ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায় না হওয়ায় সংসদীয় কমিটিতে অসন্তোষ

সিটি কর্পোরেশনের কর অনলাইনে নেয়ার সুপারিশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২ জানুয়ারি ২০১৬

সিটি কর্পোরেশনের কর অনলাইনে নেয়ার সুপারিশ

নাজনীন আখতার ॥ সিটি কর্পোরেশনের কর আদায়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে অনলাইনে কর নেয়ার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। কমিটির মতে, নগরবাসী যেন ঘরে বসেই অন লাইনে তাদের বিল পরিশোধ করতে পারে সে ব্যবস্থা নেয়া জরুরী। সিটি কর্পোরেশনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মন্ত্রণালয় থেকে যতই বরাদ্দ দেয়া হোক না কেন জনগণের প্রাপ্য নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত হবে না এবং লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায়ও হবে না বলে মনে করছে সংসদীয় কমিটি। পাশাপাশি সিটি কর্পোরেশনগুলোর বরাদ্দ বৈষম্য কমিয়ে আনা এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় উন্নয়নবঞ্চিত পৌরসভা ও উপজেলায় অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেছে কমিটি। সম্প্রতি জাতীয় সংসদে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব মতামত প্রকাশ করা হয়। বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে দেখা যায়, কর আদায়সহ সিটি কর্পোরেশনের বিভিন্ন কাজে কমিটির সভাপতি থেকে শুরু করে অন্যান্য সদস্যরাও অসন্তোষ প্রকাশ করেন। কমিটির সভাপতি আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায় না হওয়ার পেছনে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতি, অদক্ষতা ও দুর্নীতিকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, কর্পোরেশনের কাজের দায়িত্বে অবহেলা ও গাফিলতি করেছেন এমন অদক্ষ ও দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা নিতে হবে। কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায় না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কর ধার্য্য ও আদায় দুটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থতা রয়েছে। প্রতিবছরই সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং কর বকেয়া থাকছে, যা পরবর্তী বছরের বাজেটে আসছে না। কর্পোরেশনের কর ফাঁকি রোধে সব সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে একই আইডি নম্বর চালুর করা উচিত। তিনি বিগত ১০ বছরে কী পরিমাণ হোল্ডিং কর বকেয়া আছে তার বিস্তারিত তথ্য জানতে চান। পাশাপাশি দায়িত্বে অবহেলার কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কেও জানতে চান। সে সময় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বি এম এনামুল হক জানান, কর্পোরেশনের আয়ের খাতগুলোর মধ্যে কোন কোনটিতে মামলা থাকায় রাজস্ব আদায় কম হয়েছে। তবে তার বক্তব্যের বিরোধিতা করে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক বলেন, মামলা থাকার কারণে রাজস্ব আদায় কম হয়েছে এ তথ্য সঠিক নয়। হোল্ডিং কর আদায়ে তাদের যথেষ্ট গাফিলতি হয়েছে। তদন্তেও তা প্রমাণিত হয়েছে। লক্ষ্য অনুযায়ী কর আদায় করতে তারা সফল হয়নি। কারণ কর ধার্য্যরে লক্ষ্য সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই বলেই এ ধরনের সমস্যা হয়েছে। এটা দায়িত্বে অবহেলার শামিল। তিনি আরও বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মামলা নিষ্পত্তিতে নিয়োজিত আইনজীবীরা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেন না। আইনজীবী প্যানেল পরিবর্তন করা দরকার। বৈঠকে কর্পোরেশনগুলোর সাবির্ক কার্যক্রম সম্পর্কে উত্থাপিত সব অভিযোগের ব্যাপারে আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করে তদন্তের মাধ্যমে এর সুরাহা করা হবে বলে তিনি জানান। কমিটির সভাপতি অনলাইনে কর আদায়ের ওপর জোর দিয়ে বলেন, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের কর আদায়ের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অনলাইনে কর আদায়ের ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি বলেন, অনলাইন পদ্ধতিতে কর আদায় এবং কম্পিউটারের সাহায্যে ছাপা রশিদে কর আদায় এক নয়। মানুষ যাতে ঘরে বসে অনলাইনে তাদের বিল পরিশোধ করতে পারে সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে হবে। কমিটির সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, সিটি কর্পোরেশনের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির সিন্ডিকেট ভাঙতে না পারলে মন্ত্রণালয় থেকে যতই বরাদ্দ দেয়া হোক না কেন জনগণ এর কোন সুবিধা পাবে না। তিনি কর্পোরেশন নির্মিত রাস্তার কাজের মান বৃদ্ধির ওপর জোর দেন। এছাড়া তিনি ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে অতিরিক্ত বরাদ্দ বিষয়ে জানতে চান। জবাবে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব জানান, সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী থেকে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বরাদ্দ বৈষম্যের বিষয়টি তুলে ধরে কমিটির সভাপতি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দ বৈষম্যের কারণে উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে যেসব উপজেলা ও পৌরসভা উন্নয়নবঞ্চিত ছিল সেগুলোতে অতিরিক্ত বরাদ্দ দেয়ার প্রস্তাব করেন।
×