ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ জানুয়ারি ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ মাঠে মারা গেছে শীত! মাঘেও দেখা নেই। দেখা মিলছিল না। এ কারণেই হয়তো সম্মান রক্ষায় এগিয়ে এলো বৃষ্টি! হঠাৎ বৃষ্টিতে বুধবার ভিজেছে বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলির শহর ঢাকা। সারাদিন মুখ গোমরা করে রাখা আকাশ সন্ধ্যায় কেঁদে ফেলে। সঙ্গে ছিল ঠাণ্ডা বাতাস। দুইয়ের সম্মেলন কিছু সময়ের জন্য হলেও হাঁড় কাঁপিয়ে দেয়। একটু দেরি করে বাসায় ফেরা কর্মজীবী মানুষ কাবু হয়ে যান। বৃহস্পতিবারও ঠা-া বাতাসে শীত ভর করেছিল। আবহাওয়া অফিসের ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ ঘেঁটে দেখা যায়, এ বৃষ্টি মূলত লঘুচাপের প্রভাবে। এখন স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে বঙ্গোপসাগরে। পূবালী লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। ফলাফল- বৃষ্টি। দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে শীত বাড়ে। বৃহস্পতিবারও ছিল ঠা-া হাওয়া। প্রকোপ বেড়েছিল শীতের। কেউ কেউ ঠা-া বাতাসকে শৈত্যপ্রবাহ ভেবে ভুলও করছেন। এ আশঙ্কা সামান্যই। বরং বৃষ্টি পুরোপুরি বিদায় নিলে কমে যাবে শীতও। আবহাওয়া অফিসের বার্তা সঠিক হলে মাঘের শেষ দিনগুলোতেও রাজধানীবাসীর ভোগান্তি বাড়ার কথা নয়। বৃষ্টির কথা হচ্ছিল, এর বিশেষ উপকারটিও স্মরণ করা প্রয়োজন। বুধবারের সামান্য বৃষ্টি গোটা শহরকে ধুয়ে সাফ করেছে। বৃষ্টিহীন শুষ্ক আবহাওয়ায় ঢাকার রাস্তাঘাট শুকিয়ে কড়কড়ে হয়ে গিয়েছিল। ধুলোয় এমনকি গাছের পাতা দেখা যেত না। কয়েক স্তর ধুলো জমে সবুজ পাতা ধূসর হয়ে গিয়েছিল। কোন কোন সবুজ এলাকা বিদঘুটে কালো বর্ণ ধারণ করেছিল। এ পর্যায়ে প্রকৃতির নিজস্ব উদ্যোগ খুব জরুরী হয়ে পড়েছিল। ঠিক তখনই বৃষ্টির জল। বৃহস্পতিবার রাজধানীর বৃক্ষপ্রধান এলাকাগুলো ঘুরে দেখা গেছে, সবুজ ফিরে এসেছে। রাস্তাঘাটের ময়লা আবর্জনাও দূর হয়েছে কিছুটা। মেয়রদের কথা বলতে হয়। ঢাকার দুই মেয়র আনিসুল হক ও সাঈদ খোকন ভালই ‘ব্যাট’ করছেন। বিশেষ করে আনিসুল হকের উদ্যোগ অত্যন্ত সাহসী। যেসব ইস্যুতে ভুক্তভোগীরাও কথা বলতে ভুলে গিয়েছিল সেসব ইস্যু নিয়ে তিনি এখন মাঠে। অবৈধ দখলদারদের কঠোর হস্তে দমন করছেন তিনি। কখনও বুঝিয়ে। কখনও বা বল প্রয়োগ করছেন। নগরবাসীকে সঙ্গে নিয়েই চলছে অভিযান। তেজগাঁও গাবতলীর মতো জটিল অপারেশন দারুণভাবে সফল করেছেন আনিসুল হক। এমনকি ওয়াসা নিজেদের দখল হয়ে যাওয়া খাল-বিল উদ্ধার না করতে পারলে সিটি কর্পোরেশনকে দায়িত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে কমিটমেন্টটা অনুমান করা যায়। সাইদ খোকনও থেমে নেই। অবৈধ উচ্ছেদ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান নিয়ে মাঠে তিনি। অবশ্য কোন কোন উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেয়ার চেষ্টাও পরিলক্ষিত হচ্ছে। এই যেমন বৃহস্পতিবার কল্যাণপুর এলাকায় অভিযান চালায় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বস্তি উচ্ছেদে নামে পুলিশ। ১৫ একর জমির ওপর গড়ে ওঠা নতুন বাজার পোড়াবস্তি। উচ্ছেদ অভিযান তাই সহজ ছিল না। যথারীতি বাধার মুখে পড়ে পুলিশ। কয়েক দফা ধাওয়া পাল্টাধাওয়া এবং বিক্ষোভের মধ্যে অবৈধ স্থাপনা ভাঙার কাজ করে বুলডোজার। না, পুরো কাজ সমাপ্ত করা সম্ভব হয়নি। আদালতের আদেশে থামে উদ্ধার কার্যক্রম। শেষ করা যাক মতিঝিল এলাকার খেজুরবাগানের কথা বলে। অনেকেই জানেন না, এখানকার কলোনীগুলোতে আছে বেশকিছু খেজুরগাছ। রাজধানী ঢাকায় খেজুরগাছের সারি দেখে মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। অন্য সময় গাছের সৌন্দর্যটুকু উপভোগ করাই কাজ। আর এ শীতে সংগ্রহ করা হচ্ছে সুস্বাদু রস। গত কয়েকদিন টিএ্যান্ডটি কলোনি, এজিবি কলোনি ও ব্যাংক কলোনি ঘুরে দেখা যায়, গ্রামের মতোই দৃশ্য! গাছের অগ্রভাগে সুন্দর করে কেটে হাঁড়ি বসিয়ে দেয়া হয়েছে। এ কাজে পটু এক বৃদ্ধ নিপুণ হাতে কাজটি করছিলেন। তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, গাছগুলো রস সংগ্রহের জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত। এরই মাঝে কোন কোন গাছ থেকে রস খাওয়া শেষ হয়েছে। কিছু গাছে পরীক্ষামূলকভাবে বসানো হচ্ছে হাঁড়ি। মতিঝিলের মতো এলাকায় এমন দৃশ্য দেখে সত্যি ফেলে আসা গাঁয়ের কথা মনে পড়ে যায়।
×