ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার বিরুদ্ধে আজ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবে

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৫ জানুয়ারি ২০১৬

খালেদার বিরুদ্ধে আজ রাষ্ট্রদ্রোহ  মামলা  হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিরূপ মন্ত্যব্য, জাতির পিতাকে নিয়ে কটাক্ষ করা এবং আওয়ামী লীগে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই, যারা আছে সবাই ভুয়া- এই ধরনের মন্তব্য করায় আজ সোমবার সকাল ৯টায় ঢাকার সিএমএম কোর্টে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদার জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদোহের মামলা দায়ের করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী জনকণ্ঠকে বলেন, ‘আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি লিখিত আবেদন করেছিলাম ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারায়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছে।’ আজ সোমবার ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৩(ক), ১২৪(ক), ৫০৫ ধারার খালেদা জিয়ার ‘অপরাধ’ আমলে নেয়ার জন্য মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করব। নিয়ম অনুসারে আমি আবেদন করেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহের কিছু নেই বলে উল্লেখ করেছেন তার আইনজীবী ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া গত ২১ ডিসেম্বর শহীদদের সঠিক তথ্য থাকার বিষয়ে যা বলেছেন তাতে কোনভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহ হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি এটা তার অত্যন্ত সময়োপযোগী বক্তব্য। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে আমরা শুধু মুখের কথা বলি- ৩০ লাখ শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তাদের সঠিক ঠিকানা-তথ্য আমাদের কাছে নেই। এটি জাতির জন্য দুর্ভাগ্য।’ এদিকে, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে মন্তব্য করায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা করার অনুমতি দিয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। রবিবার রাজধানীর চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) মাদকবিষয়ক এক বিতর্ক প্রতিযোগিতার ফলাফল শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী এ কথা বলেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করা ওই আবেদনে বলা হয়, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। এছাড়া জাতির পিতা ও আওয়ামী লীগ নিয়েও বিরূপ মন্তব্য করেছেন তিনি। এসব সাংবিধানিকভাবে স্বীকৃত এবং প্রতিষ্ঠিত বিষয়। এ বিষয়ে নতুন করে বিতর্কের অবতারণা করায় তার অপরাধ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল বলে মনে করা হচ্ছে। খালেদা সংবিধান লঙ্ঘন করে কথা বলেছেন এবং রাষ্ট্রদ্রোহমূলক অপরাধ করেছেন। আইনী নোটিস দেয়ার পরও তিনি ক্ষমা চাননি বা বক্তব্য প্রত্যাহার করেননি। সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী জনকণ্ঠকে বলেন, খালেদা জিয়া এক অনুষ্ঠানে বলেছেন মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ লোক শহীদ হননি। জাতির পিতাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, তিনি স্বাধীনতা চাননি। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশ আওয়ামী লীগে কোন মুক্তিযোদ্ধা নেই। যারা আছে সবাই ভুয়া। এসব বলায় নিয়ম অনুসারে তাকে উকিল নোটিস দেয়া হয়েছিল। নোটিসের কোন জবাব দেননি। সে কারণে তার বিরুদ্ধে আজ রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দায়ের করা হচ্ছে। তার আর্জি আমলে নেয়ার জন্য সোমবারই তিনি ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে আবেদন করবেন। প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশে খালেদা জিয়া বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক আছে। আজকে বলা হয় এত লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে, আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানা রকম তথ্য আছে।’ ওই বক্তব্যে ‘দেশদ্রোহী’ মনোভাবের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে গত ২৩ ডিসেম্বর তা প্রত্যাহার করতে উকিল নোটিস পাঠান সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মমতাজ উদ্দিন আহম্মেদ মেহেদী, যিনি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। ওই নোটিসে খালেদাকে জাতির কাছে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়ে সাত দিনের মধ্যে বক্তব্য প্রত্যাহার করে নিতে বলা হয়। নোটিসের জবাব না পেয়ে গত সপ্তাহে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মামলা দায়েরের অনুমোদন চেয়ে আবেদন করেন মেহেদী। এর ধারাবাহিকতায় গত ২১ জানুয়ারি অনুমোদন মেলে। খালেদার বক্তব্যে রাষ্ট্রদ্রোহ হয়নি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার বক্তব্যে কোনভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। রবিবার সুপ্রীমকোর্ট বার ভবনে এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন, তাদের কোন সঠিক তথ্য নেই। এ বিষয়ে সঠিক তথ্য থাকা দরকার। তার এ বক্তব্যে কোনভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহ হয়নি। খন্দকার মাহবুব বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৪(এ) ধারায় রাষ্ট্রদ্রোহের যে সংজ্ঞা রয়েছে, খালেদা জিয়ার বক্তব্য সে সংজ্ঞায় পড়ে না। এ সংজ্ঞা অনুযায়ী সরকারকে উৎখাতের জন্য জঙ্গী কার্যক্রম চালালে সেটা রাষ্ট্রদ্রোহ হয়। তিনি আরও বলেন, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা বা সঠিক তথ্য এখনও ঠিক করা হয়নি। শহীদদের পরিবারকে সহায়তার জন্যও সঠিক তথ্য থাকা দরকার। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে শহীদদের সঠিক তথ্য নির্ধারণের ব্যবস্থা নেবে। বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে সংযুক্ত করা হবে বলেও জানান তিনি। বিএনপি চেয়ারপার্সন যে বক্তব্য দিয়েছেন তা সঠিক। তার বক্তব্যে কোনভাবেই রাষ্ট্রদ্রোহ হয়নি।
×