ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

ন্যায্য সংখ্যক শরণার্থী নিতে ক্যামেরনকে ১২০ শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদের খোলা চিঠি

ব্রিটেনের ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য

প্রকাশিত: ০৩:৪১, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ব্রিটেনের ভূমিকা অগ্রহণযোগ্য

১২০-এরও বেশি নেতৃস্থানীয় অর্থনীতিবিদ যুক্তরাজ্য সরকার যেভাবে শরণার্থী সঙ্কটের মোকাবেলা করছে তার কড়া সমালোচনা করেছেন। তারা সরকারের গৃহীত পদক্ষেপকে গুরুতরভাবে অপর্যাপ্ত, নৈতিক দিক দিয়ে অগ্রহণযোগ্য ও অর্থনৈতিকভাবে ভ্রান্ত বলে অভিহিত করেছেন। তাদের মধ্যে সরকার জাতিসংঘ ও বিশ্ব ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তারাও রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের কাছে লেখা এক খোলা চিঠিতে অর্থনীতিবিদরা বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ ব্রিটেন শরণার্থীদের জন্য আরও অনেক কিছু করতে পারে বলে যুক্তি দেন। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভিতর এরই মধ্যে রয়েছে এবং এখনও ইইউর বাইরে রয়েছে এমন উভয় শ্রেণীর শরণার্থীদের এক ‘ন্যায়নঙ্গত ও সমানুপাতিক অংশ’ গ্রহণ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা যুক্তরাজ্যসহ ইইউর অভিমুখে ও ইইউর ভিতর শরণার্থীদের চলাচলের নিরাপদ ও বৈধ পথ খুলে দেয়ার আহ্বান জানান। তারা এটাও চান যে, যখনই আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা চাওয়া হবে তখন তা পাওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণের সুষ্ঠু ও পুর্ণাঙ্গ পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা হোক। অর্থনীতিবিদরা লিখেছেন, যেভাবেই গণনা করা হোক না কেন, শরণার্থীদের মানবিক কল্যাণ এতই ব্যয়বহুল যে, তাদের গ্রহণ করতে পূর্ণ ভূমিকা পালন না করা যুক্তরাজ্যের জন্য নৈতিক দিক দিয়ে গ্রহণযোগ্য হবে না। তাদের মধ্যে রয়েছেন জাতিসংঘের অন্যতম সাবেক উপ-মহাসচিব ও সাবেক মন্ত্রী মার্ক ম্যালক ব্রাউন এবং গ্যাট ও বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সাবেক ডিরেক্টর জেনারেল পিটার সুদারল্যান্ড। এবারই প্রথম এত বেশি সংখ্যক অর্থনীতিবিদ যুক্তরাজ্য সরকারের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করলেন। এর আগে যুক্তরাজ্যের ৩৫০ জন শীর্ষ বিচারক ও আইনজীবী এবং অক্সফাম, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও রিফিউজি কাউন্সিলসহ ২৭টি দাতব্য প্রতিষ্ঠান ও এনজিও প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে অন্যান্য খোলা চিঠি দেন। ডেভিড ক্যামেরনের সরকার যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার সীমান্তে অবস্থিত শিবিরগুলো থেকে পাঁচ বছরে ২০,০০০ সিরীয় শরণার্থী নিতে সম্মত হয়েছে। তাদের মধ্যে এক হাজারেরও বেশি এরই মধ্যে ব্রিটেনে পৌঁছেছে। গত বছর জার্মানির গ্রহণ করা ১১ লাখ শরণার্থী এবং সুইডেনের ১ লাখ ৬০ হাজার শরণার্থীর কথা বিবেচনা করলে ব্রিটেনে নেয়া হবে এমন শরণার্থীদের সংখ্যা ক্ষুদ্র বলেই মনে হয়। সুইডেনেই জনসংখ্যার অনুপাতে ইউরোপে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে। তবে জার্মানি ও সইডেন এবং অন্যান্য ইইউ দেশ এখন তাদের ভূখ-ে শরণার্থীদের সংখ্যা ব্যাপক হারে কমানোর চেষ্টা করছে। ইউরোপিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট মারিও ড্যাসি গত মাসে ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামে বলেন, একযোগে কাজ করলে ইউরোপ শরণার্থী সঙ্কট মোকাবেলার চ্যালেঞ্জকে প্রবৃদ্ধির হার বাড়ানোর এক সুযোগে পরিণত করতে পারে। অর্থনীতিবিদরা যুক্তি দেখান যে, ইইউর বাইরে থেকে ২০,০০০ সিরীয়কে পুনর্বাসিত করার ব্রিটিশ প্রস্তাব খুবই হতাশাব্যঞ্জক, খুবই ধীরগতি ও খুবই সংকীর্ণ। তারা উল্লেখ করেন, যুক্তরাজ্য এর সাম্প্রতিক ইতিহাসে আরও বেশি সংখ্যক আশ্রয়প্রার্থী ও শরণার্থীকে গ্রহণ করেছে এবং এর সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনাও আরও অনেক বেশি দ্রুত করেছে। তারা লিখেছেন, শরণার্থীদের গ্রহণ করা উচিত, কারণ তারা নৈতিক ও আইনগত দিক দিয়ে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা লাভের অধিকারী, তারা অর্থনৈতিক সুবিধা বয়ে আনতে পারে এ কারণে নয়। তবুও এটা লক্ষ্য করা প্রয়োজন যে, শরণার্থীা ও তাদের যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নতি সাধনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। গত মাসে আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইউরোপে আগত বিরাট সংখ্যক শরণার্থীকে যদি শ্রম বাজারে ভালভাবে অঙ্গীভূত করা যায়, তা হলে দীর্ঘমেয়াদে ইইউর অর্থনৈতিক শক্তি বৃদ্ধি ঘটবে। -গার্ডিয়ান অনলাইন
×