ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ লেনদেনের অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ১৭ জানুয়ারি ২০১৬

ব্র্যাক ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ লেনদেনের অভিযোগ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ এইমস ফার্স্ট গ্যারান্টেড মিউচুয়াল ফান্ডের কাস্টোডিয়ান (জিম্মাদার) হয়েও ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড গোপনীয় তথ্যের সুযোগ নিয়ে অভ্যন্তরীণ লেনদেনের বা (ইনসাইডার ট্রেডিং) মাধ্যমে শেয়ার কিনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ফান্ডের সম্পদ ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান এইমস অব বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনার পরিচালক ইয়াওয়ার সায়ীদ বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) চেয়ারম্যানের কাছে এক চিঠিতে এ ঘটনা তদন্তের অনুরোধও জানিয়েছেন। এদিকে দেশের বেসরকারী খাতের প্রথম এই মিউচুয়াল ফান্ডের শেয়ার কেনার কথা স্বীকার করে ব্র্যাক ব্যাংক বলেছে, সেটা খুব কম; ‘উল্লেখযোগ্য পরিমাণ’ নয়। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় আদালতে আপীল করার বিষয়টি এইমস ভালভাবে নিতে পারেনি বলেও বলছে ব্যাংকটি। জানা গেছে, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিধি অনুযায়ী, কোন ফান্ডের কাস্টোডিয়ান অভ্যন্তরীণ লেনদেনে অংশ নিতে পারে না। এই মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করতে বিএসইসির সিদ্ধান্ত নিয়ে আপীল বিভাগের শুনানিতে সম্প্রতি আরও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পক্ষভুক্ত হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক। বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির কথা রয়েছে। দশ বছর সময় বেঁধে দিয়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ক্লোজড-এ্যান্ড মিউচুয়াল ফান্ড বন্ধ করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির সিদ্ধান্তকে এইমস ফার্স্ট ওয়ান ও গ্রামীণ ওয়ান মিউচুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে আদেশ দিয়েছেন চেম্বার বিচারপতি। এ বিষয়ে এইমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, আমরা জানতে পেরেছি, ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেড নিজের নামে ও সহযোগী প্রতিষ্ঠানের নামে এইমস ফার্স্ট গ্যারান্টেড মিউচুয়াল ফান্ডে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিনিয়োগ করেছে। বিষয়টি আমরা বিএসইসি চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়ে জানিয়েছি; আমাদের কাছে রিসিভ কপি আছে। কাস্টোডিয়ান হিসেবে এ মিউচুয়াল ফান্ডের সব সম্পদের রক্ষক ব্র্যাক ব্যাংক; সেই সঙ্গে ফান্ড সংশ্লিষ্ট সব অভ্যন্তরীণ এবং সংবেদনশীল তথ্যও তার জানা। এসব তথ্যের মধ্যে রয়েছেÑ যে কোন সময়ের স্টক হোল্ডিংয়ের বিস্তারিত, খরচ ও বিক্রয় মূল্য এবং প্রত্যেকটি লেনদেন, লাভ ও ক্ষতি ইত্যাদি। যেগুলো বর্তমানের বা সম্ভাব্য কোন বিনিয়োগকারীর পক্ষে জানা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগতভাবে ব্যাংকটির শীর্ষ কর্মকর্তারাও এ ‘অনৈতিক ও অবৈধ’ লেনদেনে অংশ নিয়েছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, দুঃখজনক হলেও সত্য একইভাবে গোপনীয় তথ্যের সুযোগ নিয়ে ব্যাংক ও এর সহযোগী প্রতিষ্ঠানের একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তা নিজেদের ক্ষমতা ব্যবহার করে এ ফান্ডে বিনিয়োগ করেছে, যা কর্পোরেট সুশাসনের সব রীতিনীতির লঙ্ঘন। এই ‘অনৈতিক ও অসৎ কমর্কাে র’ মাধ্যমে ব্র্যাক ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ডের আস্থার সঙ্গে ‘আপোস’ করেছে এবং জিম্মাদারের একান্ত দায়িত্ব পালনেও ব্যর্থ হয়েছে বলে চিঠিতে অভিযোগ করা হয়। শুধু তাই নয়, এর মধ্যে দিয়ে ১৯৯৫ সালের সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ) বিধিমালা ও এ বিষয়ে আইওএসসিও মানও লঙ্ঘন করেছে তারা। হাইকোর্টের রায় স্থগিত চেয়ে বিএসইসির আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৭ ডিসেম্বর অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী এ বিষয়ে ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত উভয়পক্ষকে স্থিতাবস্থা বজায় রাখতে নির্দেশ দেন। সেই সঙ্গে সেদিন বিষয়টি আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠিয়ে দেয়া হয়, যার ওপর বৃহস্পতিবার শুনানির কথা ছিল। শেষপর্যন্ত বৃহস্পতিবারে শুনানি অনুষ্ঠিত হয়নি। চিঠিতে কাস্টোডিয়ানের হাতে থাকা ইউনিটগুলো বাজারে ছাড়া ও তার নিবন্ধন স্থগিত করাসহ বেশকিছু পদক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। ইয়াওয়ার সাঈদ বলেন, আমার সরাসরি চিঠিটি সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যানের কাছে দিয়েছি।
×