ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার সাহিত্যে নোবেল পেলেন সাংবাদিক আলেক্সিভিচ

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ৯ অক্টোবর ২০১৫

এবার সাহিত্যে নোবেল পেলেন  সাংবাদিক আলেক্সিভিচ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ এই প্রথমবারের মতো সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেলেন একজন সাংবাদিক। বেলারুশের সাংবাদিক ও লেখিকা সভেতলানা আলেক্সিভিচ তার ‘এ মন্যুমেন্ট টু সাফারিংস এ্যান্ড কারেজ ইন আওয়ার টাইম’ বইয়ের জন্য এ বছর সাহিত্যে নোবেল জিতে ইতিহাসে নাম লেখালেন। বৃহস্পতিবার সুইডেন সময় দুপুর ১টায় এ ঘোষণা দেয় রয়্যাল সুইডিশ একাডেমির চেয়ারপার্সন সারা ডানিউস। খবর বিবিসি, এএফপি ও গার্ডিয়ান অনলাইনের। সারা ডানিউস সভেতলানার নাম ঘোষণা করে বলেন, এটি এক কথায় একটি চমৎকার খবর। তিনি আরও বলেন, লেখনীর মাধ্যমে সভেতলানা আমাদের সামনে যা তুলে ধরেছেন তা এক কথায় ইতিহাসের অংশ। নোবেল কমিটি তাকে একজন অসাধারণ লেখিকা হিসেবে জানে। নিজের দেশে আলেক্সিভিচ পরিচিত সরকারের একজন সমালোচক হিসেবে। তিনি বলেন, আলেক্সিভিচ তার অনন্যসাধারণ লেখনীশৈলীর মাধ্যমে সতর্কভাবে বাছাই করা কিছু কণ্ঠের যে কোলাজ রচনা করেছেন, তা পুরো একটি যুগ সম্পর্কে আমাদের বোধের জগৎকে নিয়ে গেছে আরও গভীরে। সারা দানিউস বলেন, সভেতলানা আলেক্সিভিচের চল্লিশ বছর কেটেছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও তার পরের সময়ের অসংখ্য মানুষের জীবনকাহিনী শুনে। তবে তার গদ্য কেবল ইতিহাসকে তুলে ধরেনি, ধারণ করেছে মানুষের আবেগের ইতিহাস। প্রায় অর্ধশতক পর একজন সাহিত্যিককে এই পুরস্কার দেয়া হলো, যিনি মূলত ‘নন-ফিকশন’ লেখক। পুরস্কার পাওয়ার খবরে সভেতলানা বলেন, খবরটি আনন্দের। এ সময় পুরস্কারটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেন তিনি। সভেতলানা আরও বলেন, এটি আমার পুরস্কার নয়। আমার দেশের সংস্কৃতির জন্য এটি একটি বড় অর্জন। ৬৭ বছর বয়সী সভেতলানার জন্ম ইউক্রেনে। কিন্তু জন্মের পর বাবা তাকে নিয়ে বেলারুশে চলে আসেন। মিনস্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে শিক্ষাজীবন শেষ করার পর প্রথমে পোলান্ড এবং পরে মিনস্কে ফিরে এসে সাংবাদিকতা জীবন শুরু করেন তিনি। পেশা জীবনের শুরুতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেয়া মহিলাদের সাক্ষাতকার নেয়া শুরু করেন। এই সাক্ষাতকারের ভিত্তিতে ‘ভয়েসেস অব ইউটোপিয়া’ নামে একটি বই লেখেন। বইটি তাকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করে তোলে। এরপর ভয়াবহ চেরনোবিল দুর্ঘটনা নিয়ে লেখেন ‘ভয়েসেস অব চেরনোবিল’। আবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আফগানিস্তান অভিযান নিয়েও লিখেছেন সভেতলানা। পেশাজীবনে তিনি কয়েক হাজার নারী, পুরুষ এবং শিশুর সাক্ষাতকার নিয়েছেন। তার লেখা বইগুলো বহু ভাষায় অনূদিত হয়েছে। কিন্তু তার বহু লেখায় সোভিয়েত আমলের ভয়াবহতার চিত্র উঠে আসায় এগুলো রাজনৈতিক রোষানলের শিকার হয়েছে। ফলে জীবনে বহুবার দেশ ছাড়তে হয়েছে সভেতলানাকে। তার লেখায় রাশিয়ার সমালোচনা উঠে আসায় এটি বেলারুশে প্রকাশিত হতে দেয়া হয়নি। এ সময় দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট আলেক্সান্ডার লুকাশেঙ্কোর রোষানলে পড়তে হয় তাকে। তার ওপর আরোপ করা হয় সেন্সরশিপ। সভেতলানা হলেন চতুর্দশ নারী, যিনি সাহিত্যে নোবেল পেলেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে পুরস্কার বাবদ তুলে দেয়া হবে ৮০ লাখ ক্রোনার। গত বছর সাহিত্যে নোবেল পান ফরাসী ঔপন্যাসিক প্যাত্রিক মোদিয়ানো, যার গল্পেরা গড়ে উঠেছে মানব মনের স্মৃতি-বিস্মৃতির খেলা, আত্মপরিচয়ের সঙ্কট আর প্যারিসে নাৎসি দখলদারিত্বের ইতিহাসকে কেন্দ্র করে। সুইডিশ বিজ্ঞানী আলফ্রেড নোবেলের শেষ ইচ্ছা অনুসারে গবেষণা, উদ্ভাবন ও মানবতার কল্যাণে অবদানের জন্য প্রতিবছর চিকিৎসা, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার দেয়া হয়। আজ শুক্রবার শান্তি এবং ১২ অক্টোবর সোমবার অর্থনীতিতে এবারের নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হবে।
×