ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নিষ্কাশন নালাও ভরাট করা হচ্ছে

রূপগঞ্জে জমি দখলে অস্ত্রের মহড়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৫, ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

রূপগঞ্জে জমি দখলে অস্ত্রের মহড়া

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ৩১ জানুয়ারি ॥ নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার কাঞ্চন পৌরসভা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হাটাব, নরাবো, আমলাবো ও কাঞ্চন এলাকার কৃষকদের জমি না কিনে জোরপূর্বক বালু ভরাট করে জবরদখল করছে ইস্টউড সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্প । জোরপূর্বক বালু ভরাট করার প্রতিবাদ করায় আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা নিরীহ কৃষকদের হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভয়ে নিরীহ এসব কৃষক প্রতিবাদ করার সাহসটুকুও পাচ্ছেন না। আবাসন প্রকল্পটির কাছ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেলও রক্ষা পায়নি। ক্যানেল ভরাট করে দখলে নিয়েছে তারা। এতে ওই ক্যানেল দিয়ে পানি নিষ্কাশন করা যাচ্ছে না। ফলে শত শত বিঘা ইরি-বোরো চাষ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছেÑ স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই জোরপূর্বক বালু ভরাট কাজ অব্যাহত রেখেছে প্রকল্পটি। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, কাঞ্চন পৌরসভা ও গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের হাটাব, নরাবো, আমলাবো ও কাঞ্চন এলাকায় স্থানীয় কৃষকদের প্রায় হাজার বিঘা জমি রয়েছে। আর কৃষকরা এসব জমিতে শীত মৌসুমে ইরি ধান রোপণ করেন। ইস্টউড সিটি নামে একটি আবাসন প্রকল্পের মালিক কামাল উদ্দিন আহাম্মেদ বেশ কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করে। এছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে সাইনবোর্ড প্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা করে ভাড়া নিয়ে বিলে শতাধিক সাইনবোর্ড স্থাপন করেছে। কোন প্রকার অনুমতি ছাড়াই এবং আওয়ামী লীগের এক প্রভাশালী নেতার নির্দেশক্রমে বেশ কয়েক দিন ধরে আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত সন্ত্রাসী কাউসারের নেতৃত্বে তার বাহিনীর সদস্যরা আবাসন প্রকল্পের ক্রয়কৃত জমির পাশাপাশি কৃষকদের জমিতে বালু ভরাট করে জবরদখল করে আসছে। দিনে কৃষকরা বাধা দেয়ায় রাতের আঁধারে কৃষিজমি জবরদখল করছে। শুধু তাই নয়, সারারাত সন্ত্রাসী বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় ওই এলাকায় মহড়া দিচ্ছে। মহড়ার কারণে এলাকায় চরম আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এতে ফুঁসে উঠছে এলাকাবাসী। যেকোন সময় আবাসন প্রকল্পের নিয়োজিত সন্ত্রাসীদের সঙ্গে এলাকাবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে। ইতোমধ্যে কৃষকদের কয়েক বিঘা জমি বালু দিয়ে ভরাট করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, ওই এলাকায় বেশ কয়েক বিঘা খাসজমি রয়েছে। এসব খাসজমি বালু ভরাট করে জবরদখল করা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ক্যানেল ভরাটের ফলে পানি নিষ্কাশন করতে পারছে না স্থানীয় কৃষকরা। চলতি ইরি ব্যুরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে না পারায় শত শত বিঘা ইরি জমিতে ধান চাষ চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বালু ভরাট ও পানি না পাওয়ার কারণে ক্ষতির আশঙ্কায় রয়েছেন এখানকার কৃষকরা। ইস্টউড সিটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা জসিম উদ্দিন আহাম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একটি মিটিংয়ে আছি। এ বিষয়ে এখন কথা বলা সম্ভব না। এ বিষয়ে গোলাকান্দাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, অনুমোদন ছাড়া কোন আবাসন প্রকল্প কৃষি জমিতে বালু ভরাট করার কোন বৈধতা নেই। ইস্টউড সিটির অনুমোদন আছে কিনা আমার জানা নেই। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) লোকমান হোসেন বলেন, জমি না কিনে কৃষকদের জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট করবে এটা অন্যায়। এছাড়া খাসজমি জবরদখলের বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ব্যাপারে সহকারী ভূমি কর্মকর্তাকে অবহিত করা হবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।
×