ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১০ জানুয়ারি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সৈয়দ আশরাফ

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে রাজাকাররা সফল হবে না

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ জানুয়ারি ২০১৬

দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে রাজাকাররা সফল হবে না

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি-জামায়াত জোটসহ সাম্প্রদায়িক অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে দেশকে এগিয়ে নেয়ার দৃঢ় অঙ্গীকার ও শপথের মধ্য দিয়ে রবিবার ঢাকাসহ সারাদেশে পালিত হয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস। বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদন, স্মৃতিচারণ, আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলসহ নানা কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃতজ্ঞ বাঙালী জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেছে স্বাধীনতার মহান স্থপতি ও সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, পাকিস্তানী গোষ্ঠী ৪৪ বছর ধরে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। তারা দেশের বিরুদ্ধে, গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। কিন্তু যত ষড়যন্ত্রই হোক না কেন রাজাকাররা সফল হবে না। একাত্তরে এ দেশের মানুষ ওই পাকিস্তানীদের পরাজিত করেছিল। এ দেশের মানুষ পরাজিত হয়নি। তিনি বলেন, স্বাধীন হওয়ার পর পাকিস্তানীরা ভেবেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হলে সাত দিনও টিকবে না। বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে থাকবে, তা তারা কখনও ভাবেনি। তাই যতই ষড়যন্ত্র করুক তারা আগেও সফল হতে পারেনি, এখনও সফল হতে পারবে না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এই অগ্রযাত্রা কেউ ব্যাহত করতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে সকাল থেকেই বঙ্গবন্ধু ভবন ও তার আশপাশের এলাকায় মানুষের ঢল নামে। সকাল সাড়ে ৬টার মধ্যে হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতিতে পুরো এলাকা জনারণ্য হয়ে পড়ে। শিশু-কিশোরসহ হাজার হাজার নারী-পুরুষ বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙালী জাতির শ্রেষ্ঠসন্তান জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ফুলে ফুলে ভরে যায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতির বেদিমূল। সকাল ৭টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সরকার প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। এ সময় তিনি সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে তিনি আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দদের সঙ্গে নিয়ে বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে আওয়ামী লীগের পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর বঙ্গবন্ধু ভবনের ভেতরে যান এবং সেখানে বেশ কিছুক্ষণ সময় অতিবাহিত করেন। এ সময় আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেনÑ শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, এইচটি ইমাম, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সতীশ চন্দ্র রায়, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এলজিআরডি মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, এনামুল হক শামীম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু সাংবাদিকদের কাছে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় বলেন, যেদিন থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হয়েছিল, খালেদা জিয়া সেদিন থেকে আন্দোলন শুরু করেছিলেন। তার (খালেদা জিয়া) আন্দোলনের মুখ্য উদ্দেশ্য হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের মুক্ত করা। যেটা পাকিস্তানীরা চায় দেশকে সেই খাতে প্রবাহিত করা। সেই রাজনীতির ধারক-বাহক এবং মুখপাত্র হচ্ছেন খালেদা জিয়া। বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানী একজন কূটনীতিককে প্রত্যাহার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওই কূটনীতিকের বিরুদ্ধে জঙ্গী পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ ছিল। সেজন্য তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এখনও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক চক্রান্ত থেকে শুরু করে সব ধরনের চক্রান্ত চলছে। কেউ আদর্শ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে, আবার কেউ পাকিস্তানী এজেন্ট হিসেবে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ভবন ত্যাগ করার পর সর্বস্তরের মানুষ জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, কৃষক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় কমিটি, জাতীয় শ্রমিক লীগ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে। আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেÑ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিল, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, বাংলাদেশ তাঁতি লীগ, জাতীয় ঘাট শ্রমিক লীগ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ, শেখ রাসেল শিশু সংঘ, আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ সমিতি, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন শ্রমিক কর্মচারী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংহতি পরিষদ, আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী, বঙ্গবন্ধু হারবাল চিকিৎসক পরিষদ, ঢাকা আইনজীবী সমিতি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদ, কেন্দ্রীয় যুব শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম, বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা লীগ, আওয়ামী ওলামা লীগ, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় চারনেতা পরিষদ, বঙ্গমাতা পরিষদ, ঢাকা মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু সাহিত্য পরিষদ, বাংলাদেশ রিকশা শ্রমিক লীগ, আওয়ামী তরুণ লীগ, বাংলাদেশ হকার্স লীগ, বাংলাদেশ-ভারত সম্প্রীতি পরিষদ, বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব পরিষদ, স্বাধীনতা হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক পরিষদ, শেখ রাসেল স্মৃতি পরিষদসহ অজস্র সংগঠন। দেউলিয়া হয়ে গেছে বিএনপি- সুরঞ্জিত ॥ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, জোট ভাঙ্গে আপনার (বিএনপি), দেউলিয়া হয় আওয়ামী লীগ। এটা কেমন কথা? আপনার সমস্যা এখন সঙ্কটে পরিণত হয়েছে। আপনাদের সঙ্কটে আওয়ামী লীগ দেউলিয়া হবে কেন? দেউলিয়া হয়েছেন আপনারা। রবিবার শিল্পকলা একাডেমিতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট ঢাকা বিভাগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিভ্রান্ত রাজনীতি নিয়ে বিএনপি বিপদে পড়েছে। বুদ্ধি দিবে তারেক রহমান আর সিদ্ধান্ত নিবে খালেদা জিয়া। এভাবে এতবড় দল চলে না। বিভ্রান্ত রাজনীতি নিয়ে আপনারা (বিএনপি) বিপদে পড়েছেন। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বছরে ছয় হাজারের বেশি লোক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ হচ্ছে না। অজুহাত না দিয়ে আইনের প্রয়োগ করতে হবে। এক বঙ্গবন্ধু সেতুর কাছেই ৭ জন মারা যাওয়ায় দেশবাসী উদ্বিগ্ন, সঙ্গে আমরাও উদ্বিগ্ন। তাই রাজপথের যাত্রা নির্বিঘœ করতে হবে। মাকসুদুর রহমান খান মাসুদের সভাপতিত্বে সভায় আরও উপস্থিত ছিলেনÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানা প্রমুখ। বিএনপির ভাঙ্গন অপরিহার্য- হানিফ ॥ আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপির ভাঙ্গন অপরিহার্য। এ ভাঙ্গন কেউ ঠেকাতে পারবে না। খালেদা জিয়ার ভুল সিদ্ধান্ত ও নাশকতামূলক কর্মকা-ের কারণে বিএনপির ভেতরে অস্থিরতা কাজ করছে। কিছুদিন আগে বিএনপির এক নেতা পদত্যাগ করেছেন। এখন আবার তাদের জোটে ভাঙ্গন হয়েছে। ভাঙ্গনে দিশেহারা হয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীররা আওয়ামী লীগকে দোষারোপের চেষ্টা করছেন। রবিবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জাতীয় শ্রমিক লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
×