ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জে ৫ খুন

বাদীর ভাগ্নে মাহফুজ ৭ দিনের রিমান্ডে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ১৯ জানুয়ারি ২০১৬

বাদীর ভাগ্নে মাহফুজ ৭ দিনের রিমান্ডে

নিজস্ব সংবাদদাতা, নারায়ণগঞ্জ, ১৮ জানুয়ারি ॥ নারায়ণগঞ্জে দুই শিশুসহ একই পরিবারের ৫ খুনের ঘটনায় নিহত তাসলিমার স্বামী ও মামলার বাদী শফিকুল ইসলামের ভাগ্নে মাহফুজকে সাত দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। সোমবার বিকেল সাড়ে ৫টায় নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচএম শফিকুল ইসলামের আদালতে হাজির করে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জেলা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল খায়ের ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানালে আদালত শুনানি শেষে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। এদিকে মামলাটি অধিকতর তদন্তের জন্য ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রবিবার রাতে এ মামলাটি ডিবি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মামলার তদন্তের সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন। এদিকে পাঁচ খুনে নিহত তাসলিমাসহ ৪ জনের লাশ নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া করবস্থানে ও নিহত লামিয়াকে ময়মনসিংহ নান্দাইল উপজেলার চর বড়ভিলায় রবিবার রাতে দাফন করা হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন সোমবার দুপুরে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের জানান, ৫ খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটককৃত ৬ জনের মধ্যে দুইজনকে আটক দেখানো হয়েছে। এ দুইজন হলো- নিহত তাসলিমার বোনের ছেলে শাহজাদা এবং মামলার বাদী ও নিহত তাসলিমার স্বামী শফিকুল ইসলামের বোনের ছেলে মাহফুজ। আটককৃত অন্য চারজনকে নজরদারিতে রাখা হয়েছে। পুলিশ সুপার আরও জানান, তারা মামলাটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত তদন্তের জন্য রবিবার রাতে তদন্তভার ডিবিতে হস্তান্তর করা হয়েছে। পুলিশ সুপার জানান, হত্যাকা-ের মোটিভ এখনও সুনির্দিষ্টভাবে উদ্ঘাটন করা যায়নি। তবে যত দ্রুত সম্ভব তার চেষ্টা চলছে। সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে তদন্ত করা হচ্ছে। এদিকে আটককৃত মাহফুজ এবং শাহজাদাকে এখনও নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিহত ৫ জনের ময়নাতদন্ত শেষে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। নিহত তাসলিমা, তার দুই সন্তান সুমাইয়া ও শান্ত এবং তাসলিমার ভাই মোরশেদের লাশ নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া কবরস্থানে এবং লামিয়ার লাশ তার শ্বশুরবাড়ি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চর বড়ভিলা গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় এবং রাতেই এ পাঁচজনের দাফন করা হয়। গত শনিবার রাতে নারায়ণগঞ্জ শহরের ২নং বাবুরাইল এলাকার একটি বাড়িতে একই পরিবারের তাসলিমা বেগম, মেয়ে সুমাইয়া, ছেলে শান্ত, তাসলিমার জা লামিয়া ও তাসলিমা ভাই মোরশেদুল ওরফে মোশাররকে নৃশংসভাবে খুন হয়। পুলিশের ধারণা পারিবারিক দ্বন্দ্ব, আর্থিক লেনদেন অথবা কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ার কারণে এ হত্যাকা- হয়ে থাকতে পারে। এদিকে মামলার এজাহারে ঢাকার কলাবাগানের নাজমা ও শাহজাহান এবং বাদী শফিকের ভাগ্নে মাহফুজের নাম উল্লেখ রয়েছে। নাজমা এবং শাহজাহারের ব্যাপারে উল্লেখ রয়েছে, তাছলিমা তাদের কাছ থেকে চড়া সুদে বিভিন্ন সময় ১২ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিল। সেই টাকা ফেরত দিতে না পারায় তারা তাছলিমাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের হুমকির কারণে গত ৯ মাস আগে ঢাকার কলাবাগান থেকে নারায়ণগঞ্জে চলে আসে তারা। আর ভাগ্নে মাহফুজের সঙ্গে তার ছোট মামীর (নিহত লামিয়া) একটি অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটে ১৫ দিন আগে। ওই ঘটনায় বড় মামী তাসলিমা ভাগ্নে মাহফুজকে জুতোপেটা করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিল। এ দুটি কারণের যে কোন একটি কারণে খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলে তদন্ত সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে। নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল মালেক বলেন, পুলিশ তদন্তের স্বার্থে অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে তাদের গ্রেফতার দেখিয়ে বাকিদের ছেড়ে দেয়া হবে। ঘটনার পর থেকে পুলিশ নিহত তাসলিমা বেগমের খালাতো ভাই দেলোয়ার হোসেন, শাহাজাদা, ভাগ্নে মাহফুজ, নিহত মোর্শেদের হোসিয়ারির কর্মচারী রাসেল, নয়ন, নজিবুন ও সাইফুলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
×