ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনের জের

গ্রেফতার আতঙ্কে শেরপুরে দমদমা-কালিগঞ্জ পুরুষশূন্য

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ৪ জানুয়ারি ২০১৬

গ্রেফতার আতঙ্কে শেরপুরে  দমদমা-কালিগঞ্জ পুরুষশূন্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, শেরপুর, ৩ জানুয়ারি ॥ প্রতিপক্ষের হামলা আর পুলিশী ধরপাকড় আতঙ্কে শেরপুর শহরের দমদমা কালিগঞ্জ এলাকা এখন নীরব-নিথর। গত ৫ দিন ধরে ওই এলাকাটি পুরুষশূন্য রয়েছে। মহিলারা বাসা-বাড়িতে থাকলেও সন্ধ্যার পরই এলাকায় নেমে আসছে ভুতুড়ে পরিবেশ। কখন পুলিশ আসে এমন আতঙ্ক পেয়ে বসেছে খোদ এলাকাবাসীকে। সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, ৩০ ডিসেম্বর সকাল থেকে শেরপুর পৌরসভার নির্বাচনে দমদমা কালিগঞ্জ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে সুষ্ঠু ভোট হলেও স্থানীয় কাউন্সিলর প্রার্থী আশরাফুজ্জামানের পাঞ্জাবি মার্কার বিজয় ঠেকাতে বিকেল ২টার পর হঠাৎ করেই বেড়ে যায় পার্শ্ববর্তী মীরগঞ্জ এলাকার এক পুরুষ ও এক মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীর লোকজনদের বিশেষ তৎপরতা। ওই অবস্থায় জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার গাড়ি কালিগঞ্জ কেন্দ্রে পৌঁছার পরও দু’এলাকার লোকজনদের মধ্যে সৃষ্ট বাগ্বিত-া একপর্যায়ে ধাওয়া পাল্টাধাওয়ায় পরিণত হয়। ফলে কিছু ইটপাটকেল গিয়ে গড়ায় প্রশাসনের দুই কর্তার গাড়িতেও। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজন পিছু হটলেও তাদের চেয়েও ক্ষিপ্ত হয়ে কেন্দ্রে উপস্থিত ভোটারসহ নিরীহ এলাকাবাসীর ওপর হামলে পড়ে পুলিশের বিশেষ দল। শুরু হয়ে যায় বিভীষিকাময় পরিস্থিতি। তাদের হামলা থেকে রক্ষা পায়নি দু’মাসের শিশুসন্তান কোলে নিরীহ গৃহবধূ আমেনা বেগম (২৫), কলেজছাত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস স্বর্ণা, প্রবীণ আওয়ামী লীগ কর্মী হাতেম আলী (৭০), আব্দুল আজিজ (৫০), বাদশা মিয়া (৬০), জহুরুল হক (৩০), আনোয়ার হোসেন (৪০) সহ অন্তত ১৫/২০ জন এলাকাবাসী। একই সময়ে কেন্দ্রের চারপাশের প্রায় ১০/১২টি বাড়িঘর ভাংচুর করা হয়। আর ওই অবস্থায় নির্ধারিত সময়ের দু’ঘণ্টা পূর্বেই ভোটারশূন্য হয়ে পড়ে কেন্দ্র। আর বন্ধ হয়ে যায় ভোটগ্রহণ। অন্যদিকে উদ্দেশ্য হাসিল হয় প্রতিপক্ষের। এখানেই শেষ নয়, পরদিন বৃহস্পতিবার দুপুরে মোটরসাইকেল শোডাউন থেকে প্রেসক্লাব সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার ও তার চাচাত ভাই কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ আশরাফুজ্জামানের নাম উচ্চারণ করে প্রকাশ্য হুমকি এবং রফিকুল ইসলাম আধারকে খোঁজাখুঁজি করে বাসায় না পেয়ে তার স্ত্রীকে পিস্তল ঠেকিয়ে শিশুপুত্রকে হত্যার হুমকিও দেয় তারা। এদিকে প্রতিপক্ষের হামলা আর পুলিশী নির্যাতনের ক্ষত নিয়ে এলাকায় যখন চলছিল কাতরতা, ঠিক তখন উল্টো এলাকাবাসীর বিরুদ্ধেই পুলিশ এ্যাসল্টের মামলায় স্থানীয়রা হতবাক। ডিবি পুলিশের এসআই বাদী হয়ে কালিগঞ্জ মহল্লার একক কাউন্সিলর প্রার্থী মোঃ আশরাফুজ্জামানসহ ১৩ জনকে স্ব-নামে এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৫০/৬০ জনকে আসামি করে শুক্রবার সদর থানায় মামলা দায়ের করায় এলাকাটিই এখন পুরুষশূন্য। তবে এখনও কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, পুলিশের মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে ধানের শীষে সিল মারার প্রস্তুতির কথা বলা হলেও বাস্তবতা ভিন্ন। কারণ ওই মামলার মূল আসামি মোঃ আশরাফুজ্জামান ছিলেন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং তিনিসহ অধিকাংশই আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এছাড়া কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার সময় প্রার্থী আশরাফ ও মামলার এক আসামি মইনুল হোসেন প্লাবন (এজেন্ট) পার্শ্ববর্তী মোবারকপুর কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। সূত্র আরও জানায়, আতঙ্কিত পরিস্থিতির কারণে শুক্রবার জুম্মার নামাজে এলাকার ৩টি মসজিদে মুসল্লির উপস্থিতি ছিল নগণ্য এবং শনিবার এলাকার প্রায় ৬শ’ শিক্ষার্থীর বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এমএ পাবলিক স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ ও কৃতী শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানও বাতিল করতে হয়েছে। শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মাঝেও ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক।
×