ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

অপূর্ব শর্মা

পনেরোতে প্রাপ্তি অনেক

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১ জানুয়ারি ২০১৬

পনেরোতে প্রাপ্তি অনেক

অমর্ত্যসেনের মতে- ‘বাংলাদেশের কাছে ভারতের অনেক কিছু শেখার রয়েছে।’ এর মূল কারণ বাংলাদেশের ধারাবাহিক অগ্রগতি। প্রতিকূলতা এবং প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের অগ্রগতি এই নোবেলজয়ীর কাছে অনুসরণযোগ্য। কেনই বা নয়, একের পর এক সাফল্য অর্জন করে আমরা দেখিয়ে দিচ্ছি-বাঙালীরা সত্যিকার অর্থেই বীরের জাতি। এসব অর্জন কারও দয়া বা দাক্ষিণ্যে নয়; আমাদের কষ্টে অর্জিত। আর এই অর্জনের খাতায় ২০১৫ সালে সংযোজিত হয়েছে এমন সব বিষয় যা জাতি হিসেবে আমাদের করেছে গৌরবান্বিত, আমরা হয়েছি বিশ্বময় প্রশংসিত। অগ্রগতির জন্য মিলেছে স্বীকৃতিও। তাই ফেলে আসা বছরটিকে অনায়াসেই সাফল্য অর্জনের বছর বলা যায়। আর এই অর্জন অব্যাহত ছিল জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত, পুরো বছরজুড়ে। গত বছরে আমাদের অগ্রযাত্রার খাতায় সংযোজিত সবচেয়ে বড় খবরটি ছিল- মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি। বিশ্বব্যাংক গত ১ জুলাই নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত করে বাংলাদেশকে। স্বাধীনতার পর থেকে নিম্ন আয়ের দেশের তালিকায় ছিল বাংলাদেশ। স্বভাবতভাবেই এই অগ্রসরতা আমাদের সাফল্যের ভিতকে করেছে শক্তিশালী, মজবুত। আর খবরটি আন্দোলিত করেছে পুরো জাতিকে। এগিয়ে যাওয়ার আরও একটি উদ্যোগের সূচনা হয়েছে পনেরোতে। শুরু হয়েছে বহু প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর কাজ। এর মধ্যদিয়ে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন শুরু হলো। নিজেদের অর্থে বাস্তবায়নাধীন দেশের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্পে ব্যয় হবে প্রায় ২৮ হাজার কোটি টাকা। পদ্মা সেতু প্রকল্পটি শুধু নিজস্ব অর্থায়ন বিবেচনাতেই নয়, বৈশ্বিক বিবেচনাতেও একটি বৃহৎ প্রকল্প। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনীতিতে এবং প্রবৃদ্ধিতে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। শুধু তাই নয় এশিয়া ও এ অঞ্চলের দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক যোগাযোগ, পণ্য পরিবহন, বন্দর সুবিধার পুরোপুরি সদ্ব্যবহারের ক্ষেত্রে এই সেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। যাতে করে খুলে যাবে সম্ভাবনার অনেক দ্বার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ-প্রাপ্তি ছিল গেল বছরের আরও একটি অর্জন। ২৭ সেপ্টেম্বর পরিবেশ বিষয়ে জাতিসংঘের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরস্কার চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে এক অভিজাত হোটেলের বলরুমে তার হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল আশিম স্টাইনার। আর্থিক খাতে যুগান্তকারী অবদানের স্কীকৃতিস্বরূপ বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমানকে ২০১৫ সালের এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের শ্রেষ্ঠ গবর্নর নির্বাচিত করা হয়েছে। পেরুর রাজধানী লিমায় বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বৈঠক শেষে এক সেমিনারে তার নাম ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে আতিউর রহমানের হাতে তুলে দেয়া হয় এ পুরস্কার। ছিটমহলে স্বাধীনতার সূর্যোদয়, বিদায়ী বছরের একটি ঐতিহাসিক ঘটনা। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে ৬৮ বছর পর গত ১ আগস্ট নাগরিকত্ব প্রাপ্তির নতুন জীবন লাভ করে বাংলাদেশ ও ভারতের ১৬২টি ছিটমহলের প্রায় ৫৯ হাজার মানুষ। অবরুদ্ধতা থেকে মুক্তি পায় তারা। এরই মধ্যদিয়ে ৪১ বছর ধরে ঝুলে থাকা ইন্দিরা-মুজিব ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সফল বাস্তবায়ন হয়। