ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ৭১ টিভির টেপ তলব

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১২ আগস্ট ২০১৫

এবার ৭১ টিভির টেপ তলব

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর আপীল শুনানিতে এক বিচারপতিকে না রাখতে তার পরিবারের পক্ষ থেকে অনুরোধ সংক্রান্ত বিষয়ে ওই বিচারপতির সঙ্গে কথোপকথন প্রচার করায় একাত্তর টেলিভিশনের খবর ও আলোচনা অনুষ্ঠানের ভিডিও এবং সেখানে শোনানো দুই বিচারপতির কথোপথনের অডিও টেপ ১৬ আগস্টের মধ্যে দাখিল করতে বলেছেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ। এই কথোপকথনের বিষয়টি সোমবার আদালতে স্বীকার করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপীল বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ আদেশ দেন। এর আগে সোমবার সন্ধ্যা থেকে একাত্তর টেলিভিশনের খবর ও রাতে ‘৭১ জার্নাল’ নামের ওই আলোচনা অনুষ্ঠানে এই কথোপকথন শোনানো হয়। দৈনিক জনকণ্ঠের সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এম এ খান মাসুদ) এবং নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলা চলার মধ্যেই একাত্তর টেলিভিশনকে এই নির্দেশ দেয়া হলো। পরে ওই অনুষ্ঠান নজরে আসায় মঙ্গলবার আপীল বেঞ্চ এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও সাবেক এ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলামের মতামত শোনে; পরে ভিডিও ও অডিও জমা দিতে বলেন। আদেশের পর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আদালত আমাকে বলেছেন, আমি যেন একাত্তর টেলিভিশন কর্তৃপক্ষকে এই নির্দেশনা জানিয়ে দিই।’ এ বিষয়ে একাত্তর টেলিভিশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল বাবু জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা সাংবাদিক। ঘটনা তুলে ধরাই আমাদের কাজ। ঘটনা সম্পর্কিত সিডি আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে। এখন এটা পাবলিক প্রপার্টি। সেই সংবাদ তুলে ধরা আমাদের দায়িত্ব। বাংলাদেশের সকল মিডিয়াই সেই সংবাদ তুলে ধরেছে। তিনি বলেন, তবে কেন আদালত বিশেষভাবে আমাদের সংবাদ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের সিডি চেয়েছেন তা আমাদের বোধগম্য নয়। তবে আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে আমরা অবশ্যই যথাসময়ে সিডি দাখিল করব। তিনি আরও বলেন, আমরা মনে করি আদালত আমাদের সবচেয়ে ভরসার জায়গা। সাংবাদিকরাও দেশের ইতিহাসে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। আমরা বিশ্বাস করি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই আদালত রায় দেবেন বলে মন্তব্য করেন এই জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক। সোমবার আপীল বিভাগে ৬ বৃহত্তর বেঞ্চে ওই মামলার শুনানিতে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন একটি অডিও রেকর্ডের শ্রুতিলিখন উপস্থাপন করেন, যেটি বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর যুদ্ধাপরাধ মামলা এবং মওদুদ আহমদের বাড়ি নিয়ে মামলার বিষয়ে প্রধান বিচারপতির সঙ্গে অন্য এক বিচারপতির কথোপকথন। শুনানিতে প্রধান বিচারপতি এই কথোপকথনের বিষয়টি স্বীকারও করেন। একাত্তর টেলিভিশন জনকণ্ঠের আদালত অবমাননা মামলা নিয়ে প্রতিবেদনে ওই অডিও টেপ সম্প্রচার করে। সোমবার রাতে তাদের সংবাদবিষয়ক আলোচনা অনুষ্ঠান ‘একাত্তর জার্নাল’-এ ওই টেপের বিষয়ে আলোচনাও হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অডিও টেপটি শোনানো হয়। আলোচনা অনুষ্ঠানের উপস্থাপনা করেন মিথিলা ফারজানা। আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিন এবং সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম এবং টেলিফোনে যোগ দেন জনকণ্ঠের আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন। অনুষ্ঠানে সালাউদ্দিন দোলন বলেন, এ্যাটর্নি জেনারেল বিভিন্ন টেলিভিশনে বলেছেন বেঞ্চ পুনর্গঠন প্রধান বিচারপতির এখতিয়ার, বেঞ্চে কোন্ বিচারপতি