ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মোরসালিন মিজান

বিস্তৃত পরিসর আয়োজন নান্দনিক স্টল, একটি দুটি নতুন বই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

বিস্তৃত পরিসর আয়োজন নান্দনিক স্টল, একটি দুটি নতুন বই

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান। শুরু হলো অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ভাষার মাসের প্রথম দিন সোমবার বর্ণাঢ্য এই সাংস্কৃতিক উৎসবের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। লেখক ও বইপ্রেমী প্রধানমন্ত্রী এবারও ছিলেন বইমেলার প্রথম ক্রেতা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে আগ্রহ নিয়ে বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন তিনি। সাদামাটা দেখা নয়, পছন্দের বইও সংগ্রহ করেন তিনি। তেমনি কিছু উল্লেখযোগ্য প্রকাশনা উপহার হিসেবে তুলে দেয়া হয় তাঁর হাতে। প্রধানমন্ত্রী প্রাঙ্গণ ছেড়ে যাওয়ার পর সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় মেলার উভয় অংশ। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাইরে অপেক্ষমাণ পাঠক দলবেঁধে মেলায় প্রবেশ করতে শুরু করেন। টিএসসিতে আড্ডা গল্পে যাঁরা মেতেছিলেন, তাঁরা মেলায় পৌঁছেন আগেভাগেই। প্রথম দিনে যেদিকে চোখ গেছে, পরিপাটি চেহারা। বহুকালের অভ্যাস মেনে এবারও অনেকেই শুরু করেন একাডেমি চত্বর থেকে। একাডেমি প্রাঙ্গণে ৮২ প্রতিষ্ঠানকে ১১১ ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। অনেক সরকারী প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সংগঠন ও গণমাধ্যমের স্টল। প্রথম দিন হলেও অধিকাংশ স্টল খোলা ছিল। প্রত্যেকেই নিজেদের প্রকাশনা ইত্যাদি সাজিয়ে রাখেন। সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় পাঠক সেদিকে যতটুকু সম্ভব চোখ বুলিয়েছেন। বাংলা একাডেমির স্টলের সামনে গিয়ে দেখা যায় মোটামুটি ভিড়। অল্প বেচাকেনা। মুক্তধারার স্টলটিতেও নতুন পুরনো বইয়ের ভাল একটি সংগ্রহ। এখানেও পাওয়া গেল কয়েকজন পাঠককে। বহেরা তলায় লিটলম্যাগ চত্বর। না, এবারও প্রথম দিনে শুরু করা যায়নি। পুকুর পাড়ে ছোটখাটো আড্ডা। বসে গল্প করছিলেন আশরাফ, আদিবা ও তানিয়া। সকলেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। তাঁরা জানালেন, প্রধানমন্ত্রী বের হয়ে যাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। তিনি বের হয়ে যেতেই মেলায় প্রবেশ করেন তাঁরা। শুরুটা করেছেন বাংলা একাডেমি দিয়ে। পরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবেন বলে জানান তাঁরা। মেলার মূল অংশ সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে। এখানে প্রবেশ ও প্রস্থানের জন্য রয়েছে মোট ৮টি প্রবেশ পথ। প্রথম দিনে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে রমনা কালীমন্দিরের প্রবেশ পথটি। বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে করা নতুন পথটি অনেক প্রশস্ত। সেটি ধরে মূল মেলায় প্রবেশ করেন বহু মানুষ। এতদিনের চেনা উদ্যান এদিন যেন নতুন মনে হচ্ছিল। বিশাল জায়গাটি হঠাৎ করেই যেন ভরে উঠেছে। দারুণ নান্দনিক সাজে সেজেছে স্টলগুলো। বিশেষ করে প্যাভিলিয়নগুলো দৃষ্টি কাড়ে। এখানে বাংলা একাডেমিসহ ১৪ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান মোট ৬০০০ বর্গফুট আয়তনের ১৫টি টি প্যাভিলিয়ন সাজিয়েছে। মোট প্রতিষ্ঠান ৩২০টি। ইউনিট সংখ্যা ৫৪০। মেলা ঘুরে দেখা যায়, অধিকাংশ স্টলের সামনে বই সাজানো আছে। দুই দশটির মতো নতুন বই। পুরনো বইগুলোও সাজানো। অবশ্য পাঠক মেলা ঘুরে দেখার কাজটিই বেশি করেছেন। বিশাল আকৃতির মেলায় কোথায় কোন্ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এ নিয়ে প্রথম দিন কৌতূহলী ছিলেন পাঠক। শোয়েব ও শীলা হাঁটতে হাঁটতে একেবারে স্বাধীনতা স্তম্ভের কাছাকাছি এসে থামেন। ততক্ষণে একটু যেন ক্লান্তই দেখায় তাঁদের। দুই বন্ধুর একজন শোয়েব বললেন, সচরাচর প্রথম দিনে মেলায় আসা হয় না। এদিক দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ মনে হলো, একবার মেলাটা ঘুরে না গেলে পরে খারাপ লাগবে। তাই ঢুঁ মারা। শীলা বললেন, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশের নতুন পথটি ধরে হাঁটছিলেন তাঁরা। সে পথই একেবারে শেষ প্রান্তে নিয়ে এসেছে। দুই পাশেই স্টল। স্টল দেখতে দেখতে আসা। বেশ উপভোগ করেছেন বলে জানান তিনি। এভাবে ঘুরে দেখা বেড়ানোর মধ্যেই কেটে গেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলার প্রথম দিন। নতুন বই ॥ প্রথম দিন হলেও, মেলায় নতুন বই কম আসেনি। প্রায় প্রতিটি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের স্টলে নতুন বইয়ের প্রদর্শনী। বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ থেকে ১৫টির মতো নতুন বইমেলায় এনেছে। সকলের প্রকাশনা হিসাব করে নতুন বইয়ের মোট সংখ্যা বলা মুশকিল। অনিন্দ্য প্রকাশের স্বত্বাধিকারী আফজাল হোসেন জানালেন, প্রায় ১০টির মতো বই প্রথম দিনেই মেলায় এনেছেন তাঁরা। এসব বইয়ের মধ্যে রয়েছে সাইন্সফিকশন ও উপন্যাস। মেলায় প্রতিদিনই নতুন নতুন বই আসবে বলে জানান তিনি। তবে, প্রথম দিনের মেলায় খ্যাতিমান কোন লেখক বা কবির দেখা মেলেনি। মেলা মঞ্চের আয়োজন আজ মঙ্গলবার থেকে মেলা মঞ্চে শুরু হবে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ॥ আজ বিকেল ৪টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা একাডেমির হীরকজয়ন্তী : বাংলা একাডেমিকে ফিরে দেখা’ শীর্ষক সেমিনার। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন শফিউল আলম। আলোচনা করবেন ফজলে রাব্বি, আজিজুর রহমান আজিজ, বেগম আকতার কামাল এবং মোহিত কামাল। সভাপতিত্ব করবেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। সন্ধ্যায় রয়েছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
×