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার স্থলসীমান্ত সমস্যা ১৯৪৭ সালে র‌্যাডক্লিফ রোয়েদাদ অনুযায়ী সৃষ্টি হয়েছিল। সে সময় বাংলাদেশের ভেতরে ভারতের ১১১টি এবং ভারতের ভেতরে বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহল রয়ে যায়। আর ছিটমহলের অধিবাসীরা হয়ে পড়েন অবরুদ্ধ। দীর্ঘ চার দশকের টানাপড়েন শেষে ছিটমহলবাসীর স্বাধীনতা লাভ জন্ম দিল অনন্য এক অধ্যায়ের। বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি প্রদানের দীর্ঘদিনের দাবিটিও পূরণ হয়েছে বিদায়ী বছরে। প্রথম পর্যায়ে একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনী এবং রাজাকারদের হাতে নির্যাতিত ৪১ বীরাঙ্গনার নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতিত নারীদের ‘বীরাঙ্গনা’ স্বীকৃতি দিয়ে তাদের সম্মান জানান। তাঁর নির্দেশনায় বীরাঙ্গনাদের ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়, যা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের আগ পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর এই প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। এ বিষয়ে আদালতের নির্দেশনাও আসে। এরই অংশ হিসেবে বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল। ২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি জাতীয় সংসদে ওই প্রস্তাব পাস হয়। স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশের পথেও গত বছর অগ্রসর হয়েছে বাংলাদেশ। গত ১১ নবেম্বর বাংলাদেশের প্রথম কৃত্রিম স্যাটেলাইট (উপগ্রহ) ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) রাশিয়ার উপগ্রহ কোম্পানি ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনার আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে এই স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরিকল্পনা রয়েছে। মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় ২ কোটি ৮০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এ স্লট। এখানেই উড়বে দেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১। চুক্তি অনুসারে প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের জন্য অরবিটাল স্লট কেনা হচ্ছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দ-প্রাপ্ত দুই যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে পনেরোতে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদের মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। ২২ নবেম্বর তাদের ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়। এ দুজনের দ- কার্যরের মধ্যদিয়ে কলঙ্কমুক্তির পথে আরও একধাপ এগিয়ে গেল বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলের রায়ে তাঁর মৃত্যুদ-াদেশ বহাল থাকে। অন্যদিকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে তৎকালীন আলবদর বাহিনীর নেতা মুজাহিদকে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২। এ রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন মুজাহিদ। চলতি বছরের ১৬ জুন ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির আদেশ বহাল রেখে রায় দেন আপিল বিভাগ। ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারপারসন ফজলে হাসান আবেদ খাদ্য ও কৃষিক্ষেত্রে অবদান রাখায় নোবেল প্রাইজ বলে খ্যাত বিশ্ব খাদ্য পুরস্কার পেয়েছেন। প্রতিবছর বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে ওয়ার্ল্ড ফুড প্রাইজ ফাউন্ডেশন এই পুরস্কার দিয়ে থাকে। ক্ষুধাপীড়িত জনগোষ্ঠীর জন্য খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও বণ্টনে অনন্য অবদান রাখার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৫ সালের জন্য ফজলে হাসান আবেদকে এই পুরস্কার প্রদান করা হয়। এর আর্থিক মূল্য হচ্ছে আড়াই লাখ মার্কিন ডলার। গত বছর ফুটবলে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। গত ২০ ডিসেম্বর এএফসি অনূর্ধ্ব ১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। বিভিন্ন কারণে এই শিরোপা জয় বাংলাদেশ বালিকা ফুটবল দলের জন্য দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এবং স্মরণীয়। কারণ এটি মেয়েদের ফুটবলের যে কোন পর্যায়ের টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের প্রথম শিরোপা। নেপালের মাঠে তাদের দলকে হারিয়ে ইতিহাসকে আরও সমৃদ্ধ করেছে বাংলাদেশের নারীরা। শুধু খেলাধুলায়ই নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশের নারীরা। গেল বছর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তুর্ভুক্ত হয়েছেন নারী সৈনিক। ২৯ জানুয়ারি টাঙ্গাইলের ঘাটাইলে শহীদ শাহেদ সালাহউদ্দিন সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর আর্মি মেডিক্যাল কোর সেন্টার এ্যান্ড স্কুলের শহীদ বীর-উত্তম সিপাহী নুরুল ইসলাম প্যারেড গ্রাউন্ডে মেডিক্যাল কোরের প্রথম মহিলা রিক্রুট ব্যাচ-৭১-এর প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ ও শপথগ্রহণের মাধ্যমে ৮৭৯ জন নারী সৈনিক হিসেবে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হন। অন্যদিকে, ২৮ অক্টোবর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সফলভাবে