ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

জনকণ্ঠের সঙ্গে সাক্ষাতকারে কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ ইউসুফ ;###;‘বাংলা ক্যাশ’ নামে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করতে যাচ্ছে কৃষি ব্যাংক

‘কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ব্যাংক’ হিসেবে দেখতে চাই

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ৬ জানুয়ারি ২০১৬

‘কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ব্যাংক’ হিসেবে দেখতে চাই

রহিম শেখ ॥ গ্রাম-বাংলার গণমানুষের ব্যাংক বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের নাম ‘কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন ব্যাংক’ হিসেবে দেখতে চান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ ইউসুফ। নামের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তিনি বলেন, শুধু কৃষিঋণ নয়, পল্লী উন্নয়নেও বিশেষ ভূমিকা রাখছে ব্যাংকটি। গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকারের প্রায় প্রকল্পেই অর্থায়ন করছে কৃষি ব্যাংক। জনবল সঙ্কট ও মূলধন ঘাটতি থাকা সত্ত্বেও উন্নয়নমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালন করছে ব্যাংকটি। দেশের কৃষক ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী জীবনমান উন্নয়নে খুব শীঘ্রই ‘বাংলা ক্যাশ’ নামে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালুর কথা জানান ব্যাংকটির এ প্রধান নির্বাহী। এমএ ইউসুফ বলেন, অনুমোদিত ১৫ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলে ১০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়েই কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও ব্যাংকের নিট ক্ষতি প্রায় শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে কৃষি ব্যাংক। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালনগত লোকসান কমেছে, ব্যবসায়িক ঋণ থেকে বেরিয়ে এসে কৃষি এবং এসএমই ঋণ বিতরণ বাড়ানো হয়েছে। ঋণের সুদের হার ২ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রমের আওতায় কৃষক ও উপকারভোগীদের জন্য ১০ টাকায় ৩৭ লাখেরও বেশি সঞ্চয়ী হিসাব চালু করা হয়েছে। স্কুলের ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় আনতে প্রায় ২৬ হাজার স্কুল ব্যাংকিং হিসাব খোলা হয়েছে। এমএ ইউসুফ বলেন, ব্যাংকের বর্তমান সফলতা সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর। কর্মকর্তারা দিকনির্দেশনা মোতাবেক কাজ করেছেন বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, কর্মকর্তাদের কাজের ফলেই নিট ক্ষতি কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। ঋণ আদায় বেড়েছে। জনবল সঙ্কট নিয়েও সাফল্যের বিষয়ে তিনি বলেন, ৫ হাজার জনবল সঙ্কট নিয়ে কাজ করছি। এটা দূর করা গেলে ব্যাংকটি উত্তরোত্তর উন্নতিতে থাকবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বলেন, প্রায় ৬ হাজার ৭শ’ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে কৃষি ব্যাংক। গত বছর ২৫০ কোটি টাকা মূলধন ঘাটতি পূরণ করা হলেও এ বছর তা দেয়া হয়নি। উন্নয়নমুখী ও আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক কার্যক্রম পরিচালনের জন্য মূলধন ঘাটতি পূরণ করা অতীব জরুরী বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এখন কৃষি কাজের ধরন বদলে গেছে। তাই নতুন করে কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আগে লাঙ্গল দিয়ে চাষাবাদ করা হলেও প্রযুক্তির আবির্ভাবে এখন নতুন নতুন কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরি হয়েছে। বর্তমানে কৃষি ব্যাংকের ১০৬টি শাখায় অনলাইন ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে সকল শাখা পুরোপুরি অটোমেশনে নিয়ে আসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন কৃষি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএ ইউসুফ। তিনি বলেন, কৃষি ব্যাংকের এখন মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যারা ব্যাংকিং সেবার আওতায় নন, তাদের ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসা। বিশেষ ইউনিয়ন পর্যায়ে এই সেবার বিস্তৃতি বাড়ানো হবে। ডিজিটালাইজেশনের ক্ষেত্রে সরকারের সাফল্য তুলে প্রশংসা করেন তিনি। এছাড়া দেশের ১১১টি ছিটমহলে নতুন বাংলাদেশীদের ব্যাংকিং সেবার সঙ্গে যুক্ত করে সহজ শর্তে এবং হয়রানিমুক্তভাবে কৃষি ঋণ বিতরণ করা হবে বলে তিনি জানান। এ জন্য সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাও কামনা করেন তিনি। কৃষি ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ব্যাংকের ইতিহাসে এবারই প্রথম স্থিতিপত্র প্রদান করতে পেরেছে। গত ২৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংকে এই স্থিতিপত্র পাঠানো হয়, যদিও গত অক্টোবরেই এই রিপোর্ট অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠায় কৃষি ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানো স্থিতিপত্র অনুযায়ী দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ব্যাংকের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট ক্ষতি কমেছে ২ হাজার ৭৭৬ কোটি টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে নিট ক্ষতি ছিল ২ হাজার ৯৯১ দশমিক ০৫ কোটি। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এটা দাঁড়িয়েছে মাত্র ২১৫ কোটি টাকায়। একই সঙ্গে কমেছে ব্যাংকটির পরিচালনাগত ক্ষতিও। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের তুলনায় ব্যাংকের পরিচালনাগত ক্ষতি কমেছে প্রায় ৫০ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের ক্রমবর্ধমান ক্ষতির ধারাকে পাল্টে দিয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ক্ষতি ছিল ৪৯৬ দশমিক ৭৩ কোটি টাকা, যা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে কমে দাঁড়িয়েছে ৪৪৭ দশমিক ৮৩ কোটি টাকা। ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পূর্বের ব্যবসায়িক ঋণ থেকে বেরিয়ে ব্যাংকটি বর্তমানে কৃষি এবং এসএমই ঋণে জোর দিয়েছে। চলমান অর্থবছরে (২০১৫-১৬) কৃষি ও এসএমই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
×