ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মানবপাচার প্রতিরোধ করতে গিয়ে আসামি

কক্সবাজারে ফের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৭ জানুয়ারি ২০১৬

কক্সবাজারে ফের দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ সাগরপথে অবৈধভাবে মালয়েশিয়ায় মানবপাচারকারী দালাল চক্রের দৌরাত্ম্য আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। কক্সবাজারে মানবপাচার প্রতিরোধে যারা কাজ করছেন তাদের আসামির তালিকায় আনতে মরিয়া হয়ে উঠছে ওই দালাল চক্র। ইতোপূর্বে রুজু হওয়া বহু মামলা থেকে টাকার জোরে বাদ পড়েছে শীর্ষ দালালদের অনেকে। কতিপয় অসৎ পুলিশকে ব্যবহার করে তাদের নাম বাদ রেখে অনেক মামলার চার্জশীট করিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে তারা। মানবপাচার রোধে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে গিয়ে গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরছাড়া হয়ে পড়ছেন মানবপাচার বিরোধীরা। আয় রোজগার ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যেতে হয়েছে উখিয়া উপজেলা মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল হামিদকে। উখিয়া উপজেলার প্রতিবাদী যুবক আব্দুল হামিদ সরকারী চাকরির পাশাপাশি ব্যবসা করে সংসার চালান। কক্সবাজার এনজিও হেল্পের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম ও হামিদের নেতৃত্বে গত দুই বছরে মানবপাচার বিরোধী অন্তত শ’ খানেক সভা, সমাবেশ হয়েছে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে। তাদের সহযোগিতায় বহু দাললকে চিহ্নিত এবং গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, আব্দুল হামিদ বর্তমানে পুলিশের তালিকায় আসামি, অনেকটা ঘরছাড়া। মিথ্যা মামলার কারণে তিনি হাঁটাচলাও করতে ভয় পাচ্ছেন বলে জানা গেছে। মানবপাচারকারী মহিলা গডফাদার রেজিয়া আক্তার ওরফে রেবি ম্যাডামের বিরুদ্ধে অন্তত ডজনাধিক মামলা রয়েছে কক্সবাজার, চকরিয়া ও উখিয়া থানায়। সেই ‘মাফিয়া ডন’ রেবি ম্যাডামের মিথ্যা মামলায় হামিদকে আসামি করায় সর্বমহলে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় ওঠেছে। আর যাদের বিরুদ্ধে মানবপাচারের বহু অভিযোগ, তারা ঘুরছে প্রকাশ্যে। এদের সঙ্গে খাতির রয়েছে অনেক অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের। যে কারণে শীর্ষ মানবপাচারকারী রেজিয়া আকতার প্রকাশ ‘রেবি ম্যাডামরা’ এখানও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। প্রতিনিয়তই হুমকি ধমকি ও মামলার ভয় দেখিয়ে চলছে মানবপাচার বিরোধী লোকজনকে। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছে সাধারণ মানুষ। মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ ও প্রত্যাহার চেয়ে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করেছে মানবপাচার প্রতিরোধ কমিটি। কক্সবাজার প্রেসক্লাবে এ সভায় লিখিত বক্তব্য পেশ করেন সংগঠনটির সভাপতি ও বেসরকারী সংস্থা ‘হেলপ কক্সবাজারের নির্বাহী পরিচালক আবুল কাশেম। তিনি বলেন, গত বেশ কয়েক বছর ধরে দেশী ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল সমুদ্র পথে মানবপাচার। জেলায় শক্তিশালী মানবপাচারকারী চক্র তাদের করাল থাবায় দরিদ্র অসহায় ও বেকার যুবকদের গ্রাস করেছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় গত বছর সাগরপথে মানবপাচার কাজ থমকে যায়। জেলার দীর্ঘ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা বিশেষ করে টেকনাফ, উখিয়া, কক্সবাজার সদর, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া ও রামু উপজেলার সমুদ্র উপকূল দিয়ে প্রতিনিয়ত হাজার হাজার মানুষ মানবপাচারকারী চক্রের প্রলোভনে পড়ে নিজের অবস্থান পরিবর্তনের জন্য মালয়েশিয়া যাত্রা করে বিপদগামী হয়েছে। মালয়েশিয়া নেয়ার পথে অনেক যুবককে হত্যা করে সাগরে নিক্ষেপও করা হয়েছে।
×