ফ্লাইট পরিচালনা করেন দু’জন নারী শিক্ষানবিস পাইলট। তারা হলেন, ক্যাপ্টেন নাজিয়া নুসরাত হোসেন ও ক্যাপ্টেন শাহরিনা বিনতে আনোয়ার। এ দুই নারী বৈমানিক ঢাকার তেজগাঁওয়ে আর্মি এভিয়েশন গ্রুপে সেনা ১৫২ এ্যারোপেক প্রশিক্ষণ বিমান নিয়ে ওড়েন। তারা একক ও দ্বৈত ফ্লাইট পরিচালনা করেন। দেশে নারী বৈমানিক থাকলেও সেনাবাহিনীতে এ দু’জনই প্রথম ফ্লাইট পরিচালনা করে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিলেন। সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে এতদিন ধরে কাজ করে আসছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ এর পুরুষ জোয়ানরা। কিন্তু গত ১ নবেম্বর থেকে সীমান্ত প্রহরায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে নারীদের। এর মাধ্যমে দেশে প্রথমবারের মতো বিজিবিতে নারী সৈনিক পদায়ন করা হলো। অস্ট্রেলিয়ার (ওশেনিয়া) সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কারস্তনেজ পিরামিড জয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশের প্রথম পর্বতারোহী হিসেবে সাত মহাদেশের সাত সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। গত ১৮ নবেম্বর সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া অঞ্চল দিয়ে কারস্তনেজ পিরামিড জয় করেন তিনি। বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট কর্মসূচীর অংশ হিসেবে ২০১১ সালে ওয়াসফিয়া সেভেন সামিট অভিযান শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেন। এর আগে তিনি আফ্রিকার মাউন্ট কিলিমানজারো, এশিয়ার মাউন্ট এভারেস্ট, এ্যান্টার্কটিকার মাউন্ট ভিনসন, ইউরোপের এলব্রুস, উত্তর আমেরিকার মাউন্ট ডেনালি, দক্ষিণ আমেরিকার এ্যাকোংকাগুয়া পর্বতশৃঙ্গ জয় করেন। প্রবাসেও দ্যূতি ছড়িয়েছেন বাঙালীরা। তিন বঙ্গকণ্যার ব্রিটেন জয় এরমধ্যে অন্যতম। ব্রিটিশ পার্লামেন্ট নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত তিন সাহসী কন্যা রুশনারা আলী, টিউলিপ ও রূপা আশা হক। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো ব্রিটেনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, শেখ রেহানার মেয়ে টিউলিপ। রুশনারা আলী পুনর্নির্বাচিত হয়েছেন। আর লেবারদের হারানো আসন পুনরুদ্ধার করেছেন ড. রূপা হক। তাদের এই জয়যাত্রা প্রবাসী বাঙালীদের করেছে উজ্জীবিত। একবার অস্কার জয় যেখানে স্বপ্নের ব্যাপার সেখানে দ্বিতীয়বারের মতো অস্কার লাভ করেছেন বাংলাদেশের ডিজিটাল শিল্পী নাফিস বিন যাফর। ডিজিটাল ডিস্ট্রাকশন ইফেক্ট তৈরিতে অসামান্য অবদান রাখায় ‘২০১২’ সিনেমার কারিগরি শাখা থেকে যৌথভাবে ওই পুরস্কার লাভ করেছেন তিনি। গত ৭ ফেব্রুয়ারি নাফিসকে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার বেভারলি হিলসে এ পুরস্কার দেয়া হয়। এর আগে ২০০৭ সালের ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান : এ্যাট ওয়ার্ল্ডস এ্যান্ড’ ছবিতে এ্যানিমেশনের জন্য প্রথম বাঙালী হিসেবে (সত্যজিৎ রায়েরটা ছিল আজীবন সম্মাননা অস্কার) অস্কার জেতেন নাফিস। সেবার সায়েন্টিফিক এ্যান্ড টেকনিক্যাল এ্যাওয়ার্ডস বিভাগে তাঁকে এ পুরস্কার দেয়া হয়েছিল। একাধিকবার অস্কার জয় করে বাঙালীর অত্যাধুনিকতার পথে অগ্রযাত্রা প্রমাণ রাখলেন তিনি। আরও একটি ভাল খবর এসেছে বছরের শেষদিকে। খবরটি আশাজাগানিয়া, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু ৩ মাস বেড়েছে। ২০১৩ সালের জরিপে যেখানে গড় আয়ু ছিল ৭০ বছর ৪ মাস। বর্তমানে ৩ মাস বেড়ে তা দাঁড়িয়েছে ৭০ বছর ৭ মাসে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিসটিকসের প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে। এতসব অর্জন, ইতিবাচক ঘটনার পাশাপাশি অনেক নেতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে বছরজুড়ে। বিশেষ করে ব্লগার, লেখক ও প্রকাশকদের জন্য বছরটি ছিল বিভীষিকাময়। ফেব্রুয়ারি মাসে খুন হন ব্লগার ও বিজ্ঞান মনস্ক লেখক অভিজিৎ রায়। এরপর একে একে ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় এবং বছরের শেষদিকে খুন হন প্রকাশক দীপন। সিলেটের শিশু রাজন হত্যাকা-ের ঘটনা ছিল পনেরো সালের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। আর বছরের শেষদিকে এসে একাধিক বিদেশী নাগরিক হত্যাকা-ের ঘটনা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করে জনমনে। তবে, অনেক হত্যাকা-ের দ্রুত বিচার হওয়ায় ‘নীরবে নিভৃতে কাঁদেনি বিচারের বাণী।’ থামেনি অগ্রযাত্রাও। আর থামবেও না কোনদিন। কারণ বাঙালীরা হারতে জানে না।
×