ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১

কালিয়ায় পৌর নির্বাচনের আগে-পরে অবরুদ্ধ সংখ্যালঘুরা

লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১০ জানুয়ারি ২০১৬

লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি

রিফাত-বিন-ত্বহা, নড়াইল ॥ পৌরসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নড়াইলের কালিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর অমানুষিক অত্যাচার নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। পুলিশের উপস্থিতিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে গিয়ে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা চাঁদা আদায় করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বেছে বেছে সংখ্যালঘুদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের থেকে জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মারধরসহ হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি মহিলাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। পুলিশের বিতর্কিত ভূমিকায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা আর আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। সব মিলিয়ে কালিয়া এখনও অবরুদ্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষ বলছে, আওয়ামী লীগ করা কি আমাদের অপরাধ? এ অভিযোগ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রের। ঘোষণাওরা গ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাসিন্দা প্রলয় কুমার ঘোষ বলেন, নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরা তার গু-াবাহিনী (বিএনপি-জামায়াত) দিয়ে আমাদের ওপর নির্মমভাবে অত্যাচার চালিয়েছে। এমনকি মহিলাদের ভয়ভীতি দেখানো হয়েছে। এ নির্যাতন ১৯৭১ সালের ভয়াবহতাও ছাড়িয়ে গেছে। তাদের অত্যাচার অবর্ণনীয়। কালিয়া বাজারের জুয়েলারি ব্যবসায়ী রামনগর গ্রামের উত্তম কুমার রায় বলেন, নির্বাচনের আগের দিন সন্ধ্যায় আমার কাছে চাঁদা দাবি করা হয়। পরে ওহিদ ভাইয়ের (নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরা) কাছে ২০ হাজার টাকা পৌঁছে দিয়ে আসি। কালিয়া পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সভাপতি শিবুপদ বিশ্বাস বলেন, পরাজিত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরা মফিজুর রহমান, গোলাম সরোয়ারসহ তার সমর্থকরা আমার বাড়িতে এসে আমাকে হত্যার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। আমার কাছে টাকা না থাকায় দু’জনের কাছ থেকে দেনা করে ওয়াহিদুজ্জামানকে ৫০ হাজার চাঁদা দিয়েছি। তিনি আরও বলেন, খুলনাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে মস্তান ভাড়া করে এনে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। তাদের কাছে রয়েছে অস্ত্রের ঝনঝনানি। পৌর এলাকার এক ভোটার বলেন, ওহিদ, মফিজুর রহমান, গোলাম সরোয়ারসহ দু’তিন অস্ত্রধারী আমাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে ৩০ হাজার টাকা আদায় করেছে। এক ওয়ার্ড কাউন্সিলর তপন কুমার দত্ত বলেন, ওহিদ ভাই আমাকে মোবাইল ফোনে টাকা দাবি করেছে এবং আমার দোকান থেকে ২৫ হাজার টাকার মালামাল নিয়ে কোন টাকা দেননি। ছোট কালিয়ার এক ঠিকাদার বলেন, ওয়াহিদুজ্জামান মামলার ভয় দেখিয়ে আমার কাছে এক লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। চাঁদার টাকা দিতে চাইনি বলে আমাকে এলাকা ছাড়তে হয়েছে। আমার নামে মামলাও হয়েছে। বেন্দা গ্রামের ইটভাঁটি মালিক তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, নৌকা প্রতীকের প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরা প্রশাসনের ভয়ভীতি দেখিয়ে আমার ইটের ভাটা গুঁড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। অস্ত্রধারীদের দিয়ে হুমকি দিয়েছে। মিথ্যা মামলায় আমাকে এবং বাবাকে আসামি করা হয়েছে। আমি এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছি। প্রাণনাশের শঙ্কায় আছি। এদিকে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ জানান, কালিয়া পৌর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরা এবং তার সমর্থকরা কালিয়ায় অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে চলেছে। সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করছে। জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর বাবু কমলাখী বিশ্বাস অভিযোগ করে বলেন, নৌকা প্রতীকের পরাজিত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান হীরার সন্ত্রাসী বাহিনী বিএনপি-জামাতের ক্যাডারদের সাথে নিয়ে নির্বাচনের আগে-পরে কালিয়ায় ব্যাপক সন্ত্রাসী কর্মকা- চালিয়েছে। কালিয়া এখনও অবরুদ্ধ। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি-ধমকি ও হামলা-ভাংচুরের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। আমার কাছ থেকেও অস্ত্রের মুখে ৩০ হজার টাকা নিয়েছে। আমরা কেউই এখন নিরাপদ নই। আওয়ামী লীগ করা কি আমাদের অপরাধ? নির্বাচনে বিজয়ী স্বতন্ত্র প্রার্থী ফকির মুশফিকুর রহমান লিটনের সমর্থকদের ভয়ভীতি দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। বাড়িঘর ভাংচুর করেছে। গত ২৪ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তির কালিয়া কার্যালয়ে ওয়াহিদুজ্জামান হীরার লোকজন হামলা-ভাংচুর চালিয়েছে । এ ঘটনায় তিনজন আহত হন। দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। এ সময় সংসদ সদস্য ওই কার্যালয়ে প্রায় ২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ ছিলেন। এসব বিষয়ে নড়াইলের পুলিশ সুপার সরদার রকিবুল ইসলামের সঙ্গে মোবাইলে বার বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
×