ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয়ের দাবি এফবিসিসিআই নেতাদের;###;ভ্যাট আদায় ব্যবসায়ীবান্ধব ও সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনার দাবি

আস্থা বাড়ছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৮ জানুয়ারি ২০১৬

আস্থা বাড়ছে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ভারতের আদানি ও রিলায়েন্সের মতো বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এর আগে কখনও এত বড় বিনিয়োগ দেশে আসেনি। এতেই প্রমাণিত হয় বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ছে। বর্তমানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় দেশী উদ্যোক্তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস বাড়লেও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জ্বালানি সমস্যা অন্যতম বাধা হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতারা। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহতভাবে জ্বালানি তেলের দাম কমার প্রেক্ষাপটে দেশে দাম সমন্বয়ের দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি। একই সঙ্গে ভ্যাট আদায় ব্যবস্থা ব্যবসায়ীবান্ধব করার দাবি এসেছে সংগঠনটির পক্ষ থেকে। বুধবার রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি, ঋণের সুদ হার কমানো, কারখানার উপযুক্ত জমির ব্যবস্থা করাসহ একগুচ্ছ বিষয়ে নিজেদের দাবির কথা তুলে ধরেছেন সংগঠনের নেতারা। এফবিসিসিআই সভাপতি মাতলুব আহমাদ বলেন, দরকার হচ্ছে ডুয়িং বিজনেস সহজ করা। সরকারের সঙ্গে বেসরকারী খাতের সমন্বয় অনেক বেড়েছে। যেসব সমস্যা আছে সেগুলো দূর করার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের গভীর আলোচনা হচ্ছে। এজন্য বাংলাদেশের প্রতি বিদেশী বিনিয়োগকারীদের আস্থা অনেক বেড়েছে। ভারতের আদানি ও রিলায়েন্সের মতো বহুজাতিক কোম্পানি বাংলাদেশে বিনিয়োগ নিয়ে আসার আগ্রহ দেখাচ্ছে। তিনি বলেন, এর আগে কখনও এত বড় বিনিয়োগ দেশে আসেনি। এতেই প্রমাণিত হয় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা বাড়ছে। তবে দেশে যাতে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করে সেজন্য সরকারকে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যাংকের সুদের হার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশেও সুদের হার কম, কিন্তু এ দেশে অনেক বেশি। যদিও এই সুদের হার এখন কিছুটা কমতির দিকে। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার দাবি জানান তিনি। খেলাপী ঋণ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ একদিনে হয়নি। বিভিন্ন সরকারের সময়ে ব্যাংক থেকে এই টাকা বের হয়ে গেছে। তিনি একটি পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলেন, দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কাছে ৬০ হাজার কোটি টাকা পান। ভ্যাট আদায় প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে মাতলুব বলেন, ভ্যাট আদায় ব্যবস্থা ব্যবসায়ীবান্ধব হতে হবে। কোনভাবেই এমন কোন নীতি গ্রহণ ঠিক হবে না, যাতে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তিনি বলেন, র‌্যাবের মাধ্যমে ভ্যাট আদায়ের উদ্যোগ অযৌক্তিক। এতে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কিত। এটা আমাদের মনোপুত হয়নি। আমাদের হয়রানি করলে ব্যবসা করতে পারব না। আর ব্যবসা না করতে পারলে আমরা ভ্যাট দেব কোথা থেকে। তিনি বলেন, এনবিআরকে (জাতীয় রাজস্ব বোর্ড) বলেছি ১ টাকার ভ্যাট দিতে গিয়ে ৩ টাকার হয়রানি চাই না। আমরা লিগ্যাল স্ট্যাটাস বের করেছি। এ স্ট্যাটাসের বাইরে চেক করা যাবে না। আমাদের অশান্তি করলে আমরা ব্যবসা করতে পারব না। এফবিসিসিআইয়ের ২০১৬ সালের কর্মপরিকল্পনা তুলে ধরে মাতলুব বলেন, নতুন পরিচালনা পর্ষদের কিছু কাজ বাকি আছে। এগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। নতুন