতাংশ। ৬ দশমিক ৯৯ শতাংশ এখনও বাকি আছে। সবচেয়ে বেশি মূলধন চীনের ২৯ দশমিক ৮ শতাংশ। এছাড়া ভারতের ৮ দশমিক ৪, পাকিস্তানের ১ দশমিক ২ ও বাংলাদেশের শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার অবকাঠামো উন্নয়নের ওপর বিশ্বব্যাংকের গত বছরের এক সমীক্ষায় বলা হয়, আগামী ১০ বছরের প্রতিটি বছরে বাংলাদেশের অবকাঠামো খাতে বিনিয়োগের দরকার ৭০০ থেকে এক হাজার কোটি ডলার। অর্থাৎ ১০ বছরে মোট দরকার পড়বে ৭ হাজার থেকে ১০ হাজার কোটি ডলার, যা স্থানীয় মুদ্রায় ৭ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। তবে ব্যাংক প্রতিষ্ঠার বিষয়ে বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বাস্তবতা মানতে হবে। চীন যে এখন অর্থনৈতিক শক্তি, আইএমএফই তো সেই স্বীকৃতি দিয়েছে। এক সময় যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিল দুই পরাশক্তি। এখন সেই সোভিয়েত ইউনিয়ন নেই, সেই যুক্তরাষ্ট্রও নেই। তিনি বলেন, যে বিবেচনাতেই গঠিত হোক না, এআইআইবি বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদই হবে। কারণ, অবকাঠামো খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের বিপুল বিনিয়োগ দরকার, যা বিশ্বব্যাংক, এডিবি বা আইডিবির অর্থায়নে চাহিদা মেটানো সম্বভ নয়। অন্যদিকে এআইআবির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর স্বাগত জানায় এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। ফিলিপাইনের ম্যানিলায় অবস্থিত সংস্থাটির প্রধান কার্যালয় থেকে ওই সময় পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয় এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অবকাঠামো উন্নয়নে এডিবি আন্তরিকভাবে সহযোগিতা ও সমর্থন দিয়ে যাবে। এআইআইবির প্রেসিডেন্ট জিন লিকুইনকে তার আগে শুভেচ্ছা বাণী পাঠায় এডিবির প্রেসিডেন্ট তাকিহিকো নাকাও। এতে তিনি বলেন, এডিবির ৫০ বছরের কাজ করার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা রয়েছে। সেই সঙ্গে উন্নয়নশীল দেশের ৩১টি মাঠ পর্যায়ের অফিসের নেটওয়ার্ক রয়েছে। এগুলো এআইআইবি কাজে লাগাতে পারবে। এডিবি বলেছে গত বছরের শেষ দিকে এডিবির বার্ষিক সাধারণ সভার সময় নাকাও ও লিকুইন এক বৈঠকে মিলিত হন। তারা দুজনেই একমত হয়েছেন যে, এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলে বড় ধরনের অবকাঠামো শূন্যতা রয়েছে। এজন্য পরিবেশ ও সামাজিক ভারসাম্য বজায় রেখে টেকসই উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসনে টেকসই অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য শক্তিশালী নীতিমালার প্রয়োজন। এডিবি পরামর্শ দিয়ে বলেছে এখন থেকে যৌথ উদ্যোগেও বড় অবকাঠামো উন্নয়ন, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, পরিবহন, শহরাঞ্চলে পানি সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রকল্পেসহ অর্থায়নকারী হিসেবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যেতে পারে।
×