ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জামায়াত ক্যাডার গ্রেফতারে স্বস্তি

নাইক্ষ্যংছড়িতে বসেই রামু হামলার ছক তৈরি করে তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ১৪ জানুয়ারি ২০১৬

নাইক্ষ্যংছড়িতে বসেই রামু হামলার ছক তৈরি করে তোফায়েল

এইচএম এরশাদ, নাইক্ষ্যংছড়ি থেকে ফিরে ॥ পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ি ও রামু উপজেলায় ঘটে যাওয়া নানা ঘটনার নায়ক কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বিহার ও বসতিতে হামলার হোতা নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা পরিষদ থেকে সম্প্রতি অপসারিত চেয়ারম্যান জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমদকে গ্রেফতারে অত্যন্ত খুশি হয়েছেন এলাকার নিরীহ লোকজন। আনন্দের বন্যা বয়ে চলছে তার নির্বাচনী এলাকায়। এ উপজেলার জারুলিয়াছড়ি গ্রামের অনেকে বলেন, তোফায়েল চেয়ারম্যানের বাহিনীর অত্যাচারে বাপ-দাদার বসতভিটা ও জমি নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করেছি তোফায়েলের কাছে। জারুলিয়াছড়িতে শিবির ক্যাডারদের মাধ্যমে অত্যাচার চালিয়ে তিনি বহু নিরীহ লোকজনের মূল্যবান জমি নামমাত্র মূল্যে কিনে নিয়েছেন চেয়ারম্যান থাকাকালে। শিবির ও আরএসও ক্যাডার বাহিনীর সদস্যরা তোফায়েল চেয়ারম্যানের কাছে মূল্যবান জমিগুলো বিক্রি করতে সব সময় চাপ প্রয়োগ করতো নিরীহ লোকজনের ওপর। গত ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলা, অগ্নিসংযোগ এবং বৌদ্ধ বসতিতে হামলার ঘটনার মূলহোতা হিসেবে তোফায়েল আহমদের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে দুটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়িতে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাবেক এ শিবির ক্যাডার এক সময় আন্তর্জাতিক অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সিন্ডিকেট গঠন করে অস্ত্র ব্যবসায় মেতে ওঠেন। তার বিরুদ্ধে আরও একটি অস্ত্র মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে আদালতে। নাইক্ষ্যংছড়ির বাসিন্দাদের অনেকে তোফায়েলের নানা অন্যায় অনিয়ম, শহীদ মিনারকে অবজ্ঞা, তার ঘনিষ্ঠ সহচর দুই শ্যালকের নানা কুকীর্তির তথ্য জানিয়ে বলেন, নাশকতায় পরামর্শদাতা তোফায়েল আহমদের উপযুক্ত শাস্তি হওয়া উচিত। তারা জানান, তোফায়েল ভাষা আন্দোলনের মহান স্মৃতিফলক শহীদ মিনারকে অবজ্ঞা করে শহীদ মিনারে জুতা পায়ে অবস্থান, সীমান্ত এলাকায় তার আশ্রয় প্রশ্রয়ে আরএসও রোহিঙ্গা জঙ্গীদের বেপরোয়া মনোভাব, তার আত্মীয়-স্বজনের ও নামে-বেনামে ব্যবসা-বাণিজ্য, সম্পত্তি ক্রয় ও সরকারের আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে অবৈধ ইটভাঁটি স্থাপন করেছে। অসম্ভব চতুর, ধূর্ত এবং স্বেচ্ছাচারী তোফায়েল বিভিন্ন সময়ে নানা কৌশল অবলম্বন করে নিজের অবস্থানকে মজবুত করেছেন। এক ভাই বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে, নিজে শিবিরের সাবেক নেতা ও বর্তমানে জামায়াতের সহ-সভাপতি, অন্যদিকে তার দুই শ্যালক আওয়ামী রাজনীতির পরিচয় ব্যবহার করে তোফায়েলকে নাইক্ষ্যংছড়িতে একচ্ছত্র অধিপতি হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়তা করে চলছেন। শিবির, আরএসও ক্যাডার এবং ঘনিষ্ঠজনকে ব্যবহার করে নিজের অবস্থান যেমন মজবুত করছেন, তেমনি প্রতিপক্ষদের ঘায়েল ও দমিয়ে রাখার জন্য এমন কোন কাজ নেই যা তোফায়েল করতে পারেন না। তার ঘনিষ্ঠ একজন জানিয়েছেন তোফায়েল অত্যন্ত ধূর্তলোক। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তোফায়েলের বিরুদ্ধে যাওয়ার সাহস কারও নেই। নাইক্ষ্যংছড়িতে যে ব্যক্তি তার অন্যায়ের প্রতিবাদ কিংবা নিজেদের অবস্থান শক্ত করার চেষ্টা করছেন, তাকেই তোফায়েল নানা কৌশলে ঘায়েল ও হয়রানি করে থাকেন। আরএসও জঙ্গী মৌলভী আবু ছালেহ ও কয়েকজন জামায়াত নেতাদের নিয়ে তোফায়েল নাইক্ষ্যংছড়িতে বসেই রামুতে বৌদ্ধ বিহারে হামলার ছক কষেছিলেন বলে জানান স্থানীয়রা। এদিকে যারা মাতৃভাষা বাংলার জন্য প্রাণ দিয়ে শহীদ হয়েছেন, ওসব বীর শহীদদের প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখাতেও সাবেক এ শিবির ক্যাডারের গায়ে বাধে। তার আচরণে তা ফুটে উঠেছে শহীদ মিনারকে অবজ্ঞা করার মাধ্যমে। বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে স্বীকার করেন না তোফায়েল আহমদ। মহান শহীদ মিনারে জুতো পায়ে গিয়ে নির্লজ্জতার পরিচয় দিয়েছেন এক সময়। তিনি মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শহীদ মিনারে ফুল দিতে পায়ে জুতা পরেই উঠেছেন শহীদ মিনারে। ওই ছবিটি দেখলে জামায়াত নেতা তোফায়েল আহমদের ঔদ্ধ্যত্যপূর্ণ আচরণ সম্পর্কে সহজেই অনুমেয়। সূত্র জানায়, ছাত্রজীবনে তোফায়েল আহমদ চট্টগ্রাম সরকারী কলেজে উচ্চ শিক্ষার জন্য ভর্তি হয়ে ছাত্রশিবিরের ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পড়ালেখা শেষে একটি মাদ্রাসায় প্রভাষকের চাকরি নিয়ে নিজের নামের আগে ‘অধ্যাপক’ জুড়ে দিয়েছেন। ২০০৩ সালে তিনি নিজের নামের আগে অধ্যাপক জুড়ে দিয়ে কথিত শিক্ষিত সেজে নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য এক ইউপি মেম্বার, কয়েকজন রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জামায়াত-শিবির নেতাদের ব্যবহার করে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের মদদে বহু অপকর্ম করে বেড়িয়েছেন।
×