পরিচালকরা দেশের জন্য কাজ করছেন। তারা সবাই ২০৪১ সালে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য কাজ করছেন। তিনি বলেন, চলতি বাজেটে এফবিসিসিআই সরকারের কাছে ৮৪ প্রস্তাব দিয়েছে। এরমধ্যে প্রায় সব প্রস্তাবই সরকার মেনে নিয়েছে। আসছে বাজেটেও ব্যবসায়িক সমস্যা দূর করার জন্য এফবিসিসিআই প্রস্তাব দেবে। এ সময় গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশে এফবিসিসিআই প্রেসিডেন্ট বলেন, এফবিসিসিআই মিডিয়ার সঙ্গে থাকতে চায়। প্রতিবছরের শুরুতে বিজনেস সাংবাদিকদের এফবিসিসিআই বিজনেস এ্যাওয়ার্ড দিতে চায় বলে জানান মাতলুব। সভায় এফবিসিসিআইর প্রথম সহ-সভাপতি সফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম নামতে নামতে ১১০ ডলার (প্রতি ব্যারেল) থেকে মাত্র ৩০ ডলারে ঠেকেছে। এখনই দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করার সময়। সরকার যেহেতু ব্যবসা করে না, সেহেতু দ্রুত এই উদ্যোগ নেবে বলে আমরা আশা করছি। জ্বালানি সমস্যাকে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেন সংগঠনের পরিচালক মোঃ হেলাল উদ্দিন। তিনি বলেন, বর্তমান অবস্থায় দেশে বিনিয়োগ হবে না। কারণ বিনিয়োগের প্রধান সমস্যা জ্বালানি। নতুন গ্যাস সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না। আর গ্যাস যেখানে আছে সেখানে জমির দাম আকাশচুম্বী। অপরদিকে জ্বালানি তেলের দামও কমছে না। সরকার যদি গ্যাস দিতে না পারে তাহলে গ্যাসের দামে জ্বালানি তেল দিক। দরকার হলে গ্যাসের দামও কিছুটা বাড়াক। তা না হলে মানুষ বিনিয়োগে যাবে না। হেলাল উদ্দিন বলেন, গ্যাস দিয়ে পণ্য তৈরি করতে ১০ টাকা খরচ হলে জ্বালানি তেলে একই পণ্য তৈরি করতে ১৫ টাকা বা তার বেশি লাগবে। তাহলে জেনে বুঝে কে এই বিষ খাবে ? তিনি বলেন, বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমেছে, এখনই দেশের বাজারে কমানোর সুযোগ। দরকার হলে সরকার গ্যাসের দাম বাড়াক। বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের জন্য সরকারকে এ সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অনুষ্ঠানে বিনিয়োগ বাড়াতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ধরে রাখার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও দূর করার কথা বলেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সফিউল ইসলাম। তিনি বলেন, সরকার বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়েছে, তবে সঞ্চালন ও বিতরণ ব্যবস্থার আরও উন্নতি হওয়া দরকার। বাংলাদেশে কারখানার জন্য জমি পাওয়া সবচেয়ে কঠিন। যেখানে কারখানার উপযুক্ত জমি আছে তার দাম অনেক। পৃথিবীর কোথাও এত দাম নেই। সুদ হার বেশি। এগুলো কমলে উৎপাদন খরচ কমত, তাতে দেশের জনগণ যেমন সুবিধা পেত, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ত। টাকা পাচার নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সফিউল ইসলাম বলেন, টাকা ও পানি আইন দিয়ে আটকানো যায় না। দেশ থেকে টাকা বিদেশে যায় বিভিন্ন কারণে। নিরাপত্তা, শান্তি শৃঙ্খলা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলে কেউ টাকা নিয়ে বিদেশে যাবে না। দেশে এখন যারা অনেক বড় হয়েছে তাদের কেউ কেউ হয়ত সন্তানদের কথা ভাবে। আইনের শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হলে এরকম হবে না। একই মত দেন এফবিসিসিআইএ’র পরিচালক শেখ ফজলে ফাহিম। তিনি গতবছরের শুরুতে বিএনপির টানা আন্দোলনের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, বিনিয়োগ পরিবেশ নেই, দেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- হচ্ছে এমন আস্থাহীনতা তৈরি হলে তো পুঁজি পাচার হবেই। সংগঠনের পরিচালক আবু নাসের বলেন, রাজনৈতিক হানাহানি মুক্ত পরিবেশ থাকলে ২০১৬ সাল হবে বিনিয়োগের বছর। তবে এজন্য জ্বালানি, অবকাঠামো খাতে সরকারের প্রয়োজনীয় বিনিয়োগও করতে হবে।
×