থাকবেন কোন্ বিচারপতি থাকবেন না সেটা তিনিই ঠিক করবেন। তিনি বলেন, আমরা রবিবার থেকেই যুক্তি উপস্থাপন করেছি, এ বিষয়ে আমাদেরও কোন দ্বিমত নেই, এটা তারই এখতিয়ার। তিনি যদি মনে করেন কোন একজন বিচারপতিকে বেঞ্চে রাখলে সমস্যা হতে পারে অথবা ওনার কোন যোগ্যতা অথবা ওনার কোন সীমাবদ্ধতা যদি প্রধান বিচারপতি তার জুডিশিয়াল মাইন্ড এ্যাপ্লাই করেন। এ বিষয়ে কোন দ্বিমত নাই। দোলন বলেন, আমরা বলেছি, এই ক্ষমতাটা তিনি কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রয়োগ করতে পারবেন না। তিনি আরও বলেন, যেহেতু বিচারপতিদের কনডাক্ট আছে, ওনারা শপথ নিয়েছেন। এই শপথ এবং কনডাক্টটের কারণে কোন পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে প্রধান বিচারপতি বেঞ্চ গঠন করতে পারবেন না। এটা সাংবিধানিকভাবে বাধা আছে, কনডাক্টে, শপথে বাধা আছে। এ সময় উপস্থাপক মিথিলা ফারজানা আইনজীবী সালাউদ্দিনকে প্রশ্ন করেন, পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন কিনা, সেটা তো প্রমাণ সাপেক্ষ ব্যাপার, তবে কোন পক্ষ কি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে দেখা করতে পারেন কিনা? জবাবে আইনজীবী সালাউদ্দিন দোলন বলেন, না পারেন না। তিনি আরও বলেন, আজকে (সোমবার) আমরা একটা এ্যাপ্লিকেশন দিয়েছিলাম সাক্ষীদের সমন দেয়ার জন্য। শুনানির এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, আমি এ্যাডমিট করি এই কনভারসেশন আমার। সুতরাং আর অন্য কোন এ্যাপ্লিকেশন দেয়ারও প্রয়োজন হয়নি। কোন সাক্ষী কল করার দরকার হয়নি। ওই অনুষ্ঠানে সিনিয়র সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জু বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্টের বিভিন্ন বিষয় উপস্থাপন করেন। তিনি বিচারপতিদের কোড অব কন্ডাক্ট ২০০০-এর ১৪টি এবং কী করলে এই কন্ডাক্টের ধারা লঙ্ঘন হয় তা তুলে ধরেন। বৃহস্পতিবার জনকণ্ঠের আদালত অবমাননার রায়ের পাশাপাশি বিচারপতি নিজের অবস্থানটাও নিশ্চই পরিষ্কার করবেন বলে তিনি মনে করেন। তিনি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের তিন প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠার পর পদত্যাগ করার উদাহরণ দেন। তিনি আরও বলেন, এই ধরনের শপথ ভঙ্গ করার পর ইমপিচমেন্টের চেয়ে পদত্যাগ করাই ভাল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আমেনা মহসিনও সাংবাদিক মঞ্জুরুল ইসলামের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। এছাড়া তিনি প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা রয়েছে বেঞ্চ পুনর্গঠন করার, এ্যাটর্নি জেনারেলের এমন দাবির বিষয়ে বলেন, সব কিছুর পরেও তার একটা কোড অব কন্ডাক্ট আছে। আমাদের চাকরির ক্ষেত্রে কোড অব কন্ডাক্ট রয়েছে। যেটা আমাদের মানতে হয়। এর বাইরে আমরা যেতে পারি না। এই আলোচনা অনুষ্ঠানে দুই আলোচকই প্রধান বিচারপতি শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন বলে যে প্রকাশ্য আদালতে বক্তব্য দিয়েছেন সে বিষয়টিও তুলে ধরেন। গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা/পালাবার পথ কমে গেছে’ শিরোনামে উপসম্পাদকীয় লেখেন নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়। ২৯ জুলাই সাকা চৌধুরীর আপীলেও মৃত্যুদ- বহাল রাখার রায়ের পরপরই জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে তলব করে আদেশ দেন আদালত। আদালতের নির্দেশ অনুয়ায়ী ৩ আগস্ট জনকণ্ঠের সম্পাদক, মুদ্রাকর ও প্রকাশক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ (এম এ খান মাসুদ) এবং নিবন্ধের লেখক নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায় আদালতে উপস্থিত হন এবং তিন মাসের সময়ের আবেদন করেন। পরে আদালত এক সপ্তাহের সময় দেন। পরবর্তীতে গত রবিবার ও গতকাল সোমবার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। শুনানি শেষে আগামী বৃহস্পতিবার আদেশের জন্য দিন ঠিক করেন সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ।
×