ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিটন আব্বাস

ঘুরে এলাম কলকাতা

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫

ঘুরে এলাম কলকাতা

চষাখন্ডে গিয়েছি। এবার যেতে হতে চাঁদিপুর সী বিচে। সবাই ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ছুটলাম চাঁদিপুর সী বিচের উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে দেখলাম ভারতের প্রয়াত প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি এপিজে কালাম সাহেব সেই গ্রাম যেখানে তিনি বিজ্ঞান গবেষণাগার খুলে এলাকাটাকে আলোকিত করেছেন। রাস্তার দু’পাশে সবুজ বনানী। কেয়াফুলের চাউমি। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে আমরা দেখতে থাকি দুরন্ত বাসের গতির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই। একসময় চাঁদিপুর বিচে পৌঁছালাম। বাস থেকে নেমে দেখি জল দ্রুত সরে যাচ্ছে। সবাই বিচে নেমে ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ি। এরপর পান্থনিবাসে নাস্তার পালা। লুচি-আলুর দম খেতে খেতে অনেক মজার আড্ডা হলো-কথা হলো। মজনুচাচা আবার লুচিটা একটু বেশিই খায়। কেউ বোধ হয় কম খায়নি। নাস্তা সেরে ডাবল হিটের চা খেয়ে আবার যাত্রা শুরু ফকির মোহন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে। বিপ্লবী বাঘা যতীন মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে আয়োজিত সেমিনারে উপস্থিত থাকতে হবে। উষ্ণ অভ্যর্থনা পেলাম সেখানে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি ও বাঘা যতীন মৃত্যুশতবার্ষিকী উদ্যাপন জাতীয় কমিটির প্রধান সমন্বয়কারী শাহরিয়ার কবিরসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক, মূলপ্রবন্ধ পাঠ করে। অনুষ্ঠানের ফাঁকে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে উত্তরীয় পড়িয়ে দেয়া হয়। অনুষ্ঠান শেষে আমাদের নিয়ে যাওয়া হলো হোটেল নসিতে। সেখানে লাঞ্চ শেষ করে এবার কলকাতার উদ্দেশে রওনা। ঠিক দুটোর পরে আমরা সবাই ছুটে চললাম কলকাতার দিকে। আসতে আসতে পশ্চিম মেদেনিপুরের একটা টং দোকানের চা পান করছিলেন শাহরিয়ার কবির, কাজী মুকুল ও কলকাতা থেকে আসা প্রফেসর বিমল শংকর। আমরাও ট্রাভেল বাস থেকে নেমে তাঁদের সঙ্গে চা-চক্রে যোগ দেই। সেখানেও ফটোশ্যুট যথারীতি। চা-পান শেষে আবার ছুটে চলা। হোটেল অতিথি ইনে যখন ফিরে আসি তখন রাত সাড়ে দশটা। সবাই বেশ ক্লান্ত। তাই ডিনার সেরে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে যে যার রুমে চলে যাই। পরের দিন প্রোগ্রাম সিডিউলে বিকেল ৪টায় কলকাতা প্রেসক্লাবে প্রেস কনফারেন্স। সকাল সাড়ে নয়টায় আমরা হোটেল থেকে নাস্তা সেরে জিপে চড়ে প্রথমে গেলাম জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে। এটি এখন বিশ্বভারতী অর্থাৎ রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়। ঘণ্টাখানেকের বেশি সময় সেখানে কাটিয়ে বিচিত্রা ভবন, রথীন্দ্রনাথ মঞ্চ, অন্দর মহল, বিভিন্ন সংগ্রহশালা প্রদর্শন করে গেলাম বিখ্যাত ঐতিহাসিক গিরিশ চন্দ্র এ্যান্ড দে এ্যান্ড নকুর চন্দ্র নন্দীর মিষ্টির দোকানে। মিষ্টির দোকানটি ১৮৪৪ সালে স্থাপিত। