ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

উড়ছে কেতন বিজয়ের

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

উড়ছে কেতন বিজয়ের

তখন ২০০৬। শহরের এক কোণে জন্ম নিল বাংলা ব্যান্ডের নতুন শিশু। ব্যান্ড ‘বিজয়’। বেশ ক’টি মিশ্র এ্যালবামে কাজ করলেও নিজেদের একক বেরোয়নি এতদিনে। অবশেষে গত ১৯ ডিসেম্বর বাজারে এসেছে তাদের প্রথম এ্যালবাম- ‘... এবং আমরা’। ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে এই ক’দিনেই। আনন্দকণ্ঠের মুখোমুখি ব্যান্ড বিজয়ের ভোকাল এবং লিড গিটারিস্ট বিজয় মামুন। লিখেছেন- শ্রাবণ আহমেদ রাজধানীর খুব কাছেই বিক্রমপুর। ‘বিজয়’ ব্যান্ডের সবাই সেখানেই। শো করতে গেছেন। এটা এখনকার প্রায়ই নিত্যকর্ম। মানুষের এতটুকু কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়াটা তাদের লক্ষই ছিল। ‘আমরা সব সময়ই সঙ্গীতের মাধ্যমে মানুষের মন জয় করতে চাই।’ বললেন বিজয় মামুন। তাকে পাওয়া গেল মধ্যরাতে। তখনও রাতের খাবার হয়নি। খেতে যাচ্ছিলেন সবাই মিলে। কথা হলো তখনই। ‘ব্যান্ড মিউজিক আমি ছোটবেলা থেকেই পছন্দ করি। তখন থেকেই স্বপ্ন ছিল, আমি একটা ব্যান্ড করব। করলামও। শুরুটা চারজন মিলে। আমি ছাড়া বাকিরা এখন দলে নেই। গান থেকে দূরে সরে গেছে ব্যক্তিগত কাজের জন্য। নতুন যারা এসেছে, তাদের সঙ্গে গত পাঁচ বছর ধরেই একসঙ্গেই আছি।’ অতীত থেকে একটু ঘুরে আসলেন বিজয় মামুন। এখন ভোকাল এবং লিড গিটারিস্ট হিসেবে তিনি তো আছেনই, কীবোর্ডে আছেন মুরাদ, ড্রামসে জনি, বেজ গিটারে মেরাজ এবং ব্যান্ড ম্যানেজার হিসেবে আছেন পাপ্পু শিকদার। নামটা ‘বিজয়’ বলেই কি বিজয়ের মাসে প্রথম এ্যালবাম! এমন একটা বিস্ময় ঘুরতেই পারে শ্রোতাদের মাথায়। বিষয়টা স্পষ্ট করলেন ‘যদি বৃষ্টি হতাম, তোমায় ভিজিয়ে দিতাম’ গেয়ে জনপ্রিয়তা কুড়ানো এই শিল্পী। ‘এ্যালবামটি নিয়ে আমরা দীর্ঘদিন ধরেই কাজ করছিলাম। সব কাজ বিজয়ের মাসেই কিভাবে যেন শেষ হয়ে গেল। অডিও এ্যালবাম প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জি-সিরিজও আমাদেরকে হাত বাড়িয়ে দিল। সবকিছু মিলিয়ে সৌভাগ্যবশত আমরা ডিসেম্বরেই এ্যালবামটি মুক্তি দিতে পেরেছি।’ সেই ২০০৬ থেকে ২০১৫। নয়টি বছর কিন্তু খুব কম সময় নয়। প্রথম এ্যালবাম মুক্তি দিতে এত বছর অপেক্ষা করলেন তারা। কারণ? ‘দীর্ঘদিন ধরেই তো বাংলাদেশে সঙ্গীতের অবস্থা বিশেষ করে ব্যান্ডসঙ্গীতের অবস্থা খুব ছড়ানো-ছিটানো। হয়ত অচিরেই আমরা আর নতুন নতুন সিডি দেখতেই পাব না। আমাদের তো মিশ্র এ্যালবাম ছাড়া একক কোন এ্যালবাম নেই। তাই ভাবলাম সিডিটা বাংলাদেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আগেই নিজেদের একবার সিডিতে মুড়ে নিয়ে আসি না শ্রোতাদের সামনে! আগামীতে হয়ত মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিও পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক হয়ে যাবে। আমরাও সেই পথ ধরেই এগোবো। কিন্তু আমাদের শ্রোতাদের হাতে বিজয় ব্যান্ডের নিজস্ব কোন সিডি থাকবে না, তা কী হয়!’ সিডি থাকছে না আর, ডিভাইসটাই হয়ত উঠে যাচ্ছে- ব্যাপারটা উদ্বেগের নাকি আশা জাগানিয়া, ভিন্ন ভিন্ন মত থাকতেই পারে এ নিয়ে। বিজয় মামুন বললেন, ‘সবকিছুরই তো পজিটিভ-নেগেটিভ দুটো দিকই থাকে। একসময় ক্যাসেট (ফিতা) ছিল, তার আগে রেকর্ড (এলপি রেকর্ড) ছিল, এখন সিডি আছে, আগামীতে হয়ত নতুন আরেকটা ডিভাইস আসবে। প্রযুক্তির কাজই তো এগিয়ে যাওয়া। আমাদেরকে তো প্রযুক্তির পথ ধরেই হাঁটতে হবে, নাকি? কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে- আস্তে আস্তে এত সহজেই যে সিডি বাজারটা নষ্ট হয়ে যাবে, বিলুপ্ত হয়ে যাবে; তা আমরা ভাবতে পারিনি। এটা খুবই দুঃখজনক। ইন্টারনেটের ব্যাপকতা বাড়ছে। তবুও কেন যেন আমরা এলোমেলো হয়ে যাচ্ছি। আমরা শিল্পীরা বুঝতে পারছি না সঠিক পথ কোন্টা। তবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে নিজস্ব নিয়মেই।’ ‘... এবং আমরা’ এ্যালবামে কোন গতানুগতিক টাইটেল ট্রাক নেই। এ্যালবামটির নামকরণে ভিন্ন নীতি অনুসরণ করা হয়েছে। তবে হ্যাঁ, শীর্ষ গান তো থাকতেই হবে! ‘আমি ভাবতেই পারি না, এই ট্রাফিক জ্যামের ভিড়ে তুমি আজ নেই। আমি ভাবতেই পারি না, এই পাথুরে দেয়াল ঘেঁষে তুমি আজ নেই। আর কোনদিন এই শহরে ফিরব না, আর কোনদিন এই আদরে পুড়ব না।’ এমনই কথার শীর্ষ গানটি লিখেছেন- মাহবুবুর রহমান সজীব। শিরোনাম : এই শহরে। বাকি গানগুলো লিখেছেন- ইয়ারুজ্জামান শুভ, কাজী বিভাস, সঞ্জয়, জুয়েল, হানিফ মজুমদার ও বিজয় মামুন নিজেই। গানগুলোর ধরন মেলোরক, তবে খুব সাবলীল। ‘আমরা আসলে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই গানগুলো করেছি, যাতে মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে।’ বললেন ব্যান্ড বিজয়ের ভোকাল। আশপাশে প্রচুর মানুষ। এমন শীতের মধ্যরাতেও সরাসরি গান শোনার জন্য মানুষের এত ভিড়! দূরের কোথাও তখনও কারও কারও হেডফোনে বেজেই চলছে, ‘আর কোনদিন এই শহরে ফিরব না...’
×