ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের আরও বিরোধিতা করলেন ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী

প্রকাশিত: ০৮:০১, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের আরও বিরোধিতা করলেন ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবসরে যাওয়ার পর বিচারপতিরা রায় লিখতে পারবেন না- প্রধান বিচারপতির এমন বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়া। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে একমত প্রকাশ করে তিনি বলেছেন, অবসরের পর রায় লেখা যাবে না- সংবিধানে এমন কোন নির্দেশনা নেই। তাই বিষয়টিকে সংবিধান পরিপন্থী বলারও সুযোগ নেই। রবিবার জাতীয় সংসদে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্য কর্মীদের এমন প্রতিক্রিয়া জানান ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া। তিনি প্রধান বিচারপতিকে বিচারসংক্রান্ত বিষয়ে উন্মুক্তভাবে এভাবে বক্তব্য না দেয়ারও আহ্বান জানান। উল্লেখ্য, গত ১৭ জানুয়ারি প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা তার বাণীতে বলেন, কোন কোন বিচারপতি রায় লিখতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেন। অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর পর্যন্ত রায় লেখা অব্যাহত রাখেন, যা আইন ও সংবিধানপরিপন্থী। সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিগণ বাংলাদেশের সংবিধান, আইনের রক্ষণ, সমর্থন ও নিরাপত্তা বিধানের শপথ গ্রহণ করেন। কোন বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর তিনি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে গণ্য হন বিধায় তার গৃহীত শপথও বহাল থাকে না। আদালতের নথি সরকারী দলিল (পাবলিক ডকুমেন্ট)। একজন বিচারপতি অবসর গ্রহণের পর আদালতের নথি নিজের কাছে সংরক্ষণ, পর্যালোচনা বা রায় প্রস্তুত করা এবং তাতে দস্তখত করার অধিকার হারান। আশা করি বিচারকগণ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে এমন বেআইনী কাজ থেকে বিরত থাকবেন। এরপর বৃহস্পতিবার রাতে মৌলভীবাজার আইনজীবী সমিতির নৈশভোজ অনুষ্ঠানেও তিনি একই কথা বলেন। এ অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, অতীতে চললেও এখন থেকে আর অবসরের পর বিচারপতিদের রায় লিখতে দেয়া হবে না। প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের পর সাবেক বিচারপতি ও সিনিয়র আইনজীবীরা প্রধান বিচারপতির এ বক্তব্যের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত হতে পারেননি। শনিবার আইনমন্ত্রী জনকণ্ঠের সঙ্গে এক প্রতিক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতির বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করে বলেন, অবসরের পর রায় লেখা যাবে নাÑ এমন নির্দেশনা সংবিধানে নেই। আইনমন্ত্রীর বক্তব্যকে সমর্থন দিয়ে প্রধান বিচারপতিকে জনসম্মুখে বিচার বিভাগ নিয়ে বক্তব্য না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ডেপুটি স্পীকার। রবিবার তিনি বলেন, সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি বেশ কিছু বক্তব্য রাখছেন, যা অতীতে কোন প্রধান বিচারপতিকে করতে দেখা যায়নি। বিচার প্রক্রিয়ার বিষয়গুলোর আলোচনা বিচারকদের মধ্যেই রাখা উচিত। এটাকে জনসম্মুখে না বলাই উচিত। এভাবে উন্মুক্তভাবে এ নিয়ে আলোচনা বিচার বিভাগের জন্য ভাল কিছু নয়। প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রের একটি বিভাগের প্রধান। তাই এভাবে তার বক্তব্য আসা বিচার বিভাগের জন্য শ্রেয় নয় বলেই মনে করি। ডেপুটি স্পীকার আরও বলেন, অবসরের পর রায় লেখা যাবে নাÑ এমন কোন নির্দেশনা সংবিধানে নেই। তাছাড়া যেই বিচারক তার অবসরে যাওয়ার আগের দিন রায় দেবেন, সেই রায়ের বিষয়ে তিনি কী করবেন? একজন বিচারকের জন্য ওই দিনের কজলিস্টে কমপক্ষে দেড় শ’ মামলা থাকে। সেক্ষেত্রে একদিনে একজন বিচারককে ৬০-৭০টি মামলার রায় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিতে হয়। সেক্ষেত্রে অবসরে যাওয়ার আগের দিন তিনি কিভাবে এতগুলো মামলার রায় লিখবেন? তাকে তো সময় দিতে হবে। ডেপুটি স্পীকার বলেন, অবসরের পর রায় লেখার সুযোগ দেয়া হবে নাÑ এ ধরনের মন্তব্য মোটেও বাস্তবসম্মত নয়।
×