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘প্রথম আলো’তে এই মিষ্টির সুখ্যাতির কথা উল্লেখ আছে। এখান থেকে আমরা মিষ্টি কিনে গেলাম বিপ্লবী অরবিন্দ ভবনে। এই ভবন থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস আমাদের জাতীয় চার নেতা যুদ্ধ পরিচালনা করতেন। অদ্ভুত শিহরণ জাগছিল মনে। সেখান থেকে গেলাম ইন্ডিয়ান মিউজিয়ামে। এটি ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় মিউজিয়াম। দেড় লাখ বছরের ফসিল এবং চার শ’ বছরের মমি দেখলাম। প্রায় ঘন্টাখানেক মিউজিয়াম ঘুরে দেখলাম। আমাদের জন্য মারকুয়েস স্ট্রিটে ঢাকাইয়্যা হোটেল কস্তুরিতে অপেক্ষা করছিলেন শাহরিয়ার কবির ও কাজী মুকুল। আমরা সেখানে গিয়ে বসে গেলাম খাবার টেবিলে। বিশাল সাইজ পাবদা মাছ সন্দেহপ্রবণ মন নিয়ে খেলাম। কেউ কেউ একে বোয়ালের বাচ্চা বলছিল। কলার মোচা ভরতা, সবজি, লাল চিংড়ি, করলা, শাক-ভাজি দিয়ে সবাই পরম তৃপ্তির সঙ্গে উদরপূর্তি করল। তারপর গেলাম ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল পার্কে। কলকাতায় এলে এটা না দেখলে কলকাতার পরিচয় পাওয়া যাবে না। পার্কে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে কলকাতা প্রেস ক্লাবের উদ্দেশ্যে যাত্রা করি। কলকাতা প্রেসক্লাবে যেতে যেতে ধর্মতলা বাসস্ট্যান্ড পেলাম। ঠিক ৪টায় শুরু হলো বাঘা যতীন মৃত্যুশতবার্ষিকীর আলোচনা অনুষ্ঠান। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ ও কমিটি ফর আপহোল্ডিং সেকুলারিজম, ভারত এর যৌথ উদ্যোগে বিপ্লবী বাঘা যতীন মৃত্যুশতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠান শুরু হলো অধ্যাপক সৈয়দ তানভীর নাসরীনের বাঙময় সঞ্চালনার মধ্যদিয়ে। সভাপতিত্ব করলেন বিশিষ্ট লেখক গীতেশ শর্মা। ভারতে অবস্থিত বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার মইনুল কবির শুভেচ্ছা বক্তব্য দিলেন। বক্তব্য দিলেন সপ্তাহ পত্রিকার সস্পাদক দিলীপ চক্রবর্তী, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মুকুল, উত্তর প্রদেশের ত্রিপুরার রাজমাতা বিভূ রানী দেবী। প্রধান অতিথি ছিলেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিযার কবির। গীতেশ শর্মা প্রজ্ঞা লাবণ্য ছড়িয়ে বক্তৃতা দিলেন। গম্ভীর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে চলল প্রশ্নোত্তর পর্ব। ঠিক ৬টায় শেষ আলোচনা। প্রেসক্লাব থেকে আমরা গেলাম নিউমার্কেটে। কলকাতায় এসেছি, কিছু কেনাকাটা করব না তাতো হয় না। কেনাকাটা করে ফিরে আসি আবার প্রেসক্লাবে। অনেকে তখনও নিউমার্কেটে। প্রেসক্লাবের সামনে কলকাতা রেফারিজ এ্যাসোসিয়েশনের স্টোরে বসে চা খেতে শুরু করি। কলকাতার চা এত গরম যে অন্তর্ময়ী জ্বালাও হার মানিয়ে দেয়। প্রথম যেদিন বর্ডার ক্রস করি সেখানে চা খেয়ে জিভ পুড়িয়ে ফ্রাই করে রেখেছি। সাহস হয় না, তবু খাওয়া। অন্যদের জন্য দেড়ঘন্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছিল। সবাই যখন নিউমার্কেট থেকে ফিরল, দেখলাম সবার হাতে ব্যাগ ভরতি। যাই হোক, আবার গাড়িতে চাপলাম আমরা। যেতে যেতে দেখলাম টিপু সুলতান মসজিদ। মানিকতলায় এসে মজনু চাচা রুমাল রুটি খাবেন বলে বায়না ধরেন। অর্নব নাগ তাকে সঙ্গে নিয়ে গেল পনেরো মিনিটের কথা বলে। ফিরল ঠিক পৌনে এক ঘণ্টা পর। হোটেল অতিথি ইনে আসার পর হক সাহেব জ্বরে হঠাৎ আক্রান্ত হলেন। ভীষণ মন খারাপ হয়ে গেল। পরের দিন সকাল সাতটায় আমরা বেনাপোল বর্ডারের উদ্দেশ্যে গাড়িতে চেপে বসি। বারাসাতে এসে বামনগাছির হোটেল অর্কিডে গাড়ি থেমে যায়। সেখানে নাস্তা সেরে বর্ডারে যখন পৌঁছাই তখন সাড়ে দশটার মতো বাজে। ইমিগ্রেশনে ঢুকে পড়ি। আমরা ভারতে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বাংলাদেশি প্রতিনিধি দল হিসেবে ছাড় পেয়ে খুব দ্রুত ভারতীয় বর্ডার অতিক্রম করে ঢুকে যাই বাংলাদেশের এমিগ্রেশনে। কিন্তু মন পড়ে থাকে বাঘাযতীনের আতœদান ভুমিতে।
×